শাস্ত্রী এবং কোহলীর জুটি ভাঙছে। ছবি: টুইটার থেকে
খেলা শেষ হওয়ার পরেই তিনি উঠে দাঁড়ালেন। জড়িয়ে ধরলেন অন্যতম সেরা শিষ্যকে। দীর্ঘদিন ধরে যাঁদের রসায়ন ভারতীয় ক্রিকেটে বহুচর্চিত ছিল, সোমবার রাতের পর থেকে তা ইতিহাস হয়ে গেল। অবশেষে ভাঙল রবি শাস্ত্রী এবং বিরাট কোহলীর জুটি। টি২০ বিশ্বকাপের পরেই দায়িত্ব ছাড়ছেন, একথা আগেই জানিয়েছিলেন শাস্ত্রী। সেই মতো সোমবারই ছিল তাঁর শেষ ম্যাচ। শুধু কোহলীই নয়, ভারতীয় দলের প্রত্যেক সদস্যকে জড়িয়ে ধরলেন তিনি।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে বিদায় হয়ে গিয়েছিল আগেই। সোমবার নামিবিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ ছিল নিয়মরক্ষার। সেই ম্যাচের পরেই টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়ক হিসাবে যাত্রা শেষ হয়ে গেল কোহলীরও। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতা ছিল তাঁর স্বপ্ন। কিন্তু শেষ প্রতিযোগিতাতেও খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে কোহলীকে। শোনা যাচ্ছে, একদিনের ক্রিকেটেও আর অধিনায়ক থাকবেন না কোহলী। ফলে সীমিত ওভারে নেতা হিসাবে বিশ্বকাপ জেতা হয়তো স্বপ্নই থেকে যাবে তাঁর কাছে। শাস্ত্রী প্রথমে টিম ডিরেক্টর এবং পরে পূর্ণমাত্রায় কোচ হয়ে ভারতীয় দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। পূর্ণাঙ্গ কোচ হয়ে আসার সময়ে তাঁকে আনার পিছনে সক্রিয় ভূমিকা ছিল কোহলীর। সেই জুটি এ বার ভাঙতে চলেছে।
১৯৯২ সালের পর এই প্রথম ভারত যে কোনও বিশ্বকাপে নিয়মরক্ষার কোনও ম্যাচ খেলল। সে বার সেমিফাইনালের দৌড় থেকে আগেই ছিটকে যাওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিল তারা। তবে এ বার যে এমন কিছু হতে পারে, সেটা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি কোনও ভারতীয় সমর্থক। ২০১২ সালের পর এই প্রথম ভারতীয় দল সীমিত ওভারের কোনও বিশ্বকাপের নক-আউট পর্বে উঠতে পারল না।
২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে প্রথম ম্যাচে চোট থাকায় খেলেননি মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। সেই ম্যাচে নেতৃত্ব দেন ধোনি। এরপর চতুর্থ টেস্টের আগেই আচমকা টেস্ট থেকে অবসর নেন ধোনি। কোহলী পাকাপাকি ভাবে টেস্ট দলের অধিনায়ক হয়ে যান। সীমিত ওভারের দায়িত্ব হাতে পান ২০১৭ সালে। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই শেষ বারের মতো কোনও আইসিসি প্রতিযোগিতায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ধোনি। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দলকে নেতৃত্ব দেন কোহলী।
#RaviShastri #Kohli
— Hemant (@SportsCuppa) November 8, 2021
Aise videos always tear me up bc pic.twitter.com/sErX3t671W
কোচ-অধিনায়ক হিসেবে শাস্ত্রী-কোহলী জুটি ভারত শুধু নয়, গোটা বিশ্বেই বহুচর্চিত। শাস্ত্রী টিম ডিরেক্টর হওয়ার পর থেকেই দু’জনের সম্পর্ক গাঢ় হয়। এরপর অনিল কুম্বলে ভারতের কোচ হয়ে আসার পর কী হয়েছিল তা সবাই জানেন। কার্যত কোহলীর চাপেই সরে যেতে হয়েছিল কুম্বলেকে এবং কোহলীর কথাতেই কোচ করে আনা হয়েছিল শাস্ত্রীকে। কিন্তু বার বার আশা জাগিয়েও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই জুটির সাফল্য আশাতীত নয়।
শাস্ত্রী-কোহলীর জুটিতে ভারত ইংল্যান্ডে গিয়ে টেস্ট সিরিজ জিতেছে, অস্ট্রেলিয়াকে তাদের মাটিতে দু’বার হারিয়েছে ঠিকই। কিন্তু ক্রিকেটের আসল পরীক্ষা যেখানে, সেই বিশ্বকাপে ভারত বার বার ব্যর্থ। শেষ বার ধোনির নেতৃত্বে ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয় ছাড়া ভারতের ঝুলিতে আইসিসি-র কোনও প্রতিযোগিতায় আর সাফল্য নেই। ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তারা রানার্স হয়। ২০১৫ বিশ্বকাপে তারা সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেয়। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও তাই। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হেরে যায় তারা। ২০১৯ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে সেই সেমিফাইনালেই বিদায় নিতে হয়।
শাস্ত্রী-কোহলী জুটির সাফল্য বলতে ২০১৮ সালে স্টিভ স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার-হীন অস্ট্রেলিয়াকে (তখন এই দু’জন বল বিকৃতি-কাণ্ডে নির্বাসিত ছিলেন) তাদের মাঠে হারানো। ২০২০-২১ সালে অবশ্য পূর্ণশক্তির দলকেই হারিয়েছিল তারা, যার মধ্যে ব্রিসবেনের দুর্গে ৩২ বছর বাদে জয়ও ছিল। ইংল্যান্ডে চলতি বছরে সিরিজে ২-১ এগিয়ে রয়েছে ভারত। ম্যাঞ্চেস্টার টেস্ট বাতিল হওয়ায় সিরিজ সম্পূর্ণ হয়নি।
বার বার ব্যর্থ হওয়ায় তাই এ বার শাস্ত্রী-কোহলী জুটির লক্ষ্যই ছিল কোনও একটা ফরম্যাটের বিশ্বকাপ অন্তত ক্যাবিনেটে ঢোকানো। কিন্তু সেই লক্ষ্যে সফল হলেন না তিনি। কোচ হিসেবে শাস্ত্রীর অধীনে ৪৩টি টেস্টে নেমেছে ভারত। জিতেছে ২৫টি এবং হেরেছে ১৩টিতে। একদিনের ক্রিকেটে ৭৬টি ম্যাচের মধ্যে ভারত জিতেছে ৫১টি, হেরেছে ২২টি। টি২০ ক্রিকেটের ক্ষেত্রে ৬৪টি ম্যাচের মধ্যে জয় ৪২টিতে এবং হার ১৮টিতে। মোট ১৮৩টি ম্যাচে ১১৮টি জিতেছে ভারত, হেরেছে ৫৩টিতে। জয়-হারের অনুপাত ২.২২৬। কোহলী টি২০-তে ৫০টি ম্যাচে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। জিতেছেন ২৯টিতে, হেরেছেন ১৬টিতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy