মহড়া: কোচ দ্রাবিড়ের সঙ্গে উমরান। সোমবার দিল্লিতে। ছবি পিটিআই।
ইরফান পাঠানের হাতেই তৈরি তিনি। অনূর্ধ্ব-২৩ বিভাগের একটি ম্যাচ মাঠের বাইরে থেকে নজর রাখছিলেন প্রাক্তন ভারতীয় অলরাউন্ডার। সেই সময় একটি নতুন ছেলের বলের গতি দেখে বিস্মিত হয়ে যান তিনি। আব্দুল সামাদের কাছে জানতে চান, ছেলেটি কে? সামাদ উত্তর দেন, উমরান মালিক। বাকিটা ইতিহাস। ম্যাচ শেষেই উমরানের সঙ্গে আলাপ হয় ইরফানের। জম্মু ও কাশ্মীরের রঞ্জি ট্রফি দলের সঙ্গে অনুশীলন শুরু হয়ে যায় তরুণ পেসারের।
উমরান এ বারের আইপিএলে অল্পের জন্য দ্রুততম ডেলিভারির পুরস্কারটি পাননি। ফাইনালে তাঁর ১৫৭ কিমি প্রতি ঘণ্টার রেকর্ড ছাপিয়ে যান গুজরাত টাইটান্সের লকি ফার্গুসন (১৫৭.৩)। কিন্তু আইপিএলে ১৪ ম্যাচে ২২ উইকেটের প্রাপ্তি জাতীয় দলের দরজা খুলে দিয়েছে তাঁর সামনে।
রবিবারই জম্মুর গুজ্জর নগরের বাড়ি থেকে রওনা দেন উমরান। দিল্লিতে এ দিন যোগ দেন ভারতীয় দলের সঙ্গে। এ দিনই টি-টোয়েন্টি সিরিজ়ের আগে অনুশীলন শুরু করে ভারতীয় দল। কিন্তু উমরান ভারতীয় দলে যোগ দেওয়ার আগে পেয়ে যান অমূল্য এক পরামর্শ। স্বয়ং ইরফান পাঠান তাঁকে ফোন করে অভিনন্দন জানান ভারতীয় দলে যোগ দেওয়ার আগে। যে গল্প শোনা গেল উমরানের বাবা শেখ রশিদের মুখ থেকে।
ছেলেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত পৌঁছে দিতে গিয়েছিলেন প্রায় ২৫ জন। প্রথম বারের মতো ভারতীয় দলের হয়ে খেলতে যাচ্ছেন উমরান। মা চেয়েছিলেন ব্যাগে কিছু আখরোট ও কাজুবাদাম ভরে দিতে। কিন্তু তরুণ উমরান সে সব নিয়ে যেতে চাননি। বাবা রশিদ বলছিলেন, ‘‘বড্ড লাজুক ছেলে। ওর মা কাজুবাদাম দিতে চেয়েছিল, কিন্তু কিছুতেই নিয়ে গেল না। যাওয়ার আগে বলে গেল, ইরফান পাঠানের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমাকে বলেছে, একদম ভয় না পেতে। আইপিএলে যে মানসিকতা নিয়ে খেলেছে, একেবারে সে রকম মনোভাবই যেন থাকে দেশের জার্সিতে। অনেক বড় দায়িত্ব পালন করতে হবে উমরানকে। আপনারা আশীর্বাদ করুন, ও যেন সফল হয়।’’
দেশের হয়ে খেলতে যাওয়ার আগের দিন তাঁদের বাড়িতে উৎসবের আয়োজন করেন রশিদ। ছেলেকে জানতেও দেননি যে, তাঁদের আত্মীয়স্বজনেরা মিলে বড় একটি উৎসবের আয়োজন করে ফেলেছেন। উমরানও নাকি আয়োজন দেখে অবাক হয়ে যান। ছোটবেলার বন্ধুরাও এসেছিলেন বাড়িতে। রশিদের কথায়, ‘‘হাসিমুখে ছেলেকে দেশের হয়ে খেলতে পাঠিয়েছি। এত বড় দায়িত্ব। চাপ তো থাকবেই। ও এমনিতে খুব একটা লোকজন পছন্দ করে না। কিন্তু কাছের বন্ধুদের পাশে পেয়ে ওর সাহসও কিছুটা বেড়েছে। সকলে ওর শুভকামনা করেছে। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছে ওর জন্য।’’
আইপিএল খেলে বাড়ি ফিরে মাত্র এক দিনের বিশ্রামের পরেই উমরান অনুশীলন শুরু করে দেন। ডেল স্টেনের সঙ্গে ভিডিয়ো কলেও কথা হয় তরুণের। তাঁর বাবার কথায়, ‘‘ওর লাইন ও লেংথে সমস্যা হচ্ছিল। স্টেনের সঙ্গে আলোচনা করে সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়েছে। আইপিএল শেষ হতে পারেনি, ভারতীয় দলে খেলার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল ওর। মাঝে কয়েক দিনের জন্য ঘুরতে গিয়েছিল বন্ধুদের সঙ্গে। ফিরে এসে ফের অনুশীলন। বলছিল, দেশের হয়ে সফল হতে পারলেই বিশ্রাম করব। আইপিএলে যে ভুলগুলো করেছে, দেশের জার্সিতে তার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চায় না ও। ভারতীয় দলের হয়ে খেলার স্বপ্ন ছোটবেলা থেকে। সেই যাত্রায় সফল হওয়ার জন্য ও মরিয়া।’’
সোমবার থেকেই ভারতীয় দলের নেটে বল করা শুরু হয়ে গিয়েছে উমরানের। ৯ জুন তাঁর অভিষেকের অপেক্ষায় রয়েছেন দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy