টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের হুঙ্কার। ছবি: এএফপি
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে সেরার পুরস্কার পেলেন স্যাম কারেন। সেই পুরস্কার নিয়ে তিনি বলেন, “এটা আমার প্রাপ্য নয়। বেন স্টোকসের পাওয়া উচিত ছিল। ও অর্ধশতরান করল। এর আগেও কত বার আমাদের এমন ম্যাচ জিতিয়েছে।” ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জস বাটলার বলেন, “ও বড় ম্যাচের ক্রিকেটার। ওর বিরাট ইনিংসগুলোর পিছনে রয়েছে অভিজ্ঞতা।”
ঠিকই বলেছেন কারেন। বেন স্টোকস সত্যিই বড় ম্যাচের ক্রিকেটার। ট্রফি জয়ের ম্যাচ হলেই স্টোকস বাড়তি তাগিদ অনুভব করেন। রবিবার ম্যাচ জেতানো শটটা মিডউইকেটের উপর দিয়ে মেরেই লাফিয়ে উঠলেন ইংল্যান্ডের টেস্ট অধিনায়ক। ইংল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতালেন ৫২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে। জস বাটলার, অ্যালেক্স হেলসদের হারিয়ে ইংল্যান্ড যখন একটু বেকায়দায়, তখন দায়িত্বটা নিজের কাঁধে তুলে নিলেন স্টোকস। ঠান্ডা মাথায়, ধীরে সুস্থে মেলবোর্নের উইকেটে নিজেকে থিতু করলেন। সেই সঙ্গে হিসাব কষে এগোতে থাকলেন জয়ের রানের দিকে। ৪৯ বলে ৫২ রানের ইনিংসে তিনি মাত্র একটি ছক্কা মেরেছেন। সঙ্গে পাঁচটি চার। কোনও তাড়াহুড়ো ছিল না তাঁর ইনিংসে। কাজটা শেষ করে মাঠ ছাড়লেন।
২০১৯ সালে ইংল্যান্ডের এক দিনের বিশ্বকাপ জয়ের পিছনেও বড় ভূমিকা ছিল স্টোকসের। ফাইনালে ৮৪ রানের ম্যাচ বাঁচানো ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। স্টোকস না থাকলে ম্যাচটি টাই হত না। তাঁর ব্যাটে লেগেই বল চলে গিয়েছিল বাউন্ডারিতে। শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ জিততে যে চারই বড় ভূমিকা হয়ে ওঠে। নিউজ়িল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দিয়েছিল একটা বাউন্ডারি। ট্রফি নিয়ে চলে গিয়েছিল স্টোকসের দেশ। উল্লেখ্য, এ বছর এক দিনের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন তিনি।
শুধু সাদা বলে দু’টি বিশ্বকাপ জেতানোর পিছনেই বড় ভূমিকা নেওয়া নয়, স্টোকসের ব্যাট ইংল্যান্ডকে অ্যাশেজ এনে দিয়েছিল। ২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১৩৫ রানের ইনিংস ভুলতে পারবেন না ইংল্যান্ডের ক্রিকেটপ্রেমীরা। স্টোকসের খেলা দেখে অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়াটসন আফসোস করে বলেছিলেন, “ও যদি আমাদের দলে থাকত, ভাল হত।”
দলকে রবিবার বিশ্বকাপ জিতিয়ে স্টোকস বলেন, “ফাইনালের মতো মঞ্চে রান তাড়া করতে হলে পুরনো সব কথা ভুলে যেতে হয়। ১৩০ রানে পাকিস্তানকে আটকে রাখার পিছনে বোলারদের কৃতিত্ব দিতেই হবে। শুরুতে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে হারের ধাক্কা ছিল, কিন্তু সেটা মনে রেখে এগিয়ে যাওয়া যেত না। সেরা দল সব সময় ঘুষি খেয়ে ফিরে আসে। পরের পরীক্ষার জন্য তৈরি হয়। এটা দারুণ একটা সন্ধে ছিল।”
বড় ম্যাচ জেতানোর এই জেদ স্টোকস কোথা থেকে পান? ইংল্যান্ডের জার্সিতে স্টোকসের বার বার ‘বিগ বেন’ হয়ে ওঠার পিছনে অবশ্যই রয়েছে ঘুষি মেরে ফিরে আসার কাহিনি। যে ঘটনা জীবনটাই বদলে দিয়েছে স্টোকসের। সাল ২০১৭। রেস্তরাঁর বাইরে মারপিট করে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন স্টোকস। সংবাদমাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠেছিল। কেউ লিখেছিলেন, ‘মত্ত অবস্থায় মারপিট করেছেন ক্রিকেটার’, কেউ লিখেছিলেন, ‘তাঁকে ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত করা উচিত।’ অন্ধকার সময় গ্রাস করেছিল ক্রিকেটারকে। মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিল পরিবার।
ইংল্যান্ডের টেস্ট অধিনায়ককে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র তৈরি হয়েছে। নাম ‘বেন স্টোকস: ফিনিক্স ফ্রম দ্য অ্যাশেজ।’ অর্থাৎ ছাই থেকে উঠে আসা আগুনপাখি। সত্যিই তো সব শেষ হয়ে গিয়েছিল স্টোকসের। ক্রিকেট থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য অবসরও নিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। অবাক হয়ে গিয়েছিলেন সতীর্থরা। স্টুয়ার্ট ব্রড ভয় পেয়েছিলেন, “মনে হয়েছিল হয়তো ওকে আর কোনও দিন ক্রিকেট খেলতে দেখতেই পাব না।” সেখান থেকে ফিরে এসে ইংল্যান্ড ক্রিকেটের মুকুট পরেছেন। সত্যিই ছাই থেকে উঠে আসা আগুন পাখি।
২০১৮ সালে ইংল্যান্ডের আদালত জানায় স্টোকস নির্দোষ। এক সমকামী যুগলের উপর হওয়া হামলার প্রতিবাদে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছিলেন স্টোকস। তাঁর মা ডেব স্টোকস বলেন, “এই স্বভাব ও বাবার থেকে পেয়েছে। এমন ঘটনা চোখের সামনে ঘটলে ওর বাবা কখনও মুখ ঘুরিয়ে চলে আসত না।” সেই বাবাকে হারিয়ে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন স্টোকস।
বাবার মৃত্যুর পর নিজের মানসিক অবস্থার কথা জানিয়েছিলেন স্টোকস। বলেছিলেন, ‘‘কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না। সব সময় বাবার মৃত্যুর কথা মনে পড়ত। কিছু দিন পর খেলায় ফিরেছি। আগের মতো নিয়মিত না হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয় এখনও। মানসিক স্থিরতা বজায় রাখতে প্রতি দিন ওষুধ খেতে হয়। এটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া।’’
স্টোকস মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে এসেছিলেন। এই ফিরে আসাটাই স্টোকসের অভ্যেস। মাঠেও সেটাই দেখা যায়। বড় ম্যাচ হলেই স্টোকস বাড়তি উদ্দীপনা পান। হয়ে ওঠেন ‘বিগ বেন’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy