দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটারদের উল্লাস। ছবি: পিটিআই।
এ ভাবেও কোনও ম্যাচ জেতা যায়!
দক্ষিণ আফ্রিকা প্রমাণ করে দিল, হ্যাঁ যায়! এখনও তাদের নামের পাশে ‘চোকার্স’ তকমা বসে। অর্থাৎ একদম জেতার মুহূর্তে থেকে হেরে আসার অভ্যাস নাকি এখনও রয়েছে তাদের। শুক্রবার চেন্নাইয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে ঠিক উল্টো কাজই করে দেখাল দক্ষিণ আফ্রিকা। ম্যাচের ৭০ ভাগ তারা দাপট দেখিয়ে শেষ মুহূর্তে চাপে পড়েছিল। সেখান থেকেই ম্যাচ জিতে নিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচে এক উইকেটে এল জয়। শুধু তাই নয়, ভারতকে টপকে পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারতের মতোই তাদের ১০ পয়েন্ট হলেও রান রেট ২.০৩২। ভারতের থেকে অনেকটাই বেশি।
এই জয়ের পিছনে কাণ্ডারি একজনই। তিনি কেশব মহারাজ। ৪১তম ওভারে বাবর আজমের হাতে ক্যাচ দিয়ে যখন এডেন মার্করাম ৯১ রানে ফিরে গেলেন, তখন কার্যত খাদের কিনারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। আর কোনও প্রতিষ্ঠিত ব্যাটার ক্রিজে ছিলেন না। হাতে প্রচুর বল ছিল, কিন্তু বাকি ২১টি রান তোলার মতো ব্যাটারের অভাব ছিল। সেখান থেকে বুক চিতিয়ে লড়াই করলেন মহারাজ, লুনগি এনগিডি এবং তাবরেইজ শামসি। পাকিস্তানের পেসারদের ভয়ঙ্কর মূর্তির সামনে পিছু না হটে সময় নিয়ে ম্যাচ জেতালেন তাঁরা। আর সেই জয়ের নেতৃত্বে কেশব মহারাজ। কারণ বেশির ভাগ বল তিনিই খেলেছেন।
মহারাজ যদি নায়ক হন, তা হলে খলনায়ক হওয়া উচিত মার্করামের। ৯১ রান করার পরেও তাঁর এই ‘পুরস্কার’ প্রাপ্য বলে অনেকেই মনে করছেন। ক্রিজে থিতু হয়ে গিয়েছিলেন। শতরান কিছু ক্ষণের অপেক্ষা ছিল। হাতে ৬০টির কাছাকাছি বল পড়েছিল। জিততে দরকার ছিল ২১ রান। নায়ক হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ ছিল মার্করামের কাছে। উল্টে শাহিন আফ্রিদির বলে তিনি অকারণে বড় শট খেলতে গিয়ে লোপ্পা ক্যাচ তুলে দিলেন। স্কুলছাত্রদের মতো তাঁর করা এই ভুল আর একটু হলেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দিচ্ছিল।
এ দিন টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নেমেছিল পাকিস্তান। বিশ্বকাপে ছ’টি ম্যাচ কেটে গেল। কিন্তু এখনও পাকিস্তানের ওপেনিং জুটি ঠিক হল না। শুক্রবার দক্ষিণ আফ্রিকার মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেও তাঁদের ওপেনিং জুটিতে উঠল মাত্র ২০। আবদুল্লাহ শফিক একটি শতরান করার পর থেকে আর রান পাচ্ছেন না। এ দিকে, ম্যাচের পর ম্যাচ রান না পেলেও খেলিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইমাম উল হককে। শফিক এ দিন ৯ করলেন। ইমামের অবদান ১২। ৩৮ রানেই দুই ওপেনার সাজঘরে।
বাধ্য হয়ে হাল ধরতে হল পরীক্ষিত বাবর আজম এবং মহম্মদ রিজ়ওয়ানকেই। দু’জনে মিলে ব্যাটিং ধস সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেন। রিজ়ওয়ানকে এসেই মার্কো জানসেনের বোলিংয়ের সামনে পড়তে হয়েছিল। দু’জনের কথা কাটাকাটিও হয়। রিজ়ওয়ান তার পরেও বেশ কিছু ক্ষণ বাবরের সঙ্গে জুটি বেঁধে খেলে যান। কিন্তু আগের ম্যাচগুলির মতো শুরুটা ভাল করেও ফিরতে হয় তাঁকে। পঞ্চম স্থানে নামা ইফতিকার আহমেদও (২১) কাজের কাজ কিছু করতে পারেননি।
বাবর অবশ্য স্বাভাবিক ছন্দেই খেলছিলেন। কোনও তাড়াহুড়োর রাস্তায় যাননি। শান্ত ভাবে ঝুঁকিহীন শট খেলে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন ইনিংস। তিনিও ভাল শুরু করে বড় রান করতে ব্যর্থ। অর্ধশতরান হতেই ফিরলেন তাবরেইজ শামসির বলে। পাকিস্তানের রান যে তার পরেও আড়াইশোর গণ্ডি পেরল, তার পিছনে রয়েছে সাউদ শাকিল এবং শাদাব খানের অবদান।
এত দিন কোনও ম্যাচেই শাদাবের ব্যাট চলেনি। শুক্রবার গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ক্রিজে কাটিয়ে মূল্যবান রান করে দিলেন তিনি। ষষ্ঠ উইকেটে শাকিলের সঙ্গে তাঁর ৮৪ রানের জুটি পাকিস্তানকে মোটামুটি একটা ভদ্রস্থ স্কোরে পৌঁছে দেয়। শাকিল অর্ধশতরান করেন। পরের দিকে মহম্মদ নওয়াজ়ও খেলে দেন।
ফিল্ডিং করতে নেমে চমক দেন বাবর। শুরুতেই বল তুলে দেন পার্ট-টাইম স্পিনার ইফতিকারের হাতে। ইফতিকার প্রথম বলটাই লেগস্টাম্পের এতটা বাইরে করেন যে উইকেটকিপার কিছুই করতে পারেননি। শুরুতেই ওয়াইডে পাঁচটি রান পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। পরের ওভারে শাহিন আফ্রিদিকে টানা চারটি চার মারেন কুইন্টন ডি’কক। চলতি বিশ্বকাপে তিনটি শতরান করা ডি’কক এ দিনও শুরুটা দারুণ ভাবেই করেন।
সেই শাহিনই পরে বোকা বানিয়ে আউট করলেন তাঁকে। শর্ট বলে পুল করেছিলেন ডি’কক। স্কোয়্যার লেগে ক্যাচ ধরেন মহম্মদ ওয়াসিম। বাভুমাও (২৮) শুরুটা ভাল করে বেশি দূর এগোতে পারেননি। রাসি ফান ডার ডুসেন (২১), হেনরিখ ক্লাসেনদেরকেও (১২) দ্রুত হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
কিন্তু একা খেলে যাচ্ছিলেন মার্করাম। উল্টো দিকে ডেভিড মিলারকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংস গড়ছিলেন। পঞ্চম উইকেটে ৭০ রান ওঠে। জমে গিয়েও শাহিনের বলে খোঁচা দিয়ে ফিরে গেলেন মিলার। তবে মার্কো জানসেনের উপরে ভরসা ছিল। তিনিও হতাশ হলেন। শেষ মার্করাম আউট হতে জয়ের স্বাদ পেয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান। পেসারদের দিয়ে বল করিয়ে ফায়দা তুলতে চেয়েছিলেন বাবর। সেই পরিকল্পনা কাজে লাগল না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy