Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Team India

ভারত ‘এ’ দলের খেলা এখন আর হয় না, রোহিতদের দলে জোগান নেই নতুন কোনও ক্রিকেটারের

বিরাট কোহলি ২০২১ সালে ফাইনালে হারের পর দলে বদলের কথা বলেছিলেন। রোহিতও হেরে সে কথা বললেন। কিন্তু দল বদল হল না কেন?

Rohit Sharma

রোহিত শর্মা। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২৩ ১৯:২৮
Share: Save:

গত বারের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দলের সঙ্গে এ বারের ভারতীয় দলের তফাত খুবই অল্প। অর্থাৎ ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ভারতীয় টেস্ট দলে খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু বিরাট কোহলি ২০২১ সালে ফাইনালে হারের পর দলে বদলের কথা বলেছিলেন। যদিও তার ছ’মাসের মধ্যে তিনি নিজেই টি-টোয়েন্টি নেতৃত্ব ছেড়ে দেন। ২০২২ সালের শুরুতে টেস্ট নেতৃত্বও ছেড়ে দেন বিরাট। ভারতীয় দলে কোচও বদল হয়েছে। রবি শাস্ত্রীর বদলে এখন দায়িত্ব রাহুল দ্রাবিড়ের কাঁধে। দলের অধিনায়ক পাল্টেছে, কোচ পাল্টেছে, কিন্তু দল বদলায়নি।

২০২১ সালের ফাইনালে বিরাটের নেতৃত্বে যে দল খেলেছিল আর এ বার যে দল খেলল তাতে বদল মাত্র চারটি। এর মধ্যে যশপ্রীত বুমরা এবং ঋষভ পন্থ চোটের জন্য নেই। রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে প্রথম একাদশে নেওয়া হয়নি। ইশান্ত শর্মা একেবারেই বাদ পড়েছেন। এই চার জনের জায়গায় দলে এসেছেন উইকেটরক্ষক শ্রীকর ভরত, অলরাউন্ডার শার্দূল ঠাকুর এবং দুই পেসার মহম্মদ সিরাজ ও উমেশ যাদব। ভারতীয় দলে এই সময়ের মধ্যে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন মহম্মদ সিরাজ। তিনি নিয়মিত সুযোগ পান। শ্রেয়স আয়ার জায়গা করে নিলেও চোটের কারণে বাইরে। আর কোনও ক্রিকেটারকে সে ভাবে উঠে আসতে দেখা গেল না। ভারতীয় দলকে ফিরে যেতে হল এক সময় বাদ দেওয়া অজিঙ্ক রাহানের কাছে। সুযোগ দিতে হল চেতেশ্বর পুজারাকেও। কিন্তু ভারতের টেস্ট দলে নতুন ক্রিকেটারের অভাব কেন?

ভারতের সিনিয়র দলের সাপ্লাই লাইন যেটা, সেই ভারত ‘এ’ দলের সফর এই দু’বছরে অনেক কমে গিয়েছে। ২০২১ সালে শুধুমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়েছিল ভারত ‘এ’। নভেম্বর এবং ডিসেম্বর মিলিয়ে মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলেছিল তারা। ২০২২ সালে নিউ জ়িল্যান্ড এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে খেলেছিল ভারত ‘এ’। সেই সব ম্যাচ হয়েছিল সেপ্টম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে। তার পর থেকে আর কোনও সফরে যায়নি ভারত ‘এ’। ২০২১ সালের শুরুর দিকে যদিও করোনার প্রভাব ছিল। তাই অনেক খেলাই বাতিল করতে হয়েছিল।

২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ভারতীয় দলের কোচ রাহুল দ্রাবিড়। তার আগে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির প্রধান ছিলেন তিনি। সেই সময় ভারত ‘এ’ দলের দায়িত্ব সামলেছেন দ্রাবিড়। কোচ ছিলেন ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলেরও। ২০১৯ সালে একাধিক সফর হয়েছে ভারত ‘এ’ দলের। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলেছিল তারা। মে-জুন মাসে শ্রীলঙ্কা, জুলাই-অগস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে খেলেছিল ভারত ‘এ’, সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০২০ সালের শুরুতে নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলেছিল ভারত ‘এ’। এর পরেই করোনা অতিমারির প্রভাব শুরু হয়ে গিয়েছিল গোটা বিশ্বে। অর্থাৎ ২০১৯ থেকে ২০২০ সালের শুরুর মধ্যে ভারত ‘এ’ দল পাঁচটি দলের বিরুদ্ধে খেলেছিল। বলা যায় মাত্র এক বছরের মধ্যে এই সিরিজ়গুলি হয়েছিল। কিন্তু দ্রাবিড়কে সেখান থেকে সরিয়ে ভারতের সিনিয়র দলের দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকে ভারত ‘এ’ দলের খেলা অনেক কমে গিয়েছ।

২০১৯-২০ সালে একাধিক সফরের জন্য ভারত যে সাফল্য পেয়েছিল তার সেরা উদাহরণ ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তাদের মাটিতে সিনিয়র দলের টেস্ট সিরিজ় জয়। যে সিরিজ়ে একাধিক সিনিয়র ক্রিকেটার চোট এবং ব্যক্তিগত কারণে না খেললেও ভারত জিতেছিল মহম্মদ সিরাজ, ঋষভ পন্থ, ওয়াশিংটন সুন্দরদের কাঁধে চড়ে। সেই সিরিজ়েই দলকে ভরসা দিয়েছিলেন নবদীপ দাইনি, শার্দূল ঠাকুরের মতো ক্রিকেটার। সেই জোগানটাই এখন বন্ধ। দ্রাবিড় জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমি থেকে সরে আসার পর ভারত ‘এ’ দলের খেলা কমে গিয়েছে। তার চেয়ে অনেক বেশি সূচি তৈরি করতে হয় চোট পাওয়া ক্রিকেটারদের সুস্থ করার জন্য। রঞ্জি ট্রফিতে ভারতের সব ক্রিকেটারকে খেলানোর জন্য সেই সময় ভারত ‘এ’ দলের সফর বন্ধ রাখার কথা বলেছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই সময় তিনি ভারতীয় বোর্ডের সভাপতি। দ্রাবিড়ের ভারত ‘এ’ দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন দেবাঙ্গ গান্ধী। তিনি বলেন, “রঞ্জির সঙ্গে ভারত ‘এ’ দলের সফর মেশানো সত্যিই কঠিন। কিন্তু আমাদের সময়ে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়া সফরে যেত ভারত ‘এ’ দল। হার্দিক পাণ্ড্য, মহম্মদ সিরাজরা সেই সব সফর থেকেই উঠে এসেছে। ইংল্যান্ডেও সফরে যেত দল। ঋষভ পন্থ এবং হনুমা বিহারীকে পাওয়া গিয়েছিল সেখান থেকে। দ্রাবিড় ভারতের সিনিয়র দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত নিয়মিত। জানতে চাইত কোন ধরনের ক্রিকেটার দলের প্রয়োজন।”

Rahul Dravid

রাহুল দ্রাবিড়। —ফাইল চিত্র।

এখন এই ধরনের সফর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নতুন ক্রিকেটারদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নির্বাচকদের দলেও সমস্যা রয়েছে। নির্বাচক প্রধান চেতন শর্মা সরে গিয়েছেন। আগে লাল বলের ক্রিকেটে নবদীপ সাইনি, আবেশ খানের মতো ক্রিকেটারকে ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু তাঁরা এখন দলের বাইরে চলে গিয়েছেন। সরফরাজ খান, হনুমা বিহারীর মতো ক্রিকেটারেরা ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল খেললেও বিদেশে তাঁদের দেখে নেওয়া যাচ্ছে না। তাই বিদেশের পরিবেশে খেলে নিজেদের উন্নতি করার সুযোগও পাচ্ছেন না তাঁরা। ২০২১ সালে বিরাট যে বদলের কথা বলেছিলেন, তা পাওয়া গেল না। দ্রাবিড় কোচ হিসাবে দায়িত্ব নিয়ে চেতেশ্বর পুজারা, অজিঙ্ক রাহানে, ইশান্ত শর্মা এবং ঋদ্ধিমান সাহাকে বাদ দিয়েছিলেন। কিন্তু শ্রেয়স আয়ার, লোকেশ রাহুল চোট পেতেই ফিরিয়ে আনা হল পুজারা, রাহানেকে।

দু’বছর পর আবার একটি টেস্ট বিশ্বকাপের ফাইনাল হবে। সে বারেও ভারত সুযোগ পেলে এখনকার দলের অনেকে থাকবেন কি না সেই প্রশ্ন উঠতেই পারে। কারণ রোহিত, বিরাট, পুজারা, রাহানে, উমেশ, উনাদকটরা সকলেই ৩৭ ছুঁইছুঁই হয়ে যাবেন। সেই সময় তাঁদের পক্ষে টেস্ট খেলা সম্ভব হবে কি না সেই প্রশ্ন উঠছে। সে ক্ষেত্রে এখন থেকেই দলে বদল আনতে হবে। না হলে দু’বছর পর হঠাৎ করে নতুনদের পক্ষে খেলা মুশকিল। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যেমন দু’টি বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর ভারতীয় দলে বিরাট পরিবর্তন করা হয়, লাল বলের ক্রিকেটেও তেমনটা প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে এখন থেকেই যশস্বী জয়সওয়াল, অভিমন্যু ঈশ্বরন, রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের মতো ক্রিকেটারকে সুযোগ দিতে হবে। সেই সঙ্গে চোট পাওয়া ক্রিকেটারদেরও দ্রুত সুস্থ করে তুলতে হবে।

১২ জুলাই থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে টেস্ট শুরু ভারতের। সেই দলে একাধিক নতুন মুখ দেখা গেলে অবাক হওয়ার থাকবে না। শুভমন গিলের সঙ্গে যশস্বীকে দেখা যেতেই পারে ওপেন করতে। তরুণ ওপেনারকে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের রিজার্ভ দলে রেখে সেই ইঙ্গিত দিয়েছে ভারত। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত রান করছেন অভিমন্যু, রুতুরাজের মতো ক্রিকেটার। তাঁদেরও সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। পেসারদের মধ্যে সুযোগ দেওয়া হতে পারে বাংলার মুকেশ কুমারকে। তাঁকেও ইংল্যান্ডে নিয়ে গিয়েছিল ভারত। সুযোগ পেতে পারেন ঘরোয়া ক্রিকেটে সফল ব্যাটার সরফরাজও। ভারত ‘এ’ দলের সফর শুরু করার জন্যেও জোর দেওয়া হচ্ছে। সে কথা জানিয়েছেন সচিব জয় শাহ। সেই দলে তিলক বর্মা, সাই সুদর্শন, রিঙ্কু সিংহ, অভিষেক শর্মা, যশ ঢুলদের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।

টেস্ট বিশ্বকাপের ফাইনালে হেরে রোহিত বলেছিলেন দলে বদলের কথা। আগামী দিনের দিকে তাকাতে হলে ভারতকে দ্রুত সেই বদলগুলি করে ফেলতে হবে। না হলে দু’বছর পর হয়তো আবার একটি ফাইনাল খেলতে নেমে পিছন ফিরে তাকাতে হবে এবং পুরনো ভুলের পুনরাবৃত্তি হবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy