Advertisement
E-Paper

কালবৈশাখী নয়, কোহলি-সল্ট ঝড়ে ইডেনে উড়ে গেল কলকাতা, প্রথম ম্যাচেই হার গত বারের চ্যাম্পিয়নদের

শনিবারের ইডেনে ঝড় এল বটে। তবে কালবৈশাখী নয়, কোহলি-সল্ট ঝড়। সেই ঝড়ে প্রথম ম্যাচেই উড়ে গেল অজিঙ্ক রাহানের কলকাতা। ৭ উইকেটে জিতল বেঙ্গালুরু।

cricket

ফিল সল্ট (বাঁ দিকে) এবং বিরাট কোহলি। ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫ ২২:৪৬
Share
Save

গত কয়েক দিন ধরেই জল্পনা চলছিল শনিবার আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচ নিয়ে। বৃষ্টি হবে কি না, হলে কখন হবে, ম্যাচ ভেস্তে যাবে কি না— ইত্যাদি বিভিন্ন প্রশ্ন শোনা যাচ্ছিল কান পাতলেই।

শনিবারের ইডেনে ঝড় এল বটে। তবে তা কালবৈশাখী নয়। কোহলি-সল্ট ঝড়। সেই ঝড়ে প্রথম ম্যাচেই উড়ে গেল অজিঙ্ক রাহানের কলকাতা। বিরাট কোহলি এবং ফিল সল্ট মিলে যে ইনিংসটা খেললেন প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে, সেটাই দীর্ঘ দিন পরে কলকাতার বিরুদ্ধে জেতাল বেঙ্গালুরুকে। ৭ উইকেটে জিতল বেঙ্গালুরু। তা-ও আবার ২২ বল বাকি থাকতে! শুধু হার নয়, রান রেটেও অনেকটা পিছিয়ে গেল কেকেআর।

ইডেনের আসা দর্শকদের রথ দেখা এবং কলা বেচা, দুটোই ভাল ভাবে হল। শাহরুখ খানের সঙ্গে কোহলির কোমর দোলানো যেমন দেখতে পেলেন, তেমনই ব্যাট হাতে কোহলির ম্যাচ জেতানো ইনিংসেরও সাক্ষী থাকা গেল। উপরি পাওনা শ্রেয়া ঘোষাল, করণ আউজলার গান এবং দিশা পটানির নাচ।

টসে হারেই ম্যাচে হার

কেমন একটা আলগোছে কয়েন উপরে তুললেন অজিঙ্ক রাহানে। ভাগ্য তাঁকে সঙ্গও দিল না। আরসিবি অধিনায়ক রজত পাটীদার স্বাভাবিক ভাবেই আগে বল করার সিদ্ধান্ত নিলেন। রাহানে জানালেন, তিনিও তাই করতেন। টস অনেকটাই ভাগ্য গড়ে দিল ম্যাচে। কারণ কেকেআরের ইনিংসের শেষ বেলা থেকেই শিশির পড়তে শুরু করল।

কেকেআরের ওপেনারেরা ব্যর্থ

গত বার কেকেআরের সাফল্যের নেপথ্যে একটা বড় কারণ ছিল ওপেনারদের ধারাবাহিক ভাবে রান করে যাওয়া। এ বারের আইপিএলের প্রথম ম্যাচেই ধাক্কা খেল ওপেনিং জুটি। কুইন্টন ডি’কক আগামী দিনে সল্টের জায়গা নেবেন কি না, সময় বলবে। তবে প্রথম ম্যাচে তিনি চূড়ান্ত ব্যর্থ। তৃতীয় বলে সূযশ শর্মা তাঁর লোপ্পা ক্যাচ না ফেললে তখনই ফিরে যান। পঞ্চম বলে আরসিবি উইকেটরক্ষক জিতেশ শর্মা অবশ্য ভুল করেননি। কেকেআরকে ছন্দে ফিরতে আগে কুইন্টনের ধারাবাহিক রান করা খুব প্রয়োজন।

রাহানে, নারাইনের উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স

কুইন্টন আউট হওয়ার পর আরসিবি যে রক্তের স্বাদ পেয়েছিল, তা কেড়ে নেন রাহানে এবং সুনীল নারাইন। দ্বিতীয় উইকেটে দু’জনের ১০৩ রানের জুটি না হলে অবস্থা আরও খারাপ হত কেকেআরের। রাহানে প্রথম ম্যাচেই দেখিয়ে দিয়েছেন, তিনি কী করতে পারেন। নেতৃত্ব তাঁর কাছে নতুন কিছু নয়। কিন্তু বাড়তি বোঝা কাঁধে না নিয়ে তিনি রানও করতে পারেন সেটা বোঝা গেল প্রথম ম্যাচে। প্রায় দুশোর কাছাকাছি স্ট্রাইক রেটে রান করলেন তিনি। যোগ্য সঙ্গ দিলেন নারাইন। ওপেনার হিসাবে তাঁর দাপট এখনও একই রকম রয়েছে।

ব্যর্থ ২৩.৭৫ কোটির বেঙ্কটেশ

নিলামের টেবিলে তাঁর জন্য কম লড়াই করেনি কেকেআর। প্রথম ম্যাচে তার প্রতিদান দিতে পারলেন না মধ্যপ্রদেশের ব্যাটার। ক্রুণাল পাণ্ড্য তাঁকে বোকা বানিয়ে আউট করলেন। খালি মাথায় ব্যাট করতে নামা বেঙ্কটেশকে বাউন্সার দিলেন। বেঙ্কটেশ হেলমেট পরতেই পরের বলটা করলেন উইকেটের সোজাসুজি। ঘুরিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হলেন বেঙ্কটেশ। প্রশ্ন উঠতেই পারে, এত দিন অনুশীলন করে কী হল তা হলে?

ক্রুণালের কৃপণ বোলিং

পুরনো চাল ভাতে বাড়ে। এই কথাটাই প্রযোজ্য ক্রুণালের ক্ষেত্রে। মুম্বই, লখনউ ঘুরে এখন তিনি বেঙ্গালুরুতে। কিন্তু বলের ধার এখনও কমেনি। ইডেনের পিচেও যে ভাবে গতির হেরফের ঘটিয়ে তিনি বল করলেন তা প্রশংসা করার মতোই। রাহানে, বেঙ্কটেশ এবং রিঙ্কু। কেকেআরের তিন আসল ব্যাটারকেই তুলে নিলেন তিনি। সোজা উইকেট লক্ষ্য করে বল করে গেলেন। তাতেই সাফল্য। আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে ঠকলেন বেঙ্কটেশ এবং রিঙ্কু। চার ওভারে মাত্র ২৯ রান দিলেন।

শেষ পাঁচ ওভারে ২৯ রান

রাহানে-নারাইন যে ভিত গড়ে দিয়েছিলেন, তাতে অনায়াসে কেকেআরের রান দুশো পেরিয়ে যাওয়ার কথা। সেই কাজ করতেই পারলেন না ব্যাটারেরা। পর পর উইকেট পড়তে থাকায় রানের গতি কমে গেল। রমনদীপ সিংহ শেষ দিকে নেমে কী করে ৯ বলে ৬ রান করলেন তিনিই জানেন। আক্রমণ ছাড়া যেখানে অন্য কোনও বিকল্প ছিল না, সেখানে তিনি মারার সঠিক বল খুঁজতে খুঁজতেই ইনিংস শেষ হয়ে গেল। শেষ দু’ওভারে কেকেআর তুলল মাত্র ৬ রান।

সল্ট-কোহলি তাণ্ডব

ইডেনে ৬৬ হাজার দর্শক যে জিনিসটা চাইছিলেন, ঠিক সেটাই হল। ম্যাচ শুরুর আগে কোহলির সঙ্গে শাহরুখ খানের নাচও দেখা গেল। ব্যাট হাতে কোহলির তাণ্ডবও প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হল। কার বুদ্ধিতে, কোন যুক্তিতে সল্টকে ছাড়া হল তার উত্তর পেতে মাথা চুলকোতে পারেন বেঙ্কি মাইসোরেরা। আইপিএলের নিলাম কোনও যুক্তি মানে না ঠিকই। তবে যিনি ব্যাট হাতে গত মরসুমে কেকেআরকে এত কিছু দিয়েছেন, তাঁকে ছাড়ার সাহস দেখানো হয় কোন যুক্তিতে? ভুল করলে ভুগতে হবে। সেটাই হল কেকেআরের ক্ষেত্রে।

কেন পাওয়ার প্লে-তে বৈভব?

কেকেআরের দল পরিচালন সমিতি ভাল ভাবেই জানত তাদের আসল বোলার হর্ষিত, স্পেন্সার জনসন এবং বরুণ চক্রবর্তী। তা হলে কোন যুক্তিতে পাওয়ার প্লে-তে বৈভব অরোরাকে নিয়ে আসা হল? শুরুতে বৈভব যে ভাবে মার খেলেন, সেটাই আরসিবিকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলল। একই সঙ্গে কেকেআরের মেরুদণ্ড ভেঙে দিল। ওখানে হর্ষিত এলে নিশ্চিত ভাবেই কম রান দিতেন। কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত এবং মেন্টর ডোয়েন ব্র্যাভো কী কৌশল নিলেন সেটা তাঁরাই বলতে পারবেন।

এবং কোহলি

মাঠের মধ্যে শ্রেয়ার গান বা দিশার নাচের সময় মাঝেমাঝেই ক্যামেরা ধরছিল কোহলিকে। অন্ধকারের মধ্যেও বোঝা যাচ্ছিল বেশ খোশমেজাজে রয়েছেন। শাহরুখ তাঁকে মঞ্চে ডেকে নেওয়ার সময় হাসতে হাসতেই উঠলেন। এমনকি ‘বাদশা’র সঙ্গে নাচের সময়ও একই রকম সপ্রতিভ। কে জানত, কেকেআরের জন্যও তিনি কয়েক ঘণ্টা পরে দুঃসংবাদ নিয়ে আসবেন। ইডেন বরাবরই তাঁর প্রিয় মাঠ। খুব একটা খালি হাতে ফেরায় না। আইপিএলের শুরুর দিনেও ফেরাল না। আগাগোড়া আগ্রাসী খেলে ম্যাচ জিতিয়ে দিলেন। সল্ট আউট হওয়ার পর রান তোলার দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে নিলেন। আর তিনি কোনও কাজ ফেলে আসেন না।

KKR vs RCB IPL Virat Kohli Phil Salt Sunil Narine

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}