Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Virat Kohli

T20 World Cup 2021: কেন এই ব্যর্থতা? কোহলীদের হারের আসল কারণ কি লুকিয়ে রয়েছে দলের অন্দরেই

যে কোনও খেলাতেই সব কিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকবে এমন নয়। আবার এটাও সত্যি, কিছু জিনিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে ম্যাচ জেতাও যায়।

কেন ব্যর্থ কোহলীরা।

কেন ব্যর্থ কোহলীরা। ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২১ ১৭:১৪
Share: Save:

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম সেরা দাবিদার হিসেবে প্রতিযোগিতায় খেলতে নেমেছিল তারা। কিন্তু দু’ম্যাচ যেতে না যেতেই বিরাট কোহলীদের বিশ্বকাপ অভিযান শেষ হতে বসেছে। পাকিস্তানের কাছে ১০ উইকেটে হারের পর নিউজিল্যান্ডের কাছে ৮ উইকেটে হার। একটা দলের কাছে প্রতিযোগিতা যতটা খারাপ ভাবে শুরু হতে পারে, ঠিক ততটাই হয়েছে ভারতের কাছে। সমর্থকরা হতাশ। দল বিধ্বস্ত। ফলে বিশ্বকাপের দু’সপ্তাহ যেতে না যেতেই বিদায়ঘণ্টা বাজছে ভারতীয়দের কাছে।

কেন এই অবস্থা? ময়নাতদন্ত করলে উঠে আসছে প্রচুর কারণ। দুবাইয়ের মাঠে শিশির, টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করা, ব্যাটারদের খারাপ ছন্দ, ভুল শট এবং দল নির্বাচন, অকারণে একজন বিশেষ ক্রিকেটারের উপর অতিরিক্ত আস্থা ইত্যাদি প্রযুক্তিগত কারণ বাদ দিলেও সামগ্রিক ভাবে ভারতের ব্যর্থতার পিছনে আরও কিছু কারণ রয়েছে। যে কোনও খেলাতেই সব কিছু যে নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকবে এমন কোনও মানে নেই। আবার এটাও সত্যি, কিছু জিনিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে ম্যাচ সহজেই হাতের মুঠোয় পুরে ফেলা যায়। ঠান্ডা মাথায় অতীতে এই কাজ বার বার করেছেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। কিন্তু বিরাট কোহলী প্রতি বারই গোড়ায় গলদ করেছেন। স্বাভাবিক ভাবেই সাফল্য এসে ধরা দেয়নি তাঁর কাছে।

ভারতের হারের অন্যতম বড় কারণ বিশ্লেষণ করতে গেলে একটু তাকাতে হবে বিশ্ব ফুটবলের দিকে। সেখানে খেলেন লিয়োনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর মতো মহারথীরা। প্রত্যেকেই জানেন সারা বছর আনুমানিক ক’টা ম্যাচ খেলতে হয় তাঁদের। সেখানে কিন্তু দেশের হয়ে খেলা গৌণ। আসল হচ্ছে ক্লাব ফুটবল। প্রতি মরসুম নিজের ক্লাবের হয়ে সেরাটা উজাড় করে দেন তাঁরা। মাঝে ফাঁক পেলে দেশের হয়ে খেলেন। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ না থাকলে বিশ্রাম নিতে দেখা যায়। দু’জনের কেউই কিন্তু এখনও বিশ্বকাপের মুখ দেখেননি। এর মূল কারণ ক্লাবের হয়ে নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দেওয়া। বিশ্বকাপ হয় সাধারণত জুন-জুলাই মাসে। তার আগে ভরপুর ক্লাব মরসুম খেলে আসেন ফুটবলাররা। বিশ্বকাপের আগে পর্যাপ্ত অনুশীলনেরও সুযোগ পান না। ফলে কিছুটা যেতে না যেতেই তাঁদের ক্লান্ত দেখাতে শুরু করে। যেটুকু সাফল্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাঁরা পেয়েছেন, তা কেবলই নিজের দক্ষতায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মন চায়, শরীর সায় দেয় না।

ফুটবলের উল্টো চিত্র ক্রিকেটে। এখানে ক্লাব বা ফ্র্যাঞ্চাইজির থেকে দেশের হয়ে বেশি সময় খেলতে দেখা যায় ক্রিকেটারদের। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে ভারতীয় ক্রিকেটাররা যেন মেসি, রোনাল্ডোদের মতোই অত্যধিক গুরুত্ব দিতে শুরু করেছেন আইপিএল-কে। সেখানে ট্রফি জেতাই যেন মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছে তাঁদের কাছে। কোহলী নিজে যেমন ব্যাঙ্গালোরকে আইপিএল জেতানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন। সফল হননি। বিশ্বকাপের আগে আমিরশাহিতে আইপিএল আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বোর্ড বলেছিল, বিশ্বকাপের সঠিক প্রস্তুতি হবে। কিন্তু হল ঠিক উল্টো। একের পর এক ম্যাচ খেলে বিশ্বকাপে যখন ক্রিকেটাররা খেলতে এলেন তখন তাঁরা ক্লান্ত। যে মাঠে কিছুদিন আগেই আগুন ঝরিয়েছেন, বিশ্বকাপে সেখানেই দিশাহীন বোলিং করছিলেন যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামিরা। নিউজিল্যান্ড ম্যাচের পর বুমরা স্বীকারও করে নিয়েছেন নিজেদের ক্লান্তির কথা। অর্থাৎ, বিশ্বকাপের আগে আইপিএল খেলে আদতে ক্রিকেটারদের ক্ষতিই হয়েছে।

আরও একটি কারণ হল, বিশ্বকাপের আগেই কোহলীর অধিনায়কত্ব ছাড়ার কথা ঘোষণা করা। বেশিরভাগ ক্রিকেট সমর্থকই জানেন যে, সাফল্যের জন্য ভারতীয় ক্রিকেটাররা কতটা তাঁদের নেতার মুখাপেক্ষী। সেখানে কোহলী আচমকা নিজের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করায় অনেকেই হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তার সরাসরি প্রভাব পড়েছে দলের খেলায়। কোহলীকে সসম্মানে বিদায় জানানোর যে প্রত্যাশা তাঁদের উপর চেপে বসেছিল, সেই চাপই শেষ পর্যন্ত ডুবিয়েছে। ক্রিকেটারদের দেখে দিশাহীন জাহাজ মনে হয়েছে। কখন সরে যেতে হয়, সে ব্যাপারে কোহলীর কাছে হাতেগরম উদাহরণ ছিলেন নিজের পূর্বসূরী ধোনি। কিন্তু কোহলী শেখেননি। নিজের ঘাড় থেকে বোঝা কমানোর জন্য এমন সময়ে সিদ্ধান্তটা নিলেন, যা চাপ হয়ে বসল দলের কাছে।

দলের মধ্যেও যে সব ঠিক রয়েছে এমনটা কিন্তু নয়। ইদানীং কোহলী বার বারই বলেছেন দলে ঐক্য রয়েছে। কিছুদিন আগেও কোহলী বনাম রোহিতের ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’ সবারই জানা ছিল। কোহলীর নেতৃত্ব নিয়ে দলের কিছু বর্ষীয়ান ক্রিকেটার বোর্ডকে অভিযোগ করেছিলেন। জানা গিয়েছিল, তার মধ্যে ছিলেন রোহিত, বুমরার মতো ক্রিকেটারও। এরপরেই দল নাকি আড়াআড়ি কোহলীপন্থী বনাম রোহিতপন্থী নামে দু’টি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ড্রেসিংরুমের দরজা চুঁইয়ে টুকটাক আরও কিছু খবর সামনে এসেছে। পরে দু’জনেই সে কথা অস্বীকার করেছেন। কিন্তু ড্রেসিংরুমে যে সব ঠিক হয়ে গিয়েছে, একথা কেউই মানতে চান না। ফলে বড় প্রতিযোগিতায় জেতার জন্য যে ঐক্য দরকার, তা কোনওদিনই দলে গড়ে ওঠেনি। কোহলীদের সামনে রয়েছে পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের মতো জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ, যারা একের পর এক সমস্যায় বিধ্বস্ত হয়েও বিশ্বকাপে জানপ্রাণ দিয়ে লড়ছে।

দলগত ঐক্য নেই বলেই সম্ভবত দলের মধ্যে জেতার মানসিকতা গড়ে ওঠেনি। না হলে একজন অধিনায়ক হারের পর কী ভাবে বলতে পারেন যে মাঠে নামার আগেই তাঁরা কেঁপে গিয়েছিলেন? তাঁদের শরীরীভাষাই নাকি ঠিক ছিল না। একটা দলের আত্মবিশ্বাস কতটা তলানিতে থাকলে এ কথা বলা যায়, তা নিয়ে চর্চা চলছে ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে। কোহলী যা বলেছেন, তা অত্যুক্তি নয়। যে দু’টি ম্যাচে ভারত হেরেছে সেখানে সত্যিই তাঁদের মধ্যে বাড়তি তাগিদ লক্ষ্য করা যায়নি।

অঙ্কের হিসেবে ভারত এখনও প্রতিযোগিতায় টিকে রয়েছে বটে। তবে মনে মনে হয়তো বিদায়ের সুর শুনতে পেয়ে গিয়েছেন প্রত্যেকেই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy