সিএবি সভাপতি পদে সম্ভবত দেখা যাবে না সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে। ফাইল ছবি
ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসকের পদ গিয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রশাসকের পদও পাওয়া হল না। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় চেয়েছিলেন ভোটে লড়ে রাজ্যের ক্রিকেট প্রশাসকের পদে ফিরে আসতে। কিন্তু বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে সেই নির্বাচন হবে কি না, সেটাই এখন লাখটাকার প্রশ্ন। যেমন লাখটাকার প্রশ্ন, ভোট না-হলে সৌরভ কি আবার বিনা ভোটে পদ নেবেন? অস্যার্থ— তিনি কি আবার সিএবি সভাপতি হবেন?
সর্বভারতীয় সংস্থার প্রধান থেকে রাজ্য সংস্থার প্রধান হওয়ার মধ্যে কোনও আইনি বাধা নেই। যেমন দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আবার দেশের কোনও অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রেও কোনও আইনি বাধা নেই। কিন্তু তেমন কোনও রেওয়াজও সুলভ নয়। বিসিসিআই-এর সভাপতিত্ব করার পর সৌরভ সিএবি-র সভাপতি হলে তাতে কোনও আইনি বাধা থাকবে না। কিন্তু ক্রিকেটার এবং ‘বিগ্রহ’ হিসেবে সৌরভের যা উচ্চতা, তাতে বিষয়টি তাঁর পক্ষে বেমানান হবে কি না, তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে। তবে সেই সিদ্ধান্ত একান্ত ভাবেই নির্ভর করছে সৌরভের উপর।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির পদ খোয়ানোর পরে সৌরভ প্রকাশ্যেই জানিয়েছিলেন, তিনি সিএবি-র সভাপতি পদে লড়বেন। লড়বেন ‘জবাব দিতে’। কিসের জবাব? বিরোধীদের নিন্দার জবাব। সৌরভ যে আর বিসিসিআই-এর সভাপতি থাকছেন না, তা চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পর বাংলার ক্রিকেট প্রশাসনে বরাবর সৌরভের বিরোধী গোষ্ঠীর প্রশাসক বিশ্বরূপ দে প্রকাশ্যেই জানিয়েছিলেন, সৌরভ কখনও ভোটে লড়ে জেতেননি। সিএবি-র সভাপতি হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আশীর্বাদে’। আর বিসিসিআইয়ের সভাপতি পদ পেয়েছিলেন অমিত শাহের ‘বদান্যতা’য়। যা একেবারেই ভাল ভাবে নেননি ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক।
সৌরভের ঘনিষ্ঠদের একাংশের বক্তব্য, তখনই সৌরভ ঠিক করেন, তিনি সিএবি-র সভাপতি পদের জন্য নির্বাচনে লড়বেন। সে কথা প্রকাশ্যে তিনি জানিয়েও দেন। কারণ, তিনি চেয়েছিলেন ‘লড়ে জিততে’। তার পর থেকেই সিএবি ভোটের যাবতীয় অঙ্ক গুলিয়ে যায়। তার আগে বিরোধীপক্ষ নিজেদের মতো করে একটি প্যানেল তৈরি করেছিল। শাসকগোষ্ঠীও প্যানেলের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছিল। কিন্তু সৌরভের মতো ‘ওজনদার’ নাম সরাসরি ভোটে লড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে বসায় সমস্ত অঙ্ক নতুন করে কষা শুরু হয়। খুব সক্রিয় ভাবে সামনে না-এলেও সিএবি নির্বাচন নিয়ে ঘনিষ্ঠমহলে আগ্রহ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বিশেষত, সৌরভকে বিসিসিআই থেকে বাদ দেওয়ায় এবং জয় শাহ বোর্ডে তাঁর আগের পদেই থেকে যাওয়ায় মমতা বিজেপি তথা অমিত শাহকে আক্রমণের সুযোগ পেয়ে যান। তিনি সরাসরি দাঁড়িয়ে পড়েন সৌরভের পাশে। যেখানে তাঁর ‘আস্থাভাজন’ সৌরভের বিরোধী গোষ্ঠীর পক্ষে সচিব পদে আসতে আগ্রহী। সবমিলিয়ে জটিল রাজনীতির আবর্তে পড়ে যায় সিএবি নির্বাচন।
তবে সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে নির্বাচন না-হওয়ারই সম্ভবানা বেশি। কারণ, ময়দানে সৌরভ এসে যাওয়ায় বিরোধীরা সে ভাবে আর প্যানেল তৈরি করে প্রার্থী দিতে আগ্রহী নয়। সে ক্ষেত্রে উভয়পক্ষের একটা ‘মিলিজুলি’ প্রশাসন থাকবে বলেই এখনও পর্যন্ত মনে করছেন অনেকে। কিন্তু সেই ‘বিনা নির্বাচনে’ গঠিত মিলিজুলি প্রশাসনে সৌরভ থাকবেন কি না, তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে। কারণ, নির্বাচন না হলে আবার তাঁকে বিশ্বরূপ-সহ বিরোধীপক্ষের সমালোচনার মুখে পড়তে হবে। যদিও মূল সমালোচক বিশ্বরূপ (যিনি ঘটনাচক্রে অধুনা তৃণমূলের কাউন্সিলারও বটে) ওই আধা-প্রস্তাবিত মিলিজুলি প্রশাসনে থাকবেন, এমন সম্ভাবনা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেখা যায়নি।
যদি সৌরভ বিনা নির্বাচনে সিএবি-র সভাপতি হতে সম্মত না হন, তা হলে সিএবি-র নতুন কমিটিতে সভাপতি হিসেবে সৌরভের দাদা স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম শোনা যাচ্ছে। তিনি এত দিন সিএবি-র সচিব ছিলেন। সহ-সভাপতি পদে মুখ্যমন্ত্রী মমতার ‘আস্থাভাজন’ বিশ্ব মজুমদারের নাম শোনা যাচ্ছে। যাঁকে নিয়ে স্বয়ং সৌরভের কোনও আপত্তি নেই। সচিব হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে প্রবীর চক্রবর্তীর। যিনি আগে অনেক বার শেষ ল্যাপে ছিটকে গিয়েছেন। দেবব্রত দাস যেমন যুগ্ম সচিব ছিলেন, তেমনই থাকবেন। কোষাধ্যক্ষ হিসেবে আগে একমাত্র নরেশ ওঝার নাম শোনা যাচ্ছিল। তিনি আগের কমিটিতে সহ-সভাপতি ছিলেন। এখন দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম শোনা যাচ্ছে ওই পদের জন্য। তিনি আগের কমিটিতে কোষাধ্যক্ষ ছিলেন।
সিএবি-র নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন শনিবার। এখন দেখার, সৌরভ সে দিন মনোনয়ন জমা দেন কি না। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন সোমবার। সিএবি-র বার্ষিক সাধারণ সভা ৩১ অক্টোবর। সে দিনই নতুন প্রশাসকমণ্ডলীর নাম চূড়ান্ত ভাবে ঘোষিত হবে। একাধিক সূত্রের দাবি, বিরোধী শিবিরের তরফে কোনও পদে মনোনয়ন জমা দেওয়া হবে না। একটিই প্যানেল জমা পড়বে। সেখানে উভয় পক্ষেরই কমবেশি প্রতিনিধিত্ব থাকবে। যেটা এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়, সৌরভের নাম থাকবে কি না।
তিনি যে আর বোর্ড সভাপতি থাকছেন না, তা পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পরে সৌরভ গত ১৫ অক্টোবর বলেছিলেন, সিএবি-র নির্বাচনে তিনি লড়বেন। তিনি বলেছিলেন, “আমি নির্বাচনে লড়তে চলেছি। আগামী ২২ অক্টোবর মনোনয়ন জমা দেওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। পাঁচ বছর সিএবি-তে ছিলাম। লোধা কমিটির নিয়ম অনুযায়ী আরও চার বছর থাকতে পারব। নিজের প্যানেল তৈরি করে ফেলতে পারব বলে আশা করছি।’’
অর্থাৎ, সিএবি নির্বাচনে ভোট হবে বলে ধরেই নিয়েছিলেন সৌরভ। যেমন ধরে নিয়েছিল বিরোধীপক্ষও। কিন্তু ‘পরিবর্তিত’ পরিস্থিতিতে সেই নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়েই জল্পনা তৈরি হয়েছে। বস্তুত, যে পদাধিকারীদের নাম বাংলার ক্রিকেটমহলে ঘুরছে, তা চূড়ান্ত হলে এটা স্পষ্ট যে, সরাসরি পদে না-থাকলেও বাংলার ক্রিকেট প্রশাসনের রাশ সৌরভের হাতেই থাকবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy