অকপট: চর্চায় অশ্বিন। ফাইল চিত্র।
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল থেকে তাঁর বাদ পড়ে যাওয়া নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। সুনীল গাওস্কর থেকে রিকি পন্টিং, সবাই মনে করেছেন, অশ্বিনকে না নিয়ে খুব ভুল করেছে ভারতীয় দল। বিশেষ করে যেখানে অস্ট্রেলিয়া দলে পাঁচ জন বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান ছিলেন। যার জেরে হারতে হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার কাছে।
তিনি নিজে কী বলছেন? ইংল্যান্ড থেকে ফিরে তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগে খেলা শুরু করেছেন অশ্বিন। এ বার তিনি মুখ খুললেন ওভালে বাদ পড়া নিয়ে। প্রচারমাধ্যমের সামনে খোলাখুলি প্রকাশ করলেন নিজের মনের কথা। ভারতীয় অফস্পিনার বলেছেন, ‘‘আমার কাছে বাদ পড়াটা কোনও বড় ধাক্কা নয়। বলতে পারেন, আমার যাত্রাপথে আমি হোঁচট খেয়েছি।’’ এর পরেই অশ্বিন বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি কোন ধাতুতে গড়া। তিনি বলেছেন, ‘‘ওভালের ঘটনা ভুলে আমি ঠিক এগিয়ে যাব। বাদ পড়ার অভিজ্ঞতা আমার আগেও হয়েছে।’’
যোগ করেন, ‘‘কেউ যখন এই রকম ধাক্কা প্রথম খায়, তখন আঘাতটা অনেক বেশি লাগে। আমার মনে হয়, সবার জীবনে এই রকম ধাক্কা খাওয়ার প্রয়োজন আছে। তা হলে সে নিজেকে তৈরি রাখতে পারবে। উঠে দাঁড়িয়ে আবার লড়াই করতে পারবে।’’ এখানেই শেষ নয়। অশ্বিন এও বলেছেন, ‘‘জীবন এ রকমই। আপনি সাফল্যের শীর্ষে আছেন কী নেই, সেটা বড় কথা নয়। ধাক্কা ধাক্কাই। তাই এই ধাক্কা সামলানোর শিক্ষা সকলের থাকা দরকার।’’
টেস্ট ফাইনালের আগে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হয়েছিল দ্বিতীয় স্পিনারের দলে থাকা নিয়ে। অশ্বিন বাদ পড়ায় ঝড় ওঠে সমাজমাধ্যমেও। ভারতীয় অফস্পিনার জানাচ্ছেন, তিনি ফাইনালের ৪৮ ঘণ্টা আগেই জেনে গিয়েছিলেন, প্রথম একাদশে থাকছেন না। অশ্বিনের কথায়, ‘‘কিন্তু আমি এখন অনেক ঠান্ডা, ধীরস্থির হয়ে গিয়েছি। নিজের উপরে আর চাপ নিই না। অনেকটাই বদলে ফেলেছি নিজেকে। পিছন দিকে ফিরে তাকালে আমি বুঝতে পারি, একটা সময় কতটা মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে আমাকে যেতে হয়েছে। কতটা বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলাম। এখন আমি নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করেছি।’’ ইংল্যান্ডের মাটিতে সাতটা টেস্টে ১৮টি উইকেট নিয়েছেন অশ্বিন। শেষ বার খেলেছেন দু’বছর আগে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে। অশ্বিন পরিষ্কার বলছেন, তাঁর সম্পর্কে কে কী ভাবছে, তা নিয়ে তিনি আর মাথা ঘামান না। অশ্বিনের কথায়, ‘‘আমি এখন ক্রিকেট কেরিয়ারের এমন একটা জায়গায় এসে পড়েছি, যেখানে আর অন্যের প্রতিক্রিয়া নিয়ে ভাবার সময় নেই। আমি জানি আমার কী করার ক্ষমতা আছে।’’তবে অশ্বিন এও বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁর যদি কোনও ঘাটতি থাকে, তা হলে সেই দিকে সবার আগে নজর দেবেন। ভারতীয় অফস্পিনারের মন্তব্য, ‘‘আমার মধ্যে যদি কোনও ঘাটতি থেকে থাকে, তা হলে সবার আগে নিজেই নিজের সমালোচনা করব। আর চেষ্টা করে যাব, সেই খুঁত মেরামত করে নেওয়ার। কবে কী করেছি, সেই সব নিয়ে ভেবে গর্বিত হওয়ার মানুষ আমি নই।’’
কেন তাঁকে বাদ দেওয়া হয়েছিল ওভাল টেস্ট থেকে? অধিনায়ক এবং কোচের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ব্যাপারটার ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন অশ্বিন। বলেছেন, ‘‘অবশ্যই আমি নিজে খেলতে চেয়েছিলাম। দলকে ফাইনালে তোলার ব্যাপারে আমারও অবদান ছিল। এমনকী, শেষ টেস্ট ফাইনালেও আমি চারটে উইকেট নিয়েছিলাম। ২০১৮-২০১৯ সালের পর থেকে বিদেশের মাঠে আমার বোলিং অনেক উন্নত হয়েছে। দলকে টেস্ট জেতাতে সাহায্য করেছি।’’ এর পরেই অশ্বিন বলেন, ‘‘ক্যাপ্টেন-কোচের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখলে আমার বাদ পড়ার নেপথ্যে একটা কারণ পাওয়া যায়। শেষ বার যখন আমরা ইংল্যান্ড সফরে এসেছিলাম, টেস্ট সিরিজ় ২-২ অবস্থায় ছিল। তখন ভারত চার পেসারে খেলিয়েই সাফল্য পেয়েছিল। ফাইনাল খেলতে নামার আগেও হয়তো ভারতীয় দল পরিচালন সমিতি ভেবেছিল, ইংল্যান্ডে চার পেসার-এক স্পিনারে খেললে সফল হওয়া যাবে।’’ অশ্বিন আরও বলেছেন, ‘‘ইংল্যান্ডে সমস্যা হল, স্পিনারদের কার্যকর হতে গেলে চতুর্থ ইনিংস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। চতুর্থ ইনিংসটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়।’’
(টেস্ট ফাইনালে হারের ময়নাতদন্ত প্রকাশিত হবে আগামীকাল)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy