Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Shakib Al Hasan

Shakib Al Hasan: দেশভক্তি নিয়ে উঠত প্রশ্ন, দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে সেটাই কি উড়িয়ে দিলেন শাকিব

সেরা ক্রিকেটার বলেই কি দেশের হয়ে খেলতে নামার আগে ম্যাচ বেছে খেলেন? নাকি ক্লাবের হয়ে খেলতেই বেশি আগ্রহ।

শাকিবের দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন বোর্ড প্রধান।

শাকিবের দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন বোর্ড প্রধান। —ফাইল চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২২ ১৬:৪০
Share: Save:

আইপিএলের সময় বাংলাদেশের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর। মার্চ মাসের শুরুর দিকে শাকিব আল হাসান জানিয়ে দিলেন তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যেতে পারবেন না। মানসিক ভাবে সুস্থ নন তিনি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট নাজমুল হক পাপন বলেন, “শাকিবের যদি শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভাল না হয়, তা হলে আইপিএল-এ নাম নথিভুক্ত কেন করাল সেই নিয়ে ভাবা উচিত। যদি আইপিএল-এ দল পেত তা হলে একই কথা বলত? শাকিব যদি বাংলাদেশের হয়ে খেলতে না চায় তা হলে আমাদের কিছু করার নেই।”

শাকিবের দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন বোর্ড প্রধান। ১২ মার্চ থেকে শুরু হয় দক্ষিণ আফ্রিকা সফর। তিনটি এক দিনের ম্যাচ এবং দু’টি টেস্টের সেই সফরের আগে শাকিবকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল অনিশ্চয়তা। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে ছুটি নিয়ে নেন তিনি। কিন্তু বোর্ডের চুক্তিতে দেখা যায় সর্বোচ্চ অর্থের চুক্তিই তাঁর সঙ্গে করেছে বোর্ড। ছুটিও পেয়েছিলেন, অর্থও কমেনি শাকিবের। নিন্দকরা আওয়াজ তুলতে শুরু করেন। তাঁর দেশপ্রেম নিয়ে উঠেছিল প্রশ্ন। অনেকে বলেন দেশ নয়, ক্লাবের হয়ে টি-টোয়েন্টি খেলাতেই বেশি মন শাকিবের।

কিন্তু এই সব প্রশ্নের মুখে ঝামা ঘসে দেন শাকিব। এক শনিবারের সন্ধ্যায় বোর্ডের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন তিনি। ‘শারীরিক ও মানসিক ভাবে ক্লান্ত’ শাকিব বোর্ড প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দেন তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাবেন। সেই বৈঠকে শাকিব বলেন, “পাপন ভাইয়ের (নাজমুল হাসান) সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সারা বছরের একটা পরিকল্পনা করা নিয়ে কথা হয়েছে। আমি তিন ধরনের ক্রিকেটেই দেশের হয়ে খেলার জন্য প্রস্তুত। আমাকে কখন বিশ্রাম দেওয়া হবে, সেটা বোর্ড ঠিক করবে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের জন্য আমাকে পাওয়া যাবে। এখন মানসিক ভাবে আমি অনেক ভাল জায়গায় আছি। হয়তো দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার পরে আরও ভাল থাকব। মাঝে মাঝে এ রকম হয় যে, একটু ভাল পরিবেশে গেলে ভাল লাগে।”

তিনি দেশের সেরা ক্রিকেটার, সেটাই যেন ডাঁটের সঙ্গে বার বার বুঝিয়ে দেন শাকিব।

তিনি দেশের সেরা ক্রিকেটার, সেটাই যেন ডাঁটের সঙ্গে বার বার বুঝিয়ে দেন শাকিব। —ফাইল চিত্র

শাকিব কি নিজের মর্জিতে চলেন? নিজের ইচ্ছা হলে খেলেন, আবার ইচ্ছা না হলে খেলেন না? দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে এই ঘটনাই তো প্রথম নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময় শাকিব নিজের মর্জি মতো চলেছেন। ম্যাচ গড়াপেটার প্রস্তাব পেয়েও আইসিসিকে জানাননি। এর ফলে এক বছরের জন্য নির্বাসিত হয়েছিলেন তিনি। কখনও সিরিজ শুরুর আগে সরে দাঁড়ানোর কথা বলেছেন। তিনি দেশের সেরা ক্রিকেটার, সেটাই যেন ডাঁটের সঙ্গে বার বার বুঝিয়ে দেন শাকিব।

হ্যাঁ, তিনি দেশের সেরা ক্রিকেটার। টেস্ট ক্রিকেটে আইসিসির অলরাউন্ডারদের ক্রমতালিকায় শাকিব চতুর্থ। এক দিনের ক্রিকেটে এক নম্বর। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দু’নম্বর। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের আর কোনও ক্রিকেটার তিন ধরনের ক্রিকেটে আইসিসি-র ক্রমতালিকায় প্রথম দশেও নেই। মেহেদি হাসান শুধু মাত্র এক দিনের ক্রিকেটে রয়েছেন। তাও অষ্টম স্থানে। শাকিব সেখানে শীর্ষে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসেও তিনি সেরা কি না তা নিয়েও চর্চা হতে পারে।

সেরা ক্রিকেটার বলেই কি দেশের হয়ে খেলতে নামার আগে ম্যাচ বেছে খেলেন? নাকি ক্লাবের হয়ে খেলতেই বেশি আগ্রহ। বাংলাদেশের অনেক সমর্থক বলেন শাকিব এখন খেলার মাঠে নয়, বিজ্ঞাপনের পর্দায় বেশি থাকেন। সেই শাকিব সমস্ত নিন্দার ঝড়কে ছুড়ে ফেলেন আফ্রিকার জঙ্গলে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম এক দিনের ম্যাচে ৬৪ বলে ৭৭ রানের ইনিংস খেলেন। জেতে বাংলাদেশ। ম্যাচের সেরা হন শাকিব। পরের ম্যাচে শাকিব শূন্য করেন। বাংলাদেশ ম্যাচ হারে। পরের ম্যাচে বল হাতে দু’টি উইকেট এবং ১৮ রান করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। ঐতিহাসিক সিরিজ জয় বাংলাদেশের। সদ্য ভারত যে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে সিরিজ হেরে ফিরেছিল, সেখানে সিরিজ জেতে বাংলাদেশ।

এই সিরিজ জেতা বাংলাদেশের কাছে ঐতিহাসিক, আর শাকিবের কাছে দেশ প্রেম প্রমাণ করার মঞ্চ। সিরিজ তখন ১-১। শেষ এক দিনের ম্যাচেই হবে সিরিজের ফয়সালা। এমন সময় শাকিবের পরিবারের একাধিক সদস্য অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি তাঁর সন্তান। এমন অবস্থাতেও ম্যাচ খেলতে রাজি শাকিব। দেশকে জিতিয়ে তবেই দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়েন তিনি। দেশে ফিরলেও বাংলাদেশ বোর্ড বলছে টেস্ট সিরিজ খেলতে ফের দক্ষিণ আফ্রিকা যেতে পারেন শাকিব। ৩১ মার্চ থেকে শুরু হতে চলা প্রথম টেস্টে যদি নাও খেলতে পারেন, দ্বিতীয় টেস্টে তিনি খেলবেন বলেই মনে করছে বোর্ড।

দেশের হয়ে ২২১টি এক দিনের ম্যাচ, ৯৬টি টি-টোয়েন্টি এবং ৫৯টি টেস্ট খেলা হয়ে গিয়েছে শাকিবের। আন্তর্জাতিক মঞ্চে রয়েছে ১৪টি শতরান। টেস্টে তাঁর সংগ্রহ ৪০২৯ রান এবং ২১৫টি উইকেট। এক দিনের ক্রিকেটে করেছেন ৬৭৫৫ রান এবং ২৮৫টি উইকেট। বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারদের সঙ্গে এক আসনে বসানো হয় শাকিবকে। তাঁর তুলনা করা হয় গ্যারি সোবার্স, কপিল দেব, ইয়ান বোথাম, ইমরান খানদের সঙ্গে। নিজেকে সেই উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন শাকিব। তাই কী মাঝে মধ্যে তাঁর নায়কোচিত মর্জি সহ্য করতে হয় বাংলাদেশ বোর্ডকে?

অন্য বিষয়গুলি:

Shakib Al Hasan Bangladesh Cricket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy