জুটি: এশিয়া কাপে অধিনায়ক রোহিতের অন্যতম ভরসা হয়ে উঠতে পারবেন প্রাক্তন নেতা বিরাট? ফাইল চিত্র।
শনিবার থেকে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে শুরু হতে চলেছে এশিয়া কাপ। ২৮ তারিখ মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান। সম্প্রচারকারী চ্যানেল স্টার স্পোর্টসে ধারাভাষ্য দিতে দেখা যাবে বিখ্যাত ‘শ্যাজ়-ওয়াজ়’ জুটিকে। অর্থাৎ, রবি শাস্ত্রী এবং ওয়াসিম আক্রমকে। মঙ্গলবার ভিডিয়ো কলে আসন্ন ক্রিকেট মহারণ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে যা যা বললেন শাস্ত্রী এবং আক্রম...
ভারত-পাক দ্বৈরথ
রবি শাস্ত্রী: ভারত-পাকিস্তান লড়াই মানেই একটা অন্য ম্যাচ। ক্রিকেটারদের কাছেও। তবে চাপটা কিন্তু আসে বাইরে থেকে। যেখানেই যাবেন, ভারত-পাক ম্যাচ নিয়ে কথা চলবে। তাই বাইরে কী হচ্ছে না হচ্ছে, ভুলে গিয়ে নিজের খেলাটার উপরে জোর দিতে হবে। পাকিস্তান বলে চাপ নিলে চলবে না। এখন গণমাধ্যমের ব্যাপারটাও আছে। তাই ম্যাচের দু’দিন আগে এবং এক দিন পরে গণমাধ্যম থেকে দূরে থাকতে হবে।
ওয়াসিম আক্রম: ভারত-পাক দ্বৈরথের আগে সমর্থকদের একটা কথা বলতে চাই। ভুলে যাবেন না এটা কিন্তু আর একটা ক্রিকেট ম্যাচ। কেউ জিতবে, কেউ হারবে। ম্যাচটা যদি দারুণ জমে যায়, তা হলেই সবার খুশি হওয়া উচিত।
বিরাট কোহলির ফর্ম
শাস্ত্রী: আমার সঙ্গে বিরাটের কথা হয়নি। কিন্তু জানি, বিশ্রাম নিয়ে তরতাজা হয়ে মাঠে ফিরতে তৈরি ও। মাঠের বাইরে যে সময়টা ও পেয়েছে, তাতে নিঃসন্দেহে ভেবেছে কী করা উচিত ছিল, এখন কী ভাবে খেলা উচিত। আমি নিশ্চিত, বিরাট অত্যন্ত শান্ত মনে খেলতে নামবে। আর প্রথম ম্যাচে হাফসঞ্চুরি পুরো ছবিটা বদলে দিতে পারে। সবার মুখ বন্ধ করে দেবে। বিরাটকে শান্ত মনে খেলতে হবে। ও নিঃসন্দেহে সেরা ফর্মে ফিরবে। বলে দিচ্ছি, বিরাট কিন্তু ক্ষুধার্ত।
আক্রম: প্রথমেই বলি, ভারতীয় সমর্থকদের বিরাটের সমালোচনা করার কোনও মানে হয় না। ও সর্বকালের অন্যতম সেরা। বিরাটের বয়স এখন ৩৩। ওর মতো ফিট ক’জন! সেই চিরাচরিত কথাটা মনে পড়ে যাচ্ছে। ফর্ম সাময়িক, কিন্তু জাতটা চিরকালীন। আমি নিশ্চিত ও ফিরে আসবে। (হাসতে হাসতে) আমি শুধু চাইব, পাকিস্তানের সঙ্গে যাতে রানটা না করে বিরাট।
বাবর-বিরাট তুলনা
আক্রম: এই তুলনাটা ওঠা স্বাভাবিক। অতীতে সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে ইনজ়ামাম-উল-হকের হত। সুনীল গাওস্করের সঙ্গে জাভেদ মিয়াঁদাদের হত। বাবরের টেকনিক খুব ভাল বলে ও এত ধারাবাহিক। ও ঠিক রাস্তাতেই যাচ্ছে। কিন্তু বিরাটের সঙ্গে বাবরের এখনই তুলনা করার সময় আসেনি।
দু’দলের অবস্থান
শাস্ত্রী: ভারত এখন শুরুতে যে আগ্রাসী ক্রিকেটটা খেলছে, সেটাই খেলা উচিত। আমি কোচ থাকার সময় এক বার ড্রেসিংরুমে আলোচনা করেছিলাম যে, আমাদের শুরুটা সে রকম দাপটের সঙ্গে হচ্ছে না। ভারতীয় দলে এখন অনেক বিধ্বংসী ক্রিকেটার আছে। যেমন ঋষভ পন্থ, হার্দিক পাণ্ড্য, রবীন্দ্র জাডেজা। তাই শুরুতে ও রকম আগ্রাসী মানসিকতা দেখানো যেতেই পারে। শুরুতে বাড়তি ঝুঁকি নেওয়া যেতেই পারে।
আক্রম: গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতকে হারানোর পরে পাকিস্তানের মানসিকতা বদলে গিয়েছে। ওই ম্যাচের পরে পাকিস্তান বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে, বিশ্বমঞ্চে ভারতকে হারানোর ক্ষমতা ওদের আছে। তবে পাকিস্তানের এই দলটার একটা ব্যাপার নিয়ে চিন্তায় আছি। মাঝের সারির ব্যাটিং। সে রকম কোনও অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান নেই বাবরদের হাতে।
শাহিন আফ্রিদির না থাকা
আক্রম: শাহিনের অভাব ভীষণ ভাবে টের পাবে পাকিস্তান। ও নতুন বলে উইকেট নেয়। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে রান ওঠার গতি আটকাতে গেলে উইকেট নিতে হবে। শাহিন সেটাই করে। উল্টো দিকে কে আছে না দেখে স্টাম্পে আক্রমণ করে যায়। শাহিন না থাকা মানে পাকিস্তান বোলিং আক্রমণে সবাই ডান হাতি পেসার। কোনও বৈচিত্র থাকছে না।
শাস্ত্রী: ভারত যে সব ম্যাচ হেরেছে, তার অনেকগুলোর পিছনেই কিন্তু বিপক্ষের বাঁ-হাতি পেসারের অবদান আছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালে মহম্মদ আমির, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শাহিন। আবার কখনও বা ট্রেন্ট বোল্ট সংহারক হয়েছে। বাঁ-হাতি পেসাররা দু’-তিন ওভারে খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারে। ১৯৯২ বিশ্বকাপ ফাইনালে ওয়াসিম আক্রম করে দেখিয়েছিল। ২০১৫ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক প্রথম ওভারেই ব্রেন্ডন ম্যাকালামের স্টাম্প ছিটকে দিয়ে নিউজ়িল্যান্ডের স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দেয়। বাঁ-হাতি থাকা মানেই বোলিং আক্রমণে বৈচিত্র আসা।
দু’দলের প্রধান অস্ত্র
আক্রম: ভারতীয় দলে অনেকেই আছে। রোহিত শর্মা, কে এল রাহুল, কোহলি। তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এই মুহূর্তে আমার পছন্দের ক্রিকেটার হল সূর্যকুমার যাদব। সূর্যকে প্রথম দেখি কলকাতা নাইট রাইডার্সে। তখন বেশ কয়েকটা দারুণ ইনিংস খেলেছিল। আর ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর থেকে তো চোখ ধাঁধানো ব্যাটিং করছে। অফ-মিডল স্টাম্পে সরে গিয়ে লেগসাইডে সূর্য একটা ফ্লিক শট মারে। ওই রকম শট খেলা প্রচণ্ড কঠিন। কিন্তু ও খুব স্বাভাবিক ভাবেই শটটা খেলে। ও খুব বিপজ্জনক ব্যাটসম্যান। সূর্যকে ৩৬০ ডিগ্রি ব্যাটসম্যান বলাই যায়। উইকেটের যে কোনও দিকে শট খেলতে পারে। পেস-স্পিন দু’ধরনের বোলিংয়ের বিরুদ্ধেই সাবলীল। আর পাকিস্তানের সেরা অস্ত্র হল বাবর-রিজ়ওয়ান। ওরা কিন্তু পিঞ্চ হিটার নয়। পিঞ্চ হিটারদের আউট করার সুযোগ পাওয়া যায়। রাহুল-রোহিতের মতো বাবর-রিজ়ওয়ানও টেকনিক্যালি খুব ভাল। আউট হওয়ার সুযোগ দেয় না। ভাল বলেও শট খেলে। তাই ভারতকে ওদের নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
হার্দিক পাণ্ড্যের উপস্থিতি
শাস্ত্রী: হার্দিক হল ভারতীয় দলটার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। ও না খেললেই ভারসাম্য নষ্ট হবে। তখন হয় এক জন বাড়তি বোলার বা বাড়তি ব্যাটসম্যান খেলাতে হবে। গত বছর বিশ্বকাপে হার্দিক বল করতে পারেনি। যেটা আমাদের ভীষণ ভুগিয়েছিল। আর ওই জায়গায় খেলার মতো হার্দিকের বিকল্প কোনও ক্রিকেটারই নেই। ওকে নিয়ে খুব সতর্ক থাকতে হবে। বিশ্বকাপের আগে বেশি ম্যাচ খেলতে গিয়ে চোট না পেয়ে যায়।
এশিয়া কাপ কে জিতবে
শাস্ত্রী: এ বার দারুণ একটা প্রতিযোগিতা হতে চলেছে। আমরা ভারত-পাকিস্তানের কথা বলছি ঠিকই, কিন্তু মনে রাখতে হবে, এশীয় ক্রিকেট এখন খুবই শক্তিশালী। শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ বা আফগানিস্তানকে হাল্কা ভাবে নেওয়ার প্রশ্নই নেই। একটা টস হারা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। ফেভারিট অবশ্যই ভারত-পাকিস্তান। কিন্তু এই ফর্ম্যাটে যে কোনও দল যে কাউকে হারানোর ক্ষমতা রাখে।
আক্রম: ঠিক। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে কী হবে, বলতে পারব না। তবে ‘শ্যাজ়’-এর মতোই বলব, দলগুলোর মধ্যে পার্থক্য কমে আসছে। শ্রীলঙ্কা খুবই বিপজ্জনক দল। বাংলাদেশকে আমি ইদানীং সে ভাবে দেখিনি। আফগানিস্তানের হাতেম্যাচ জেতানো বোলার আছে। এমন সব ব্যাটসম্যান আছে যারা আউট হতে ভয় পায় না। মনে হচ্ছে এ বারই সেরা এশিয়া কাপ দেখতে যাচ্ছি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy