উদয়পুরের অম্বা মাতা থানার পুলিশ নাফিসাকে গ্রেফতার করে। ছবি টুইটার থেকে।
লক্ষ লক্ষ ভারতবাসীর মতো নাফিসা আটারিও সেই রবিবার টেলিভিশনের সামনে থেকে উঠতে পারেননি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দেখবেন বলে শুরু থেকেই তৈরি হয়েছিলেন।
দু’ দিন পরে রাজস্থানের উদয়পুরের নিরজা মোদী স্কুলের এই শিক্ষিকার জায়গা হয়েছিল হাজতে। অপরাধ, তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ স্টেটাস, যেখানে পাকিস্তানের জয়ের উল্লাস লেখা ছিল।
উদয়পুরের অম্বা মাতা থানার পুলিশ নাফিসাকে গ্রেফতার করে। অম্বা মাতা থানার পুলিশ আধিকারিক নরপত সিংহ জানান, নাফিসাকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩ বি (জাতীয় সংহতি বিরোধী) ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাঁকে আদালতে তোলা হলে তাঁর জেল হয়।
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের পর দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বহু মুসলিমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নাফিসার গ্রেফতারের ঘটনায় আরও একবার বিশ্বের সবথেকে বড় গণতন্ত্রে মত প্রকাশের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল। যদিও অধিকাংশ গ্রেফতারের ঘটনা যোগী আদিত্যনাথের বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশের বরেলী, আগরা, লখনউয়ে। কিন্তু কংগ্রেস শাসিত রাজস্থানে অশোক গহলৌতের পুলিশ যে ভাবে নাফিসাকে গ্রেফতার করেছে, তা তাৎপর্যপূর্ণ।
গত ২৪ অক্টোবর পাকিস্তানের কাছে বিরাট কোহলীর ভারত ১০ উইকেটে হারার পর নাফিসা তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ স্টেটাসে লিখেছিলেন, ‘জিত গ্যায়ে…. উই ওয়ান’ (আমরা জিতে গিয়েছি)। সঙ্গে পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের ছবি দেন। এই হোয়াটসঅ্যাপ স্টেটাস তাঁর কোনও এক ছাত্রের বাবার নজরে আসে। তিনি বাকিদের তা পাঠিয়ে দেন। এরপর এটি ভাইরাল হতে সময় লাগেনি।
নাফিসার জেল হয়। স্কুলের চাকরিটিও খোয়াতে হয়।
‘অপরাধ’-এর জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন নাফিসা। রাজস্থানের একটি টেলিভিশন চ্যানেলে তিনি বলেন, ‘‘সে দিন একজন আমার স্টেটাস দেখে হোয়াটসঅ্যাপেই জানতে চেয়েছিলেন, আমি পাকিস্তানকে সমর্থন করছি কি না। সঙ্গে কিছু হাসির ইমোজিও ছিল। মনে হয়েছিল হাল্কা মেজাজে মজা করে আমাকে এই প্রশ্ন করা হয়েছে। আমিও হাসতে হাসতেই বলেছিলাম ‘হ্যাঁ’। কিন্তু তার মানে তো এই নয় যে, আমি পাকিস্তানকে সমর্থন করি। আমি ভারতীয়। ভারতকে ভালবাসি।’’
Those bursting crackers on Pak winning can’t be Indian! We stand by our boys! #Shameful
— Gautam Gambhir (@GautamGambhir) October 25, 2021
আপাতত জামিনে মুক্ত নাফিসা বাড়িতে স্বামী এবং সন্তানের সঙ্গে রয়েছেন। আইনি লড়াই চালাচ্ছেন।
তাঁর আইনজীবী রাজেশ সিংভি বলেছেন, ‘‘পুলিশ সম্পূর্ণ ভুল কাজ করেছে। কেউ ভুল করলে, বা কেউ কারও সঙ্গে একমত না হলে সেটাকে কখনোই দেশদ্রোহিতা বলা যায় না। এটা আমাদের সংবিধান বিরোধী।’’
হিন্দু সংগঠন বজরং দলের সদস্য রাজেন্দ্র পারমারও নাফিসার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘এই সব লোকেদের পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত। ভারতে থাকছ, রোজগার করছ, আর পাকিস্তানের জয় উদ্যাপন করছ! ওঁর শিক্ষা নেওয়া উচিত। উনি স্কুলে পড়ান। ছাত্রছাত্রীদের উনি কি শিক্ষা দেবেন?’’
বিজেপি বা তার সহযোগী দলগুলি যে নাফিসার হোয়াটসঅ্যাপ স্টেটাসকে সমর্থন করবে না, তা স্পষ্ট। যোগী আদিত্যনাথ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, পাকিস্তানের জয় উদ্যাপন করলে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে অভিযোগ দায়ের করা হবে। পরে এ নিয়ে টুইটও করেন। সেই পথে হেঁটেই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের পরে আগরায় তিন কাশ্মীরি পড়ুয়াকে গ্রেফতার করে যোগীর পুলিশ। আর্শাদ ইউসুফ, ইনায়াত আলতাফ শেখ এবং শওকত আহমেদ গনাই তিন জনেই রাজা বলবন্ত সিংহ কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র।
ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার এবং বিজেপি সাংসদ গৌতম গম্ভীর টুইট করেছিলেন, ‘পাকিস্তান জেতায় যাঁরা বাজি ফাটাচ্ছেন, তাঁরা ভারতীয় হতে পারেন না। আমরা ভারতীয় দলের পাশে আছি।’
নাফিসা, বা ইনায়াতদের গ্রেফতারের ঘটনাকে সমর্থন করে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের উপদেষ্টা কাঞ্চন গুপ্ত বলেন, ‘‘ওঁরা ভারতের হার উদযাপন করছিলেন। এই ধরনের যেকোনও ঘটনা যেকোনও সময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে পারে, বড় ঘটনা ঘটতে পারে। তাই যে ভাবেই হোক, এগুলো বন্ধ করতে হবে।’’
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে এই ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছে। ২০১৪ সালে একই কারণে উত্তরপ্রদেশে ৬০জন কাশ্মীরি ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। শুধু ভারতে নয়, একই ঘটনা ঘটেছে ওয়াঘার ওপারেও। ২০১৬ সালে কোহলী-ভক্ত এক পাকিস্তানীকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি পাকিস্তানে বসে ভারতের জাতীয় পতাকা নিয়ে কোহলীকে সমর্থন করছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy