জয়ের উচ্ছ্বাস তিলক বর্মার। ছবি: এক্স (টুইটার)।
২০ ওভারের ক্রিকেটে ভারতীয় দলের ভরসা হয়ে উঠেছেন তিলক বর্মা। শনিবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাঁর ৫৫ বলে ৭২ রানের ইনিংস আরও এক বার তা প্রমাণ করল। ২২ গজের অন্য প্রান্তে একের পর এক উইকেট পড়লেও এক প্রান্ত ঠান্ডা মাথায় আগলে রেখেছিলেন ২২ বছরের ক্রিকেটার। তাঁর ইনিংসে ভর করেই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ়ে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ভারত।
চারটি ৪ এবং ৫টি ছক্কার সাহায্যে ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলে তিলকই ম্যাচের সেরা ক্রিকেটার। দলকে জিতিয়ে তিনি বললেন, ‘‘পিচে দু’রকম গতি ছিল। ব্যাট করা সহজ ছিল না। ওভারে সাত-আট রান করে তোলার লক্ষ্য ছিল আমাদের। শুক্রবারই পিচের চরিত্র নিয়ে কোচের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তিনি আমাকে পরিস্থিতি বুঝে ব্যাট করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেটাই চেষ্টা করেছি।’’ তিলক মেনে নিয়েছেন একটা সময় কিছুটা চাপে পড়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘‘দেখুন, ওভারে ১০ দরকার হলে মেরে খেলতেই হবে। আমার অনেক সময় শেষ পর্যন্ত পিচে থাকা গুরুত্বপূর্ণ হয়। আমরা বাঁ হাত-ডান হাত জুটি রাখতে চেয়েছিলাম সব সময়। সেটাও কাজে দিয়েছে। এতে বোলারদের সমস্যা হয়।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘দক্ষিণ আফ্রিকার জোরে বোলারদের ওদের দেশের পিচে খেলেছি। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। আমাদের সকলেরই প্রস্তুতি ছিল জোফ্রা আর্চার এবং মার্ক উডের জন্য। আলাদা করে অনুশীলন করেছি আমরা।’’ শেষ কয়েক বলে তিলকের সঙ্গী ছিলেন রবি বিশ্নোই। সতীর্থকে কৃতিত্ব দিয়ে তরুণ ব্যাটার বলেছেন, ‘‘ওকে বলেছিলাম মাথা ঠান্ডা রেখে ফিল্ডারদের ফাঁকে শট খেলতে। সেটাই করেছে ও। লিয়াম লিভিংস্টোনকে মারা বিশ্নোইয়ের চারটা আমাদের কাজ সহজ করে দেয়।’’
শনিবারের পর ২১টি টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে তিলকের রান ৬৩৫। দু’টি করে শতরান এবং অর্ধশতরান রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। গড় ৫২.৯১। স্ট্রাইক রেট ১৫৯.৫৪। এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ ২০ ওভারের ক্রিকেটে ব্যাটার তিলক কতটা কার্যকর। এ দিন ব্যাটিং অর্ডারের তিন নম্বর জায়গা অনুজ সতীর্থকে ছেড়ে দিয়েছিলেন ভারতীয় দলের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। সেই ভরসার মর্যাদা দিয়েছেন তিলক।
ভারতীয় ক্রিকেটে হায়দরাবাদের ব্যাটারদের আলাদা কদর রয়েছে। মহম্মদ আজহারউদ্দিন, ভিভিএস লক্ষ্ণণদের সেই ধারাই বয়ে নিয়ে চলেছেন তিলক। দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয় কোচ হিসাবে গিয়েছেন লক্ষ্ণণ। তিলকের বাবা নাম্বুরি নাগারাজু ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। মা গায়ত্রী দেবী গৃহবধূ। টানাটানির সংসারে কষ্ট করে ছেলেকে ক্রিকেটার তৈরি করেছেন তাঁরা। তাঁদের সেই কষ্টের প্রতিদান দিচ্ছে তিলকের ব্যাট।
১১ বছরের তিলকের টেনিস বলের ক্রিকেটে ব্যাটিং দেখে সম্ভাবনা দেখেছিলেন তাঁর কোচ সালিম বায়াশ। তিনিই তিলককে নিয়ে যান নিজের লিগালা ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে। সেই থেকে শুরু তিলকের প্রথাগত ক্রিকেট সাধনা। বাড়ি থেকে অ্যাকাডেমির দূরত্ব ছিল ৪০ কিলোমিটার। সেই পথ প্রতি দিন যাওয়ার মতো সামর্থ্য ছিল না বর্মা পরিবারের। সালিমই সেই দায়িত্ব নেন। নিজের স্কুটারে প্রতি দিন তিলককে নিয়ে যেতেন, আবার প্রশিক্ষণ শেষে বাড়ি পৌঁছে দিতেন।
বাবা-মা এবং কোচের কষ্টের মর্যাদা দিচ্ছেন তিলক। কোচ, অধিনায়কের ভরসারও মর্যাদা দিচ্ছেন একই সঙ্গে। শনিবারও চাপের মুখে পরিণত ইনিংস খেললেন তিলক। স্বস্তি এনে দিলেন ভারতের সাজঘরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy