Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
ICC World Test Championship

বুমরা, শামি, সিরাজদের পর ভারতের হয়ে গতির আগুন ছোটাবেন কে? ‘নিখোঁজ’ ভারতীয় পেসার

বুমরার চোট। শামি, সিরাজ ছাড়া ধারাবাহিকতা দেখাতে পারছেন না কেউ। যে পেস আক্রমণ ভারতীয় দলের সম্পদ হয়ে উঠেছিল, সেটাই কি এ বার মুখ থুবড়ে পড়ল? আগামী দিনে কাদের দিকে তাকিয়ে থাকবে বোর্ড?

Mohammed Shami

মহম্মদ শামি। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২৩ ১৫:৩৭
Share: Save:

বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে প্রথম এক ঘণ্টায় অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারদের সমস্যায় ফেলে দিয়েছিলেন মহম্মদ শামি এবং মহম্মদ সিরাজ। তাঁদের স্পেল শেষ হওয়ার পরে উমেশ যাদবকে আনতেই অস্ট্রেলিয়া সহজে রান তুলতে শুরু করে দেয়। কখনও কভারের দিকে, কখনও লেগ স্টাম্পে রান আসতে থাকে। শামি, সিরাজের তৈরি করা চাপ ধীরে ধীরে কেটে যায়। শুধু বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ নয়, ভারতের খেলা থাকলে প্রায়ই এমনটা দেখা যাচ্ছে। যশপ্রীত বুমরা থাকলে হয়তো এতটা মুশকিল হত না। কিন্তু এই তিন পেসারের পর কে? কোন কোন পেস বোলারের দিকে নজর রাখবে ভারত?

চার পেসার নিয়ে ওভালে গিয়েছিল ভারত। এর মধ্যে শামি, সিরাজ এবং উমেশ খেলেছিলেন। জয়দেব উনাদকটকে নিয়ে গেলেও তাঁকে নামানো হয়নি। মাত্র তিনটি টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা থাকা বাঁহাতি পেসারকে খেলানোর ঝুঁকি নেয়নি ভারত। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খুব একটা সফল না হওয়া উমেশকেই বেছে নিয়েছিলেন রোহিত শর্মারা। ৩৫ বছরের উমেশ লাইন, লেংথ নিয়ে সমস্যায় পড়েন। বার বার হাফ ভলি দিতে থাকেন। অনায়াসে খেলেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারেরা। তবুও তাঁকেই বেছে নিতে হয়েছিল।

বছর খানেক আগে এক সাক্ষাৎকারে ইয়ান চ্যাপেল বলেছিলেন, “ভারতীয় দলের পেস বোলিং খুব গভীর। অন্য দেশের কাছে তা বেশ ঈর্ষার।” কিন্তু যশপ্রীত বুমরা চোটের কারণে দীর্ঘ দিন মাঠের বাইরে। চোট রয়েছে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণের। নবদীপ সাইনি, দীপক চাহার, কুলদীপ সেন, টি নটরাজন এবং খলিল আহমেদের মতো পেসাররাও চোটপ্রবণ। তাঁরা পাঁচ দিনের টেস্ট ধারাবাহিক ভাবে খেলতে পারবেন কি না, সেটা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তাঁদের উপর ভরসাও নেই বোর্ডের। না হলে ৩১ বছরের উনাদকটকে দলে ফেরানোর যুক্তি দেখা যাচ্ছে না। ঝুলন গোস্বামী যদিও মনে করেন এই চার পেসার ছাড়া অন্য কাউকে নিয়ে যাওয়া উচিত হত না। ভারতের প্রাক্তন পেসার এবং অধিনায়ক আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “সিরাজ, শামি তো দলে থাকতই। উমেশও টেস্ট দলে ধারাবাহিক ভাবে খেলছে। উনাদকট রঞ্জিতে খুব ভাল বল করেছে। সেই কারণেই সুযোগ পেয়েছে ও। তাই বুমরা না থাকায় এই চার জনকেই নিয়ে যাওয়া হয়। তবে উমেশ ভাল বল করতে পারেনি। সেই কারণেই ওকে নিয়ে এত কথা হচ্ছে।”

Jasprit Bumrah

চোটের কারণে বহু দিন মাঠের বাইরে যশপ্রীত বুমরা। —ফাইল চিত্র।

বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের প্রথম দিনে ভারতীয় পেসারেরা যে ঠিক লাইনে বল করতে পারেননি সেটা মেনে নিয়েছেন দলের বোলিং কোচও। পরেশ মামব্রে বলেন, “আমাদের বোলারেরা আরও সংযত ভাবে বল করতে পারত। প্রথম ১২-১৩ ওভারের পর আমরা ভুল করতে শুরু করি। আরও অনেক কম রান দেওয়া উচিত ছিল।” উমেশ তো রান দিয়েইছেন। সেই সঙ্গে শামি এবং সিরাজের উপরেও এক সময় ব্যাটারেরা শাসন করেন। ট্রেভিস হেডকে যেমন বোলারেরা থামাতেই পারছিলেন না। বুমরা যে ভাবে ব্যাটারদের আউট করার পরিকল্পনা করেন, তেমন কোনও অভিনবত্ব দেখা যায়নি শামিদের মধ্যে।

বুমরা থাকলে কি অন্য রকম হত? ২০১৮ সালে মেলবোর্নে বুমরা একটি স্লোয়ার দিয়েছিলেন শন মার্শকে। চমকে গিয়েছিলেন তিনি। ওই বলটি প্রমাণ করে যে, বুমরা কী করার ক্ষমতা রাখেন। ৬০ বল খেলে ১৯ রান করা মার্শ ওই বল খেলতেই পারেননি। এটা কোনও একটি ঘটনা নয়। লর্ডসে ব্যাট হাতে ক্রিজে জমে যাওয়া অলি রবিনসনকে করা একটি বলে চমকে দিয়েছিলেন বুমরা। ঝুলন বললেন, “বুমরার না থাকাটা সত্যিই ভারতীয় দলের ক্ষতি। ও উইকেট নিতে পারে। সেটা ভারত গত এক বছর ধরে পাচ্ছে না।”

খেলার গতির উল্টো দিকে গিয়ে বুমরা হঠাৎ করে উইকেট এনে দেওয়া ক্ষমতা রাখেন। শামি, সিরাজ যথেষ্ট শক্তিশালী বোলার, কিন্তু তাঁদের মধ্যেই বুমরার মতো এমন ক্ষমতার অভাব রয়েছে। শুধু উইকেট নেওয়া নয়, বুমরা সঠিক লাইন, লেংথে ধারাবাহিক ভাবে বল করে রান আটকে দেওয়ার ক্ষমতাও রাখেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার বলেন, “ভাল বোলার হচ্ছে তারা, যারা রান দেয় না। ব্যাটারদের অসুবিধা হয় রান করতে তাদের বিরুদ্ধে। বুমরা হচ্ছে সেই ধরনের বোলার।”

Mohammed Siraj

বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে মহম্মদ সিরাজ। —ফাইল চিত্র।

শামি, সিরাজ টেস্টে যে সময় উইকেট নিতে পারছিলেন না, ওই সময় তাঁরা রানও দেন। ভারতের দুই পেসারের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ইনিংসে অ্যালেক্স ক্যারে এবং মিচেল স্টার্ক চাপের মধ্যে আক্রমণাত্মক শট খেলেন। নতুন বলে লাইন, লেংথ ভুল করেন শামিরা। অফ স্টাম্পের বাইরে শর্ট বল করেন। যা সহজেই বাউন্ডারিতে পাঠান অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারেরা। অনেকে বলতে পারেন, ২০২১ সালের ফাইনালে বুমরা খেলেছিলেন। তিনি তো উইকেটই নিতে পারেননি। কিন্তু বুমরা থাকলে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারদের মধ্যে একটা আলাদা ভাবনা কাজ করত। ল্যাঙ্গার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, তিনি অস্ট্রেলিয়ার কোচ থাকাকালীন সে দেশের ব্যাটারেরা বুমরাকেই বেশি ভয় পেতেন।

চোট সারিয়ে বুমরা ফিরবেন। কিন্তু পেসারেরা বড় চোট সারিয়ে ফেরার পর খুব একটা ছন্দে থাকেন না। গতি বজায় রেখে টানা বলও করতে পারেন না। দিনে ২০ ওভার বল করার মতো ক্ষমতা বুমরার থাকবে কি না সেটাও প্রশ্ন। বিদেশের মাটিতে ভারতের সাফল্যের অন্যতম কারণ ছিল পেস আক্রমণ। কিন্তু বুমরা চোটের কারণে ছিটকে যাওয়ায় এবং বাকি অনেক পেসারের চোট থাকায় সে ভাবে কোনও বোলার উঠে আসছেন না।

বাংলার রঞ্জিজয়ী দলের ক্রিকেটার ইন্দুভূষণ রায় মনে করেন ভারতের তরুণ পেসারেরা পর্যাপ্ত সুযোগ পায়নি। তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “তরুণদের সুযোগ দিতে হবে। না হলে মুকেশ কুমারেরা তৈরি হবে কী করে। আশা করছি আগামী দিনে ওরা সুযোগ পাবে। মহম্মদ শামির বয়স হচ্ছে। উমেশকে আর খেলানো উচিত হবে বলে মনে হয় না।”

Jhulan Goswami

ঝুলন গোস্বামী। —ফাইল চিত্র।

একাধিক প্রতিভাবান পেসার উঠে এসেছিলেন। ২০২২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে এক দিনের সিরিজ়ে ভাল খেলেছিলেন প্রসিদ্ধ। প্রাক্তন ক্রিকেটার সঞ্জয় মঞ্জরেকর সেই সময় বলেছিলেন, “টেস্ট ক্রিকেটেও প্রসিদ্ধের থেকে অনেক কিছু আশা করে থাকব।” সাদা বলের ক্রিকেটে প্রসিদ্ধ বাউন্স আদায় করে নিতেন পিচ থেকে। তিনি ধারাবাহিক ভাবে লেংথে বল করতেন। কিন্তু চোট তাঁকে পিছিয়ে দিল। সেই তালিকায় রয়েছেন নবদীপ সাইনি। বিদেশের মাটিতে বেশ কিছু টেস্টে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছু ম্যাচও খেলেন। কিন্তু ধারাবাহিক ভাবে জায়গা পাননি। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের রিজার্ভ দলে মুকেশ কুমারকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বাংলার পেসার ঘরোয়া ক্রিকেটে লাল বলে নজর কাড়েন। তিনি কি এ বার ভারতীয় দলের পেসারদের তালিকায় ঢুকে পড়বেন। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে পেসার নিয়ে ভোগা দলের কাছে সেটাই এখন প্রশ্ন?

ভারতীয় দলে এখনই কোনও বড় পরিবর্তন হবে বলে মনে করছেন না ঝুলন। ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক বললেন, “পরের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল দু’বছর পর। সেখানে কারা খেলবে এখনই বলা মুশকিল। তবে এখনই কোনও পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না। লাল বলে মুকেশ ভাল বল করছে। কুলদীপ সেন, নবদীপ সাইনিরাও ভাল। তবে লাল বলের ক্রিকেট আর সাদা বলে ক্রিকেট আলাদা। এখন কার অনেক ক্রিকেটারই লাল বল খেলতে চাইছে না। দেখা যাক আগামী দিনে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড কাদের নেয়। সেই ভাবনা নিশ্চয়ই বোর্ডের মাথায় রয়েছে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE