আকর্ষণ: আইপিএল নিলামে প্রীতি। এই দৃশ্য ভবিষ্যতে দেখা যাবে কি?
নতুন বছরের জানুয়ারিতেই কি আইপিএলের ইতিহাসের শেষ নিলামের আসর বসতে চলেছে? এর পরে কি অন্য কোনও প্রথায় ক্রিকেটারদের দলবদল হবে? যে ভাবে বিশ্বের ক্লাব ফুটবলে কোনও ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো জুভেন্টাস ছেড়ে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে ফিরে আসেন? বা কোনও লিয়োনেল মেসি বার্সেলোনার সঙ্গে দীর্ঘ সম্পর্ক ত্যাগ করে চলে যান প্যারিস সাঁ জারমাঁয়?
অদূর ভবিষ্যতে বিশ্ব ফুটবলের মতো ভারতীয় ক্রিকেটের জনপ্রিয় লিগেও এমন প্রক্রিয়া দেখা যেতে পারে। আইপিএলের গভর্নিং কাউন্সিল সূত্রে খবর, ভারতীয় বোর্ডের অভ্যন্তরে নিলাম তুলে দেওয়া নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। তার পরিবর্তে বিশ্বের ক্লাব ফুটবলের ঢংয়ে ট্রান্সফার উইন্ডো চালু করার কথা ভেবে দেখা হচ্ছে।
বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, জানুয়ারিতেই শেষ বারের মতো হয়তো নিলামের আসর বসতে চলেছে। এ বারেই নতুন দুটো দল যোগ দিয়েছে। তাদের ঘর গোছানোর সুযোগও দিতে হবে। তার পরে হয়তো তুলে দেওয়া হতে পারে ক্রিকেটারদের কেনা-বেচার দর হাঁকাহাঁকির এই প্রক্রিয়া। ২০২২ থেকেই আইপিএল হয়ে যাচ্ছে দশ দলের। আর ২০২৩ থেকে হয়তো দেখা যাবে না আইপিএলের নিলাম।
শোনা যাচ্ছে, ভারতীয় বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, যাঁর উদ্যোগে এ দেশে গোলাপি বলের টেস্টের অভিনবত্ব এসেছিল, তিনিই এই বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে উদ্যোগী হয়েছেন। ফুটবল-ভক্ত প্রাক্তন অধিনায়কই নাকি এমন প্রস্তাব দিয়েছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে খবর। তার পরেই আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিল এ নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে।
এমন চাঞ্চল্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ কী? আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিল সূত্রে কয়েকটি বিশ্লেষণ পাওয়া যাচ্ছে। যেমন প্রত্যেক দলের সঙ্গেই জড়িত কয়েক জন তারকা ক্রিকেটার রয়েছেন। চেন্নাই সুপার কিংসে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরে বিরাট কোহালি। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে রোহিত শর্মা, যশপ্রীত বুমরা। যাঁরা সেই দলের ‘ব্র্যান্ড’ হিসেবে পরিচিত। তাঁরাই সেই দলের মুখ। যদি কোনও ভাবে এই ক্রিকেটারদের অন্য কোনও ক্লাব কিনতে চায়, তা হলে পুরনো ক্লাবের সঙ্গে বোঝাপড়া করেই কেনা উচিত বলে মনে করা হচ্ছে। নিলাম থেকে সোজা কিনে নিলে সেই ক্রিকেটারের পুরনো দল, যারা এত দিন ধরে তাঁর উপরে লগ্নি করল, তাদের অবদানকে পুরস্কৃত করার ব্যাপার থাকে না।
বিশ্বের ক্লাব ফুটবলে এ ভাবে নিলাম হয় না। ট্রান্সফার উইন্ডোর মাধ্যমে ফুটবলারদের কেনা-বেচা চলে। দলবদল নিয়ে পরিষ্কার নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তার বাইরে যাওয়ার উপায় নেই। বছরে দু’টি ট্রান্সফার উইন্ডো রয়েছে। সেই সময়েই দলবদল করতে হয়। কোনও ফুটবলারকে যদি চুক্তি চলাকালীন কিনতে হয়, তা হলে যে ক্লাব তাঁকে কিনবে, তাদের ‘ট্রান্সফার ফি’ দিতে হয় পুরনো ক্লাবকে। যেমন, রোনাল্ডোকে জুভেন্টাস থেকে নিতে গিয়ে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডকে ট্রান্সফার ফি দিতে হয়েছে ইটালির ক্লাবকে। সাম্প্রতিক চড়া মূল্যের ট্রান্সফারের মধ্যে অবশ্য রোনাল্ডো নেই। আছেন অ্যাস্টন ভিলা থেকে ম্যাঞ্চেস্টার সিটিতে যোগ দেওয়া জ্যাক গ্রিলিশ। অথবা ইন্টার মিলান থেকে চেলসিতে যাওয়া রোমেলু লুকাকু। বরুসিয়া ডর্টমুন্ড থেকে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে আসা জেডন স্যাঞ্চো।
ফুটবলে ‘ফ্রি ট্রান্সফার’-ও রয়েছে। চুক্তি শেষ হয়ে এলে কোনও ফুটবলার দল পাল্টাতেই পারেন। তখন নতুন ক্লাবকে তাঁর জন্য পুরনো ক্লাবকে অর্থ দিতে হয় না। সব চেয়ে বড় উদাহরণ লিয়োনেল মেসি। ১৩ বছর বয়সে যে ক্লাবের অ্যাকাডেমিতে এসেছিলেন, ২০০৪-এ যে ক্লাবের হয়ে তাঁর অভিষেক এবং তার পর থেকে কখনও অন্য কোথাও খেলেননি, সেই বার্সেলোনা থেকে ফ্রি ট্রান্সফারে তিনি গিয়েছেন পিএসজি-তে। বার্সার হয়ে ৩৪টি ট্রফি জেতার পরে। আইপিএলে ফুটবলের মতো ট্রান্সফার প্রথা আনতে গেলে এ সব কিছুই রাখতে হবে।
আপাতত অবশ্য, সব নজর আজ, মঙ্গলবারের দিকে। কোন দল পুরনো ক্রিকেটারদের মধ্যে কাদের ধরে রাখতে চায়, তার তালিকা জমা দেওয়ার শেষ দিন। মোট চার জন করে পুরনো ক্রিকেটার ধরে রাখা যাবে। কলকাতা নাইট রাইডার্সের ক্ষেত্রে যেমন শোনা যাচ্ছে আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারাইন, বেঙ্কটেশ আয়ার এবং শুভমন গিলের নাম। দিল্লি ক্যাপিটালস থেকে বেরিয়ে যেতে পারেন শ্রেয়স আয়ার। তিনি নতুন দুই দলের কারও অধিনায়ক হতে পারেন বলে খবর। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ছেড়ে দিতে পারে হার্দিক পাণ্ড্যকে। কায়রন পোলার্ডকেও নিলামে তুলে দেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে রোহিত, বুমরা, ঈশান কিশান এবং সূর্যকুমার যাদব হবেন মু্ম্বইয়ের চার পছন্দ।
চেন্নাই সুপার কিংস মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে এখনও ক্রিকেটার এবং অধিনায়ক হিসেবে পেতে চায়। ধোনি নিজে মনে করেন, জায়গা না আটকে তরুণ কাউকে রেখে দেওয়াই ভাল। সিএসকে শুনতে নারাজ। ধোনির সঙ্গেই তারা ঋতুরাজ গায়কোয়াড়, রবীন্দ্র জাডেজা এবং মইন আলি বা ফ্যাফ ডুপ্লেসির মধ্যে যে কোনও এক জনকে রেখে দিতে চায়। কে এল রাহুল কিংস ইলেভেন পঞ্জাব ছেড়ে দিতে চান বলে শোনা যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে তিনি নতুন দুই দলের একটির অধিনায়ক হতে পারেন। রাজস্থান রয়্যালসের বেন স্টোকস, জস বাটলার, জফ্রা আর্চার রয়েছে। দু’জন বিদেশির বেশি ধরে রাখা যাবে না। কাকে ছাড়া হবে, কঠিন সিদ্ধান্তের মুখে তারা।
ঠিক হয়েছে, নতুন দুই দলকে তালিকা থেকে তিন জন করে ক্রিকেটার প্রথমে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। শ্রেয়স আয়ার, ডেভিড ওয়ার্নার, ফ্যাফ ডুপ্লেসি, জনি বেয়ারস্টো, হার্দিক পাণ্ড্য, কাগিসো রাবাডার মতো ক্রিকেটারকে নিয়ে তাই দু’দলের প্রথম রাউন্ডের লড়াই হতে পারে। ২০২২ নিলামের বাজনা বেজে গিয়েছে। হয়তো আইপিএলের শেষ নিলামের শিঙা ফোঁকাফুঁকি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy