উইকেটের উল্লাস রাজের। ছবি টুইটার
প্রথমে বল হাতে পাঁচ উইকেট। তারপরে ব্যাট হাতে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ৩৫ রান। শনিবার ভারতীয় ক্রিকেটে যেন জন্ম হল নতুন এক তারকার। তিনি রাজ অঙ্গদ বাওয়া। অতীতে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ উপহার দিয়েছে বহু প্রতিভাবান ক্রিকেটারকে। বিরাট কোহলী যাঁদের মধ্যে সব থেকে উজ্জ্বল নক্ষত্র। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শনিবারের ফাইনাল তেমনই উপহার দিল রাজকে।
প্রথম স্পেলে চার উইকেট! পরের স্পেলে আরও একটা। শনিবার যেন ইংল্যান্ডের মাঝের সারির ব্যাটারদের বুকে কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছিলেন রাজ। পাঁচ উইকেট তুলে নিয়ে ইংরেজ ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড একার হাতে ভেঙে দিলেন তিনি। ৯.৫ ওভার বল করে ৩১ রানে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ফিরিয়েছেন জর্জ থমাস, লাক্সটন, বেল, রেহান এবং বেডেনকে।
ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলোর সঙ্গে পরিচয় রাজের। বাড়িতেও খেলাধুলোর পরিবেশ ছিল। ঠাকুর্দা তারলোচন সিংহ প্রখ্যাত হকি খেলোয়াড় ছিলেন। ১৯৪৮ সালের অলিম্পিক্সে ভারতের সোনাজয়ী দলের সদস্য ছিলেন তিনি। বাবা সুখবিন্দর বাওয়া ক্রিকেট খেলেছেন। তা-ও আবার যুবরাজ সিংহের মতো ক্রিকেটারের সঙ্গে। বাবাকে দেখেই ক্রিকেট খেলায় আসা রাজের। বিশ্বকাপের শুরু থেকেই দুর্দান্ত ছন্দে রয়েছেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে চার উইকেট নিয়েছিলেন। এর পরে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৪২ রান করেন। তবে গ্রুপের শেষ ম্যাচে উগান্ডার বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে দাপট দেখান তিনি। ১৪টি চার এবং ৮টি ছক্কার সাহায্যে ১০৮ বলে ১৬২ রানের ইনিংস খেলেন। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারতের এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান এটাই। রাজ ভেঙে দেন শিখর ধবনের ১৫৫ রানের রেকর্ড।
বাবার সঙ্গে ছোটবেলায় ধরমশালা স্টেডিয়ামে গিয়েছিলেন রাজ। সেখান থেকেই ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসার শুরু। এক ওয়েবসাইটে সুখবিন্দর বলেছেন, “আমি তখন কোচ ছিলাম। কিছু স্থানীয় প্রতিযোগিতায় খেলছিলাম। ধরমশালা স্টেডিয়ামে এক দিন অনুশীলনের পর রাজ এসে বলল, ‘বাবা আমি ক্রিকেটার হতে চাই।’ সেটাই আমার জীবনের সব থেকে সুখের দিন।” ক্রিকেট ছাড়াও হরিয়ানার জুনিয়র দলের হয়ে খেলেছেন সুখবিন্দর। ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ শিবিরে এক বার ডাক পেয়েছিলেন। স্লিপড ডিস্কের জন্য ২২ বছরে ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। তার পর থেকেই তিনি কোচ। বলেছেন, “গুরুগ্রামের তাউ দেবীলাল স্টেডিয়ামে আমার চাকরি ছিল। তখনই রাজকে একদিন জোরে বোলিং করতে দেখি। তখন ওর বয়স ১১ হবে। চামড়ার বলে প্রথম ম্যাচেই পাঁচ উইকেট নিতে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। প্রায় এক বছর ধরে ল্যান্ডিং ফিটের উপর জোর দিই। ওর তখনকার বোলিং অ্যাকশন যা ছিল, তাতে যে কোনও মুহূর্তে চোট হতে পারত। সেটা ঠিক করি। বোলিংয়ের উপর জোর দেওয়ার পাশাপাশি ওকে বলে দিই, ‘এ বার তোমাকে ব্যাটিংয়েও জোর দিতে হবে।’ সেই শুরু।”
That's #RajBawa in ICC U19 #WorldCup2022 finals #INDvENG #IndiaU19 pic.twitter.com/PQidww0wia
— Aakash Srivastava (@Cursedbuoy) February 5, 2022
রাজও নিজেকে অলরাউন্ডার ভাবতে পছন্দ করেন। বলেছেন, “আমি কেমন ক্রিকেট খেলি সেটা বাবা জানে। এটাও বুঝে গিয়েছিল, জোরে বোলিং আমার স্বভাবজাত। তাই আমাকে বলেছিল ব্যাটিংয়ে জোর দিতে। প্রথমে শুধু ব্যাটিংয়েই জোর দিতাম। তার পরে স্পিন বোলিং শুরু করি। পঞ্জাবের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৬ বিজয় মার্চেন্ট ট্রফির শিবিরে আবার জোরে বোলিং করতে শুরু করি। কখনও ভাবিনি জোরে বোলিং করতে পারব।” শনিবার দিনটা নিঃসন্দেহে তাঁকে অলরাউন্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে দিল।
মাত্র পাঁচ বছর বয়সে ঠাকুর্দা মারা যান। কিন্তু সেই সোনার পদক যখনই দেখতেন তখনই উত্তেজিত হয়ে পড়তেন রাজ। বলেছেন, “ঠাকুর্দার স্মৃতি সে ভাবে আর মাথায় নেই। কিন্তু ঠাকুমা এবং বাবার থেকে ওঁর অনেক গল্প শুনেছি। সারা জীবন সেটা স্মৃতিতে থেকে যাবে। যখনই সেই গল্প শুনি, বুকের ভেতরে উত্তেজনা তৈরি হয়। বুঝতে পারি তখনকার দিনে কত বড় কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন তিনি।”
রাজের প্রিয় ক্রিকেটার যুবরাজ সিংহ। যুবরাজের জার্সি নাম্বার ১২। তিনি নিজেও ১২ নম্বর জার্সি পরেন। সেই সংখ্যার পিছনেও রহস্য রয়েছে। রাজ বলেছেন, “আমার ঠাকুর্দার জন্মদিন ১২ ফেব্রুয়ারি। আমার আদর্শ যুবরাজ ১২ নম্বর জার্সি পরতেন। ওঁর জন্মদিন ১২ ডিসেম্বর। আমার জন্মদিন ১২ নভেম্বর। স্বাভাবিক ভাবেই অন্য কোনও সংখ্যা আমার মাথায় আসেনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy