আলোচনা: ভারতীয় দলের অনুশীলনের ফাঁকে অধিনায়ক রোহিত ও কোচ রাহুল। —ফাইল চিত্র।
রোপওয়েতে কৈলাসগিরি পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে মাথাপিছু খরচ ১০০ টাকা। ২ ফেব্রুয়ারি ভারত-ইংল্যান্ড টেস্টের প্রথম দিন থেকে সেই ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হল আরও ২০ টাকা। কারণ, পাহাড়ের চূড়া থেকে পরিষ্কার দেখা যায় এডিএ-ভিডিসিএ স্টেডিয়াম। সেখানে বসে ম্যাচ উপভোগ করার মজা অন্য রকম। এক দিকে মাঠ। অন্য দিকে সমুদ্র। মাথা থেকে নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা কখন যে উধাও হয়ে যাবে, টের পাওয়া যায় না।
আইপিএল ম্যাচ থাকলে রোপওয়ের ভাড়া বেড়ে দাঁড়ায় ৫০০ টাকা। কারণ, ক্রিকেটের সঙ্গে বিনোদনও যে মিশে থাকে ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি লিগে। টেস্ট ম্যাচ নিয়ে বিশাখাপত্তনমের মানুষদের মধ্যে আগ্রহ নেই বললেই চলে। টিকিটও তাই বিক্রি করা হচ্ছে ১০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। সিজ়ন টিকিট ৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা।
টিকিটের দাম এত কমানোর পরেও অন্ধ্রপ্রদেশ ক্রিকেট সংস্থার সচিব গোপীনাথ রেড্ডি মনে করেন, মাঠ খুব একটা ভরবে না। তাই নর্থ স্ট্যান্ড ছাড়া আপার টিয়ারের কোনও টিকিটই বিক্রি করা হচ্ছে না। প্রথম দিন যদি লোয়ার টিয়ারের আসনগুলো ভরে যায়, তবেই বিক্রি শুরু হবে উপরের দিকের গ্যালারির টিকিট। মাঠ ভরে ওঠার একটাই সম্ভাবনা, যদি প্রথম দিন ভারত ভাল জায়গায় থাকে।
ব্রেন্ডন ম্যাকালামের মস্তিষ্ক থেকে উদ্ভাবিত বাজ়বল ক্রিকেটকে টেক্কা দেওয়ার পরীক্ষা। প্রথম ম্যাচে প্রথাগত টেস্ট খেলতে গিয়ে ১৯০ রানে এগিয়ে থেকেও ০-১ পিছিয়ে গিয়েছে ভারত। এ বার কি তা হলে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট-দর্শন রপ্ত করেই বিপক্ষকে হারানোর পরিকল্পনা? ব্যাটিং কোচ বিক্রম রাঠৌর বলে গেলেন, ‘‘আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলার নির্দেশ দেওয়া হয় না। যার যেটা স্বাভাবিক, তাকে ঠিক সেটাই করতে বলা হয়।’’
কিন্তু তাঁর কথার সঙ্গে মিলল না অনুশীলনের চিত্র। যশস্বী জয়সওয়াল থেকে রোহিত শর্মা। শুভমন গিল থেকে ওয়াশিংটন সুন্দর। এমনকি রজত পাটীদার, সরফরাজ় খানরাও সুইপ ও রিভার্স সুইপের মহড়ায় মেতে উঠলেন। স্পিনারকে পিচের বিপজ্জনক জায়গায় বল ফেলার সুযোগ দিতে চাইলেন না কেউ। শুধুমাত্র আর. অশ্বিন, কে এস ভরত ও কুলদীপ যাদবকে খুব একটা সুইপ মারতে দেখা গেল না। স্টেপ আউট করেই স্পিনারদের সামলানোর চেষ্টা করছিলেন তাঁরা।
হায়দরাবাদে অলি পোপ যে রিভার্স স্কুপ মেরে বিস্মিত করেছেন, নেটে এ দিন সেই শট মারতে দেখা গেল ভারত অধিনায়ককেও। রাঠৌর যদিও বলছিলেন, ‘‘রিভার্স সুইপ মাঠে গিয়ে হঠাৎ মারা যায় না। যে কোনও শট প্রয়োগ করতে হলে তা নিয়মিত অনুশীলন করতে হয়।’’ ভারতীয় ক্রিকেটারেরা সেই অনুশীলনেই ডুবে ছিলেন বুধবার।
হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের সামনে শুধুমাত্র বাজ়বলকে টেক্কা দেওয়ারই পরীক্ষা নয়। রবীন্দ্র জাডেজা ও কে এল রাহুলের যোগ্য পরিবর্তও খুঁজতে হবে তাঁকে। স্পিন বিভাগে কুলদীপ যাদবের খেলার সম্ভাবনা বাড়ছে। এ দিন নেটে সবার আগে ব্যাট করতে পাঠানো হয় তাঁকে। প্রায় আধ ঘণ্টা ব্যাট করেন স্থানীয় বোলারদের বিরুদ্ধে। দ্রুত উইকেট পড়ে গেলে ব্যাট হাতে তাঁকেও গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলার দায়িত্ব নিতে হতে পারে।
বিপক্ষের উইকেট দ্রুত তুলতে গেলে কুলদীপ যোগ্য পরিবর্ত। কিন্তু জাডেজার অনুপস্থিতি কি শুধুমাত্র বোলার দিয়ে পূরণ করা যায়? তিনি না থাকা মানে এক জন বাঁ-হাতি স্পিনার ও মাঝের সারির ব্যাটসম্যানেরও অনুপস্থিতি। তা কী করে মেটাবেন রোহিত? ওয়াশিংটন সুন্দরের প্রতি তাই গুরুত্ব দেওয়া হয় নেটে। রোহিত, যশস্বী, শুভমনের পরেই ব্যাট করতে পাঠানো হয় তাঁকে। সামনে দাঁড়িয়ে ব্যাটিং দেখেন দ্রাবিড়। পরে অধিনায়ক রোহিত তাঁকে আলাদা নিয়ে ডেকে এক কোণে নিয়ে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ আলোচনা করেন। তার পরেই বল হাতে তুলে নেন তামিলনাড়ুর অলরাউন্ডার। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২০২১ সালে আমদাবাদের ঘূর্ণি পিচে অপরাজিত ৯৬ রানের ইনিংস রয়েছে ওয়াশিংটনের। সেই পরিসংখ্যান নিশ্চয়ই স্মৃতিতেই রয়েছে রোহিতের।
ছন্দ হারানো শুভমন গিলকে ব্যাট করানো হয় এক ঘণ্টা। শুরুর দিকে শুধুমাত্র ব্যাটের মাঝে বল লাগাচ্ছিলেন। ধীরে ধীরে সুইপ ও রিভার্স সুইপের মহড়া শুরু হয় তাঁর। রজত পাটীদার ও সরফরাজ় খানও আধ ঘণ্টা করে ব্যাট করেন। কিন্তু গুরুত্ব বেশি দেওয়া হয় পাটীদারকেই। ছয় নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে নেটে ঢোকেন তিনি। পাটীদার ব্যাট করার সময় বল করছিলেন কুলদীপ যাদব, মুকেশ কুমার, ওয়াশিংটন ও সৌরভ কুমার। নেটের পেছনে গিয়ে রজতের ব্যাটিংয়ে নজর রাখছিলেন দ্রাবিড়। কোচের বিশেষ নির্দেশ পাওয়ার পরে তাঁকে দেখা যায় স্টেপ আউট করে স্পিনের মোকাবিলা করতে। তা হলে কি রাহুলের পরিবর্ত হিসেবে তাঁকেই বেছে নেওয়া হতে পারে?
যদিও সবচেয়ে আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়ে ব্যাট করলেন সরফরাজ়। একটি বলেও পরাস্ত হননি। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সুইপ ও রিভার্স সুইপ মারছিলেন। প্রবীণ আমরে, হরভজন সিংহের মতো প্রাক্তনরা তাঁকে খেলানোর পরামর্শ দিলেও অনুশীলনে তেমন গুরুত্ব পেলেন না সরফরাজ়। সংবাদমাধ্যমের চোখে ধুলো দেওয়াও হতে পারে। ইংল্যান্ড যে হেতু সব রকম পরিকল্পনা করে নামছে, তাই সরফরাজ়কে ‘সারপ্রাইজ়’ হিসেবে রাখা হল।
পিচ নিয়ে দু’দলই বেশ দ্বিধায়। বিক্রম রাঠৌর বলে গেলেন একেবারেই ঘূর্ণিমঞ্চ। ইংল্যান্ডের জ়্যাক ক্রলি ধোঁয়াশায়। কারণ, বাইশ গজে তিনি নজরই রাখেননি।
মনে করিয়ে দেওয়া যাক, শেষ তিন দিন কিন্তু পিচে জল পড়েনি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy