রবিচন্দ্রন অশ্বিন। —ফাইল চিত্র।
রবিচন্দ্রন অশ্বিনের অবসরে বিস্মিত অনেকেই। তাঁর অধিকাংশ সতীর্থ, পরিবারের সদস্যেরাও জানতেন না আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে অস্ট্রেলিয়া সফরের মাঝেই বিদায় জানাবেন ৩৮ বছরের অফস্পিনার। আসলে অশ্বিনকে দিয়ে শুরু। ভারতীয় ক্রিকেটের আরও একটা যুগের শেষের শুরু।
সময়ের নিয়মে ক্রিকেটারেরা আসেন। অবসর নেন। তাঁদের জায়গা নেন পরবর্তী প্রজন্মের প্রতিনিধিরা। লালা অমরনাথ, পলি উমরিগড়, পঙ্কজ রায়, মনসুর আলি খান পতৌদি, সুনীল গাওস্কর, কপিল দেব, মহম্মদ আজহারউদ্দিন, সচিন তেন্ডুলকর, অনিল কুম্বলে, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রাহুল দ্রাবিড়, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, যশপ্রীত বুমরা, শুভমন গিল, যশস্বী জয়সওয়াল— এ ভাবেই এক প্রজন্ম থেকে আর এক প্রজন্মের হাতে লালিত ভারতীয় ক্রিকেট। ভারতীয় দলে ফাঁকা পড়ে থাকে না কোনও ক্রিকেটারের জায়গা। গাওস্করের পর সচিন, তাঁর পর কোহলি চলে এসেছেন ব্যাটিংয়ের হাল ধরতে। তেমনই কপিলের পর কুম্বলে, তাঁর পর অশ্বিন ছিলেন বোলিং আক্রমণের ভরসা।
অশ্বিনের অভাব কিছু দিন অনুভূত হতে পারে। তরুণ প্রজন্মের কেউ না কেউ ঠিকই তাঁর জায়গা নিয়ে নেবেন। সেখানেও লড়াই তীব্র। অন্তত পাঁচ জন স্পিনার-অলরাউন্ডার অশ্বিনের অভাব পূরণ করতে পারেন ভারতীয় দলে। শুধু অশ্বিনের জায়গা নয়, অদূর ভবিষ্যতে আরও কয়েক জনের জায়গা পূরণের দায়িত্ব নিতে হবে তরুণ ক্রিকেটারদের।
কোচের দায়িত্ব নেওয়ার গৌতম গম্ভীরের পরিকল্পনা ভবিষ্যতের ভারতীয় দল। যে দলে ঠাঁই হবে না একাধিক ক্রিকেটারের। গত এক-দেড় দশক ধরে যে ক্রিকেটারেরা বিশ্বের সব প্রান্তে দাপট দেখিয়েছেন, তাঁদের সরে যেতে হবে। সময়ের নিয়মে জায়গা ছেড়ে দিতে হবে তরুণ প্রজন্মকে। কারণ, ভারতীয় ক্রিকেটের গতি থেমে থাকতে পারে না।
অনূর্ধ্ব ১৭ ভারতীয় দলে ওপেনার হিসাবে সুযোগ পাওয়া অশ্বিনকে দিয়েই শুরু হয়েছে পরিবর্তনের পালা। বলা যায়, ভারতীয় ক্রিকেটের এক যুগ থেকে পরের যুগের যাত্রা। ২০২৫ সাল ভারতীয় দলকে সমৃদ্ধ করতে পারে একাধিক তরুণ মুখ। আগামী চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর ক্রমশ বদলাবে ভারতীয় দলের ছবি। ২০২৫ সালের আইপিএল একাধিক সিনিয়র ক্রিকেটারের কাছে হতে পারে অগ্নিপরীক্ষা। তার উপর একাধিক সিনিয়র ক্রিকেটারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে।
চলতি বর্ডার-গাওস্কর ট্রফিতে ভাল ফল করতে না পারলে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতের খেলা কঠিন। তার পর ভারত আবার লাল বলের ক্রিকেট খেলবে আইপিএলের পর। আগামী বছরের জুনে ইংল্যান্ড সফরে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ় দিয়ে শুরু হবে ভারতীয় দলের পরবর্তী টেস্ট সূচি। তার আগে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে ভারতীয় দলে।
গত কয়েক বছরে ভারতীয় দল থেকে দূরে চলে গিয়েছেন চেতেশ্বর পুজারা, অজিঙ্ক রাহানে, ইশান্ত শর্মা, ভুবনেশ্বর কুমার, উমেশ যাদবের মতো ক্রিকেটারেরা। তাঁদের বাদ দেওয়া হয়েছিল প্রত্যাশী পারফর্ম করতে না পারার জন্য। পরে ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল খেললেও জাতীয় দলের দরজা বন্ধই থেকেছে একাধিক জনের ক্ষেত্রে। তাই অশ্বিনের অবসরকে আসন্ন পরিবর্তনের সরকারি সূত্রপাত বলা যেতে পারে।
কারা আছেন তালিকায়? বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, রবীন্দ্র জাডেজা, মহম্মদ শামি। হ্যাঁ, ভারতীয় ক্রিকেটের দেওয়ালে কান পাতলে এই নামগুলিই শোনা যাচ্ছে। এঁদের মধ্যে কনিষ্ঠতম শামির বয়স এখন ৩৪। বাকিরা ৩৬, ৩৭। সকলেই ক্রিকেটজীবনের সায়াহ্নে। গম্ভীর চান না সবাইকে একসঙ্গে ছেঁটে ফেলতে। উপযুক্ত পরিবর্তের খোঁজ পেলে একে অবসর জীবনে পা রাখতে হবে এই ক্রিকেটারদের। কোহলি, রোহিত, জাডেজা গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর ২০ ওভারের ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন। আগামী চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর হয়তো এক দিনের ক্রিকেট ছাড়ার কথাও ভাবতে হবে তাঁদের। কারণ ২০২৭ সালের এক দিনের বিশ্বকাপে তাঁদের খেলার সম্ভাবনা কম। আবার সে বছরের টেস্ট বিশ্বকাপ ফাইনাল পর্যন্ত সকলে পাঁচ দিন খেলার ধকল নিতে পারবেন, তারও নিশ্চয়তা নেই। শামির ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করবে তাঁর ফিটনেসের উপর। সাদা বা লাল বলের ক্রিকেট বেছে নিতে হতে পারে তাঁকে। সুতরাং পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। নতুন যাঁরা আসবেন তাঁদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের সুযোগ দিতে চান গম্ভীর।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) বা ভারতীয় দলের সঙ্গে যুক্ত কেউই সরকারি ভাবে এই পরিকল্পনার কথা স্বীকার করছেন না। তবে ওয়াকিবহাল মহলের কাছে এই পরিকল্পনা নতুন নয়। বরং সুচিন্তিত এবং যুক্তিপূর্ণ। সূত্রের খবর, আগামী ইংল্যান্ড সফরের দলে একাধিক সিনিয়র ক্রিকেটারের জায়গা না-ও হতে পারে। কে কবে অবসর নেবেন, তা নির্দিষ্ট হয়নি। তবে ২০২৫ সালে একাধিক সিনিয়র ক্রিকেটারের শেষ বছর হতে চলেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। ঠিক যেমন ২০০৮ সালে সৌরভ, কুম্বলে পর পর অবসর নিয়েছিলেন।
কোহলি পার্থ টেস্টে শতরান করলেও দীর্ঘ দিন ধরে সেরা ফর্মে নেই। রান নেই রোহিতের ব্যাটেও। এক বছরের বেশি সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে শামি। জাডেজাও আর আগের মতো ধারাবাহিক পারফর্মার নন। সকলেই নিজেদের ক্রিকেটজীবনের সায়াহ্নে। অবসরই ভবিতব্য। আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে ভারতীয় দলে বড় কোনও রদবদলের পক্ষে নন কোচ বা কর্তারা। অজিত আগরকরের জাতীয় নির্বাচক কমিটিও হঠকারী সিদ্ধান্তের বিপক্ষে। সকলেই চান পরিবর্তন হোক নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে এবং পর্যাপ্ত সময় নিয়ে। একসঙ্গে একঝাঁক নতুন ক্রিকেটারকে দলে আনতে চায় না কোনও পক্ষই। কারণ ভারতীয় দলের পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য অভিজ্ঞতাও প্রয়োজন।
সব সিনিয়রদেরই বিকল্প তরুণ ক্রিকেটার উঠে এসেছেন। কোনও কোনও জায়গায় একাধিক বিকল্পও তৈরি। তাই ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন যুগের সূচনা আসন্ন। অশ্বিনের অবসর এই পরিবর্তন পর্বের সিলমোহর মাত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy