আড্ডা দিতে ভালবাসেন বিরাট। শ্রীবৎস বলেন, “সেই সময় আমাদের ফোন খুব একটা ছিল না। এক সঙ্গে বসে সবাই আড্ডা দেওয়া হত। সেই আড্ডায় বিরাটও আমাদের সঙ্গে থাকত।”
১৪ বছর আগে শ্রীবৎস এবং কোহলী। —ফাইল চিত্র
১৪ বছর আগে যে ছেলেটার সঙ্গে ঘর ভাগ করে থাকতেন শ্রীবৎস গোস্বামী, সেই বিরাট কোহলী শুক্রবার শততম টেস্ট খেলতে চলেছেন। ২০০৮ সালে ১৯ বছরের শ্রীবৎস বুঝতে পারেননি যে কোনও এক দিন ১০০ টেস্ট খেলতে পারেন তাঁর বন্ধু। বৃহস্পতিবার বিরাট নিজেও বলেন, “আমি কখনও ভাবিনি যে ১০০টা টেস্ট খেলব। অনেক লম্বা সফর। ভাল লাগছে যে ১০০তম টেস্টে পৌঁছতে পেরেছি।”
শুধু সাজঘর নয়, শ্রীবৎস জানিয়েছেন খেলতে গিয়ে এক ঘরেও থেকেছেন তিনি এবং বিরাট। ১৪ বছর আগে কেমন ছিলেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক? আনন্দবাজার অনলাইনকে শ্রীবৎস বললেন, “দিল্লির ছেলেরা যেমন হুল্লোড় করতে ভালবাসে, বিরাটও তেমনই ছিল। খাওয়া-দাওয়া, গান শোনা, সবই করত বিরাট। এখনকার বিরাটের থেকে অনেকটাই আলাদা ছিল সে।”
অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের আগে থেকেই বিরাটের সঙ্গে পরিচয় ছিল শ্রীবৎসের। বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমি, অনূর্ধ্ব ১৯ দলের হয়ে বিভিন্ন দেশে খেলতে যাওয়ার সময় পরিচয় হয় দু’জনের। তখন থেকেই বন্ধুত্ব হয়ে যায় দু’জনের। শ্রীবৎস বললেন, “ভারতীয় ক্রিকেটে বিরাট আসার আগে ফিটনেস নিয়ে সেই ভাবে আলাদা করে নজর দেওয়ার ব্যাপার ছিল না। অনূর্ধ্ব ১৯ দলে খেলার সময় সব কিছুই খেত বিরাট। আলাদা করে ফিটনেসের দিকে নজর দেওয়ার কথা সেই সময় ও নিজেও ভাবেনি।”
তা হলে বিরাট বদলে গেলেন কবে? ২০০৮ সালেই ভারতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন বিরাট। শ্রীলঙ্কায় পাঁচটি এক দিনের ম্যাচ খেলেছিলেন। কিন্তু এর পর বসিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। দল থেকে বাদ পড়াটাই বিরাটকে পাল্টে দিয়েছিল বলে মত শ্রীবৎসের। তিনি বললেন, “সেই সময় রুটি, ভাত, মাংস সবই খেত বিরাট। একজন ১৯ বছরের ছেলে যে রকম খেতে ভালবাসে, তেমনটাই ছিল ও। ফিটনেসের দিকে আলাদা ভাবে নজর দেওয়া কথা ভাবিনি আমরা কেউই। আমার মনে হয় বিরাট বদলে যেতে শুরু করে ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর। সেই সময় খাওয়া দাওয়া, মানসিকতা, ফিটনেস, সব কিছুই পাল্টে ফেলতে শুরু করল বিরাট।” এক বছর পর শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে খেলেই ভারতীয় দলে প্রত্যাবর্তন ঘটেছিল বিরাটের।
শুক্রবার সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রাহুল দ্রাবিড়দের মতো ১০০ টেস্ট খেলার ঐতিহাসিক তালিকায় ঢুকে পড়বেন বিরাট। ভারতীয় ক্রিকেটে দ্বাদশ ব্যক্তি হিসাবে এই মাইলফলক ছোঁবেন তিনি। শ্রীবৎস বললেন, “১৪ বছর আগে মনে হয়নি বিরাট আলাদা। সেই সময় বলা মুশকিল ছিল আমাদের মধ্যে কে কোথায় পৌঁছে যাবে। ক্রিকেট খেলাটাই এরকম।”
আড্ডা দিতে ভালবাসেন বিরাট। শ্রীবৎস বলেন, “সেই সময় আমাদের ফোন খুব একটা ছিল না। এক সঙ্গে বসে সবাই আড্ডা দেওয়া হত। সেই আড্ডায় বিরাটও আমাদের সঙ্গে থাকত।”
২০০৮ সালের সেই বিরাট এখন অনেক পরিণত। ভারতীয় দলের নেতৃত্ব সামলেছেন তিনি। শততম টেস্টের আগে নেতৃত্ব না থাকলেও এখনও তিনি ভারতের অন্যতম সেরা ব্যাটার। অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে বিরাটের নেতৃত্বে খেলেছিলেন শ্রীবৎস। তিনি বললেন, “অনূর্ধ্ব ১৯ দলে কোচরাই অধিনায়ক। সেখানে বিরাটের নেতৃত্ব আলাদা করে বোঝা মুশকিল। তবে খুব আগ্রাসী ছিল ও।”
শ্রীবৎসের মতে বিরাটের সঙ্গে কাটানো প্রতিটা মুহূর্তই খুব স্পেশাল। তিনি বললেন, “এখনও দেখা হলে আমাদের আড্ডা হয়। ১৪ বছর আগের মতোই বন্ধুত্বটা রয়ে গিয়েছে আমাদের। খেলতে গিয়ে দেখা হলে এখনও একই রকম ভাবে মজা করি, ঘুরতে যাই আমরা। শততম টেস্টের জন্য বিরাটকে শুভেচ্ছা। মাত্র কয়েক জন ভারতীয় এই মাইলফলক ছুঁয়েছে। আশা করব এই ম্যাচে ব্যাট করতে নেমে নিজের সেরাটা দিতে পারবে ও। দেশকে গর্বিত করেছে ও। দারুণ একটা মাইলফলক বিরাটের সামনে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy