Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Sambaran Banerjee

Sambaran Banerjee: প্রথম দিনেই ১৬ উইকেট! এমন পিচে খেলব কেন, লিখলেন সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

রাওয়ালপিন্ডির এই রকম পিচকে আইসিসি ‘বিলো অ্যাভারেজ’ বলেছিল। একটি ডিমেরিট পয়েন্টও পায় রাওয়ালপিন্ডি। চিন্নাস্বামীর এই বাইশ গজ তার চেয়েও খারাপ। আইসিসি ম্যাচ রেফারি জাভাগাল শ্রীনাথ নিশ্চয়ই সব কিছু দেখছেন। আমি নিশ্চিত, ম্যাচ রেফারির রিপোর্টে কড়া বার্তাই দেওয়া হবে। 

সফল: একা লড়লেন শ্রেয়স। হাফসেঞ্চুরির পরে বেঙ্গালুরুতে।

সফল: একা লড়লেন শ্রেয়স। হাফসেঞ্চুরির পরে বেঙ্গালুরুতে। ছবি পিটিআই।

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২২ ০৭:৪৭
Share: Save:

গত কয়েক দিনের ব্যবধানে অদ্ভুত দু’টো পিচ দেখলাম। দু’টোই টেস্ট ক্রিকেটকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। একটা পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে। অন্যটা ভারতের বেঙ্গালুরুতে। একটা নিষ্প্রাণ, শান বাঁধানো রাস্তার মতো উইকেট। অন্যটা, ‘আন্ডারপ্রিপেয়ার্ড’, ঘূর্ণি। সোজা কথায়, কোনওটাই টেস্ট খেলার উপযুক্ত নয়।

চিন্নাস্বামীতে দিনরাতের টেস্ট খেলতে নেমেছে ভারত। সাধারণত দিনরাতের পিচের ক্ষেত্রে দেখা যায়, উইকেটে একটু ঘাস থাকে। কারণ গোলাপি বলের পালিশটা একটু তাড়াতাড়ি উঠে যায়। বাড়তি ঘাসের আচ্ছাদন ওই পালিশটা ধরে রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু প্রথম দিন টসের সময় অবাক হয়ে দেখলাম, শুকনো, সাদাটে উইকেট। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, খুবই শুকনো। ভারতও দেখলাম, দলে তিন জন স্পিনার রেখেছে। আর অশ্বিন, রবীন্দ্র জাডেজার সঙ্গে বাঁ-হাতি স্পিনার হিসেবে দলে আছে অক্ষর পটেল। তখনই বোঝা যাচ্ছিল, উইকেট কী রকম আচরণ করবে, সেটা ভারতীয় দল খুব ভালই জানে।

শ্রীলঙ্কারও বুঝতে সমস্যা হয়নি। প্রথম আধঘণ্টার মধ্যেই স্পিনার নিয়ে আসে তারা। বাঁ-হাতি স্পিনার লাসিথ এমবুলডেনিয়ার প্রথম বলটাই প্রায় নব্বই ডিগ্রি ঘুরল। এবং, তার পর থেকে অসম লড়াই শুরু হল ভারতীয় ব্যাটারদের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার স্পিনারদের। বিরাট কোহলির বলটা তো ঘোরার সঙ্গে নিচুও হয়ে গেল। এই পিচে বল কখনও লাফিয়েছে, কখনও নিচু হয়েছে। কখনও বিশাল ঘুরেছে, কখনও অল্প। যত রকম ভাবে সম্ভব ব্যাটারদের পরীক্ষা নিয়েছে স্পিনাররা।

আর সেই পরীক্ষায় দারুণ ভাবে উত্তীর্ণ হয়ে গেল শ্রেয়স আয়ার। জীবনের প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি পাওয়ার পরেও শ্রেয়স সে ভাবে সুযোগ পায়নি। এ দিন ৯৮ বলে ৯২ রান করে গেল। যে ইনিংসটা আমার কাছে দেড়শোর চেয়েও বেশি দামি। বল ঘুরছে, লাফাচ্ছে, নিচু হচ্ছে। যেখানে স্পিনাররা ব্যাটারদের সর্বোচ্চ দক্ষতার পরীক্ষা নিচ্ছে। আর সেখানেই বাজিমাত করে দিল কলকাতা নাইট রাইডার্সের নতুন অধিনায়ক। এ রকম ঘূর্ণি পিচে চারটে বিশাল ছয় মারল শ্রেয়স। বিশেষ করে অফস্পিনার ধনঞ্জয় ডি’সিলভাকে। শ্রেয়সের সবচেয়ে শক্তি, ও সোজা খেলে। ছয়গুলোও মেরেছে মিডঅফ-মিডঅনের ওপর দিয়ে। শ্রেয়সের সঙ্গে ঋষভ পন্থও এ দিন খারাপ খেলছিল না। কিন্তু ঘূর্ণি পিচে ভিতরে ঢুকে আসা বল যে কাট করতে নেই, সেটা জানা উচিত ছিল ঋষভের। বাঁ-হাতি স্পিনারের বল বাঁ-হাতি ব্যাটারের ভিতরে এসে স্টাম্প নড়িয়ে দিল।

ভারতও নতুন বলে অশ্বিনকে আক্রমণে নিয়ে আসে। এর আগে ভারতের ঘূর্ণি পিচে নতুন বলে প্রচুর উইকেট নিয়েছে অশ্বিন। কিন্তু একেবারে প্রথম দিনেই অভিজ্ঞ অফস্পিনারকে দিয়ে বল শুরু করানো হচ্ছে, এ রকম ঘটনা মনে করতে পারছি না। তবে অদ্ভুত ভাবে ভারতীয় স্পিনাররা নয়, শ্রীলঙ্কার প্রথম চার উইকেট তুলে নিল ভারতীয় পেসাররা। দু’টো যশপ্রীত বুমরার। দু’টো মহম্মদ শামির। ভারতের ২৫২ রানের জবাবে শ্রীলঙ্কা দিনের শেষে ছয় উইকেটে ৮৬। এক দিনে পড়ল ১৬ উইকেট।

ঘরের মাঠে এই রকম পিচ বানানো হচ্ছে, আর ভারতীয় দল পরিচালন সমিতি কিছু জানে না, এটা ভাবা যাচ্ছে না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, অধিনায়ক রোহিত শর্মা আর কোচ রাহুল দ্রাবিড় কেন এ রকম পিচের ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দিল? প্রথম টেস্টে জিতে ভারত ইতিমধ্যেই ১-০ এগিয়ে। এই টেস্ট জিতলেই ঘরের মাঠে আরও একটা টেস্ট সিরিজ় ভারতের পকেটে। কিন্তু এই শ্রীলঙ্কা দলের বিরুদ্ধে কেন এ রকম পিচ বানানো হবে?

রাওয়ালপিন্ডির এই রকম পিচকে আইসিসি ‘বিলো অ্যাভারেজ’ বলেছিল। একটি ডিমেরিট পয়েন্টও পায় রাওয়ালপিন্ডি। চিন্নাস্বামীর এই বাইশ গজ তার চেয়েও খারাপ। আইসিসি ম্যাচ রেফারি জাভাগাল শ্রীনাথ নিশ্চয়ই সব কিছু দেখছেন। আমি নিশ্চিত, ম্যাচ রেফারির রিপোর্টে কড়া বার্তাই দেওয়া হবে। রাওয়ালপিন্ডি আর বেঙ্গালুরুর বাইশ গজ কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটের পক্ষে খারাপ বিজ্ঞাপন হয়েই থাকল।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE