কিংবদন্তি: ডনের রেকর্ড এখনও ক্রিকেট বিশ্বের বিস্ময়। ফাইল চিত্র
নেভিল কার্ডাস বলেছিলেন, ‘‘স্কোরবোর্ড একটা গাধা।’’ কার্ডাসের বক্তব্য ছিল, শুধু স্কোরবোর্ড দেখেই কাউকে বিচার করা ঠিক নয়। পরিসংখ্যান একটা মাপকাঠি হতে পারে, কিন্তু কখনওই চূড়ান্ত বিচার করতে পারে না।
এক জন ক্রিকেটার, যাঁকে সব সময় পরিসংখ্যান তাড়া করে বেরিয়েছে, তাঁর নাম স্যর ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান। রানমেশিন ছিলেন ব্র্যাডম্যান। তিনি যে সব রেকর্ড গড়েছেন, তা কখনও হারিয়ে যাবে না। পরিসংখ্যানের দিক দিয়ে দেখলে ব্র্যাডম্যান এক অন্যন্য উচ্চতায় দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর টেস্ট ক্রিকেটের পরিসংখ্যানে চোখ রাখলে বিস্মিত হওয়া ছাড়া উপায় নেই। মাত্র ৫২ টেস্টে ৬৯৯৬ রান করেছিলেন। ৮০ ইনিংসে গড় ৯৯.৯৪।
ব্র্যাডম্যানের কোনও কোনও সমালোচক বোঝাতে চেয়েছেন, পরিসংখ্যানে ডনকে যতটা ভাল দেখায়, বাস্তবে তিনি ততটা নন। তবে যারা ওঁর দিকে কাদা ছুড়তে গিয়েছে, তাদের গায়েই নোংরা লেগেছে। তবে এ সব সত্ত্বেও ব্র্যাডম্যান এবং পরিসংখ্যান ঘিরে কিছু হাস্যকর কথাবার্তা উঠে আসে। ক্রিকেট ইতিহাসে এমন এক জন ক্রিকেটার আছেন, যাঁর গড় ব্র্যাডম্যানের থেকে ভাল! অবাক করার মতো ঘটনা হলেও এটা সত্যি।
ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের ত্রিনিদাদের এক জন ক্রিকেটার ছিলেন, যাঁর নাম অ্যান্ড্রিউ জর্জ গন্তিউম (১৯২১-২০১৬)। তাঁর টেস্ট গড় ছিল ১১২! কী ভাবে এটা সম্ভব হল? ১৯৪৮ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠ, পোর্ট অব স্পেনে টেস্ট খেলার জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে নির্বাচিত হন গন্তিউম। ওই টেস্টের একমাত্র ইনিংসে ওপেন করতে নেমে তিনি ১১২ করেছিলেন। এর পরে উইকস, ওরেল, ওয়ালকটরা ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান প্রায় পাঁচশোয় নিয়ে যান। দ্বিতীয় ইনিংসে আর ব্যাট করার সুযোগ পাননি গন্তিউম। শুধু তাই নয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে কখনওই আর ব্যাট করার সুযোগ পাননি তিনি। ১৯৫৭ সালে ইংল্যান্ড সফরে গিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু ওরেলদের সঙ্গে গ্যারি সোবার্স, রোহন কানহাইরাও এসে যাওয়ায় গন্তিউম বাইরেই থেকে যান।
গন্তিউমের সুযোগ না পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গিয়েছে। তাঁর গায়ের রঙের জন্যই কি বাদ পড়তে হয়েছিল তাঁকে? ওই সময় খেলে যাচ্ছিলেন জন গডার্ড, রবার্ট ক্রিশ্চিয়ানির মতো সাধারণ মানের ক্রিকেটারেরা। তাঁরা শ্বেতাঙ্গ ছিলেন। প্রশ্ন ওঠে, তা হলে গন্তিউম কেন আর সুযোগ পেলেন না? ১৫ বছর ধরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলে গিয়েছেন গন্তিউম, কিন্তু আর কোনও দিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের জার্সিতে মাঠে নামতে পারেননি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোনও লেখক এ নিয়ে সে রকম কোনও গবেষণাও করেননি।
ব্র্যাডম্যান আর গন্তিউমের মধ্যে পরিসংখ্যানের তুলনাটা করে আমি বোঝাতে চেয়েছি, দু’জনকে কখনওই এক আসনে বসানো যায় না। তা সত্ত্বেও শুধু পরিসংখ্যানের বিচারে গন্তিউমের ব্যাটিং গড় ব্র্যাডম্যানের চেয়ে বেশি। সাধে কী আর কার্ডাস মনে করতেন, স্কোরবোর্ড একটা গাধা।
এ বার আসা যাক টেস্ট ক্রিকেটের সবচেয়ে সফল বোলারের কথায়। তাঁর নাম হল জর্জ অ্যালফ্রেড লোম্যান (১৮৬৫-১৯০১)। ইংল্যান্ডের সারের এক মিডিয়াম পেস বোলার। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এ রকম কম গুরুত্ব বোধ হয় আর কোনও বোলারকে দেওয়া হয়নি। অথচ ১৮ টেস্টে ১১২ উইকেটের মালিক ছিলেন লোম্যান। ওঁর টেস্টের বোলিং গড় ১০.৭৫। যা আজ পর্যন্ত কোনও বোলার ছুঁতে পারেনি। এমনকী ওর ২৪ ডেলিভারি পিছু একটা উইকেটের স্ট্রাইক রেট অন্যান্য বিশ্বখ্যাত বোলারদের চেয়ে ভাল।
ক্রিকেট রূপকথায় জায়গা করে নিয়েছে লোম্যানের এই কীর্তি। আধুনিক ক্রিকেটের কোনও মহান বোলারই লোম্যানের বোলিং গড় বা স্ট্রাইক রেটের কাছাকাছি আসতে পারেনি। ভারতীয় ক্রিকেট মহলে লোম্যানের নাম আর ক’জন মনে রেখেছে। আর এই লোম্যানের পরিসংখ্যানকেই টপকে গিয়েছে এক জন সাধারণ মানের বোলার, চার্লস স্টোয়েল ম্যারিয়ট (১৮৯৫-১৯৬৬)। ঠিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের গন্তিউমের মতোই ম্যারিয়ট ১৫ বছরের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট জীবনে একবারই ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। ১৯৩৩ সালের ওভালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে এই লেগস্পিনার দু’ইনিংসে পেয়েছিলেন ৬-৫৯ এবং ৫-৩৭। ওঁর অভিষেক এবং অন্তিম টেস্ট সেটাই ছিল। আর কখনও ম্যারিয়ট ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার সুযোগ পাননি। যার ফলে তাঁর বোলিং গড় দাঁড়ায় ৮.৭ এবং স্ট্রাইক রেট ২২.৪। যা লোম্যানের চেয়েও ভাল!
কিন্তু সত্যিটা হল, অ্যান্ডি গন্তিউম বা চার্লস ম্যারিয়ট কাউকেই দারুণ কিছু ক্রিকেটার বলা যাবে না। তাই পরিসংখ্যান যা-ই বলুক না কেন, সেরা নির্দেশিকা হতে পারে না। স্যর নেভিল কার্ডাস একেবারে ঠিক কথাটাই বলে গিয়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy