(বাঁদিকে) ঋষভ পন্থ এবং সরফরাজ় খান। ছবি: বিসিসিআই।
সরফরাজ় খান এবং ঋষভ পন্থের ১৭৭ রানের জুটি। মুম্বইকরের ব্যাট থেকে এল ১৫০ রানের ইনিংস। দিল্লির উইকেটরক্ষক-ব্যাটারের শতরান হাতছাড়া হল মাত্র ১ রানের জন্য। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের ২২ গজে দুই তরুণের লড়াই টেস্ট ক্রিকেটের মৃতসঞ্জীবনী হিসাবে চিহ্নিত হতে পারে। রোহিত শর্মার দল প্রথম টেস্টে নিউ জ়িল্যান্ডকে হারাতে পারবেন কি না, তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তবে ম্যাচের প্রথম ২৫ ওভারে ভেন্টিলেশনে চলে যাওয়া টেস্টের হৃৎস্পন্দন ফিরিয়ে এনেছেন সরফরাজ় এবং পন্থ।
প্রথম ইনিংসে ৪৬ রানে অল আউট হয়ে এবং পরে ৩৫৬ রানে পিছিয়ে থাকা একটা দল প্রতিপক্ষকে জেতার জন্য ১০৭ রানের লক্ষ্য দিয়েছে। যা প্রমাণ করে, হারার আগে হাল ছাড়তে নারাজ রোহিতের দল। দু’দলের প্রথম ইনিংস শেষ হওয়ার পর রোহিতদের পরিস্থিতিতে পড়লে অনেক দলই হয়তো চাপে কুঁকড়ে যেতে পারে। ভারতের এই দলের মানসিকতা অন্য রকম। ম্যাচের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রতিপক্ষকে চাপে রাখার চেষ্টা করে। পাহাড়প্রমাণ চাপের মুখে রুখে দাঁড়াতে পারে। প্রতিপক্ষকে নিশ্চিন্তে থাকতে দেয় না। বরং চাপে রাখে। রোহিত ব্যাট হাতে ৫২ রান করে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। বিরাট কোহলি এমন কঠিন পরিস্থিতিতে ৭০ রান করে ফর্মে ফেরেন। প্রথম একাদশে অনিয়মিত সরফরাজ় ১৫০ রানের ইনিংস খেলে দেন। হাঁটুতে চোট পাওয়া, অস্ত্রোপচার হওয়া পন্থের ৯৯ রানের অদম্য লড়াই প্রতিপক্ষকে পাল্টা চাপে ফেলে দেয়। লোকেশ রাহুল (১২), রবীন্দ্র জাডেজা (৫), রবিচন্দ্রন অশ্বিনেরা (১৫) ব্যাট হাতে খানিকটা সময় ২২ গজে কাটাতে পারলে সফরকারীদের সমস্যায় ফেলে দেওয়া যেতে পারত।
ব্যাট করার সময় সরফরাজ়, পন্থদের দেখে মনেই হচ্ছিল না, তাঁরা ম্যাচ বাঁচানোর জন্য ব্যাটিং করছেন। সহজ, সাবলীল, আগ্রাসী ক্রিকেট। টিম সাউদিকে হাঁটু মুড়ে মারা পন্থের সুইপ স্টেডিয়ামের চালে গিয়ে পড়ার পর বিস্মিত হন ২২ গজের অপর প্রান্তে থাকা রাহুল। বিস্মিত হন নিউ জ়িল্যান্ডের ক্রিকেটারেরাও। এই পন্থই নাকি হাঁটুতে চোট পাওয়ায় উইকেট রক্ষা করতে পারছেন না! পন্থ নিশ্চিত শতরানটা মাঠে ফেলে এলেন ১০৫ বলে ৯৯ রান করে। ৯টি চার এবং ৫টি ছক্কা দিয়ে সাজানো তাঁর ইনিংসে ছিল প্রতিপক্ষকে কৌশলগত ভাবে বিপর্যস্ত করে দেওয়ার মানসিকতা। সরফরাজ় ১৯৫ বলে ১৫০ রানের ইনিংস খেলে বুঝিয়ে দিলেন রোহিত-কোহলি পরবর্তী সময়েও ভারতীয় ব্যাটিংয়ের কাঁধ চওড়াই থাকবে। ১৮টি চার এবং ৩টি ছক্কায় সাজানো ইনিংসে টেস্টের চিরাচরিত ঠুকঠুকে ব্যাপার নেই। ভাল বলকে যেমন সমীহ করেছেন, তেমন খারাপ বলকে মাঠের বাইরে পাঠাতে দ্বিধায় ভোগেননি। হলেনই বা প্রথম একাদশে অনিয়মিত! ধারাবাহিকতার অভাব নেই সরফরাজ়ের। একটা সময় পর্যন্ত তাঁকে নির্বাচন করা নিয়ে দ্বিধা ছিল জাতীয় নির্বাচকদের। ২৬ বছরের তরুণের ব্যাটিং দ্বিধাহীন। প্রবল চাপের মুখেও সাবলীল। নিউ জ়িল্যান্ডের সফলতম বোলার উইলিয়াম ও’রকি ৩ উইকেট পেয়েছেন ৯২ রান খরচ করে। ম্যাট হেনরি ৩ উইকেট পেয়েছেন ১০২ রান খরচ করে। সরফরাজ়-পন্থ জুটির সামনে তাঁদের খানিকটা অসহায়ই দেখিয়েছে।
ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস ৪৬২ রানের শেষ হওয়ার পর জয়ের জন্য নিউ জ়িল্যান্ডের প্রয়োজন ১০৭ রান। পুরো রানটাই তুলতে হবে ম্যাচের পঞ্চম দিন। জয় ছিনিয়ে নিতে রবিবার ভারতের দরকার ১০ উইকেট। নিউ জ়িল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে চার বল হওয়ার পরই খারাপ আলোর জন্য খেলা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন আম্পায়ারেরা। কয়েক মিনিট পরই বৃষ্টি শুরু হয়। দিনের খেলা শেষ করতে বাধ্য হন তাঁরা। যদিও খেলা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত খুশি করতে পারেনি ভারতীয় শিবিরকে। রোহিত, বিরাটেরা আপত্তি জানান। তাঁদের অসন্তুষ্ট দেখিয়েছে। আম্পায়ারদের সঙ্গে হালকা বাদানুবাদে জড়িয়েছেন। সেই উত্তাপে জল ঢেলে দিয়েছে বৃষ্টি। পরতে পরতে রং বদলানো টেস্টের ফলাফলেও কি জল ঢালবে বৃষ্টি? দু’দলেরই চোখ আকাশের দিকে।
সব কিছু ঠিক থাকলে বাকি দায়িত্বটা যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ সিরাজ, কুলদীপ যাদবদের। বেঙ্গালুরুর পঞ্চম দিনের পিচে দুই তরুণের লড়াইয়ের দাম দিতে পারবেন ভারতের বোলারেরা?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy