পঞ্জাব কিংস দল। ছবি: আইপিএল।
আইপিএলের মিনি নিলামে পঞ্জাব কিংস ২০ লক্ষ টাকায় দলে নিয়েছে আশুতোষ শর্মাকে। মধ্যপ্রদেশের ক্রিকেটার খেলেন রেলের হয়ে। আইপিএলে ম্যাচ খেলার সুযোগ নিশ্চিত নয়। তবু উচ্ছ্বসিত আশুতোষ। কারণ নিজের আদর্শ ক্রিকেটারের কাছে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন।
আশুতোষের আদর্শ ক্রিকেটার সঞ্জয় বাঙ্গার। দিন কয়েক আগে মুম্বইয়ে প্রস্তুতি শিবিরে বাঙ্গারের সঙ্গে দেখা হয়েছে তাঁর। পঞ্জাবের ক্রিকেট উন্নয়নের প্রধান বাঙ্গারকে কাছে পেয়ে একটি ছবি দেখান তাঁকে। বাঙ্গার আসছেন জানতে পেরে, মোবাইলে থাকা ১২ বছরের পুরনো ছবিটি বের করে বসেছিলেন। তাঁর মোবাইলে এত পুরনো ছবি রয়েছে দেখে কিছুটা বিস্মিতই হয়েছিলেন ভারতীয় দলের প্রাক্তন অলরাউন্ডার।
মধ্যপ্রদেশের ছোট্ট শহর রৎলামের বাসিন্দার ক্রিকেট শুরু ভারতীয় দলের প্রাক্তন সদস্য নমন ওঝাকে দেখে। পরে বাঙ্গারের খেলা দেখে অনুপ্রাণিত হন। ২০১১ সালে আইপিএলের প্রাক্তন ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি কোচি টাস্কার্সের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বাঙ্গার। সে বার ক্রিকেট শিক্ষার্থী আশুতোষ ‘বল বয়’-এর দায়িত্ব পেয়েছিলেন। সেই সুযোগে প্রথম বার বাঙ্গারকে সামনা সামনি দেখার সুযোগ হয় তাঁর। বাঙ্গারের সঙ্গে ছবি তোলার সুযোগ হাতছাড়া করেননি। যে ছবি এখনও রয়েছে তাঁর মোবাইলে।
‘বল বয়’ হিসাবে নিজের আদর্শের সঙ্গে প্রথম দেখা হওযার দিনের স্মৃতি এখনও টাটকা আশুতোষের। এ বার বাঙ্গারের কাছে প্রশিক্ষণ পাবেন। এটাই সব থেকে আনন্দ দিচ্ছে তাঁকে। আশুতোষ বলেছেন, ‘‘বাঙ্গার স্যরের সঙ্গে প্রথম দেখা হওয়ার দিনটি এখনও মনে রয়েছে। তখন আমার বয়স ১০ বা ১১। ব্যাটিং নিয়ে পরামর্শ চেয়েছিলাম। এত দিনে আমার স্বপ্ন পূরণ হল। এ বার পঞ্জাবের হয়ে বাঙ্গার স্যরের সামনে খেলার সুযোগ পাব।’’
ক্রিকেটের জন্য আট বছর বয়সে বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল আশুতোষকে। রৎলামে প্রশিক্ষণের তেমন সুযোগ-সুবিধা নেই। তাই ইন্ডোরে মধ্যপ্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের আবাসিক অ্যাকাডেমিতে আশুতোষকে ভর্তি করে দিয়েছিলেন তাঁর বাবা। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘যখন বাড়ি ছেড়েছিলাম, তখন আমার কাছে যথেষ্ট টাকা ছিল না। একটা ক্রিকেট ক্যাম্পে গিয়ে আম্পায়ারিং করতাম। তাতে দুপুরের খাওয়ার একটা ব্যবস্থা হয়ে যেত। আমার পরিবারের সামর্থ্য ছিল অত্যন্ত সীমিত। চাইলেই সব কিছু পেতাম না। ইন্ডোরে আমার সংগ্রামের কথা বাড়িতে জানাতাম না। পরিবারের চিন্তা বৃদ্ধি করতে চাইতাম না।’’
মধ্যপ্রদেশের অনূর্ধ্ব ১৬, অনূর্ধ্ব ১৯ দলের হয়ে খেলেছেন। সে সময় থেকেই নিজের খরচ নিজে চালানোর চেষ্টা করতেন। পরে রেলের হয়ে খেলা শুরু করেন। আশুতোষ ক্রিকেটার হিসাবে প্রথম নজর কাড়েন গত বছর সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে। অরুণাচল প্রদেশের বিরুদ্ধে ১১ বলে অর্ধশতরান করে নজর কাড়েন। ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যুবরাজ সিংহের দ্রুততম অর্ধশতরানের রেকর্ড ভেঙে আলোচনায় উঠে আসেন তিনি। ২৫ বছরের ব্যাটার বলেছেন, ‘‘ওই ইনিংসটাই আমার জীবনের সব থেকে স্মরণীয় ঘটনা এখনও পর্যন্ত। পঞ্জাবে সুযোগ পাওয়ার থেকেও বেশি আনন্দের।’’ পঞ্জাব ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি তাঁকে দলে নেওয়ার পরের ঘটনাও ভোলেননি তিনি। আশুতোষ বলেছেন, ‘‘সে দিন বন্ধুদের সঙ্গে ভোর ৫টা পর্যন্ত জেগেছিলাম। ফোনটা বেজেই যাচ্ছিল। একটা সময় বন্ধ হয়ে যায় ফোন। আত্মীয়, পাড়ার সবাই বাজি, মিষ্টি নিয়ে বাড়িতে চলে এসেছিলেন পরের দিন সকালে। আমাদের ছোট শহরটা আমার ছবিতে ভরিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। সবাই উৎসবে মেতে উঠেছিলেন আমাকে নিয়ে। ওই আবহ বলে বোঝাতে পারব না। সেই সব দেখে প্রথম মনে পড়েছিল কোচের কথা। মনে হয়েছিল, কঠোর পরিশ্রমের পুরস্কার পেলাম।’’
আইপিএলে খেলার সুযোগ পাবেন কিনা জানেন না। সুযোগ পেলে নিজেকে উজাড় করে দিতে চান। আশুতোষ বলেছেন, ‘‘আমি নিজেকে মেলে ধরতে চাই দলের জন্য। এই পর্যন্ত পৌঁছতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। আরও পরিশ্রম করার জন্য প্রস্তুত আমি। পঞ্জাবকে প্রথম বার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হতে সাহায্য করতে চাই।’’ বিশ্বাস করেন বাঙ্গারের পরামর্শই তাঁকে পৌঁছে দেবে কাঙ্খিত লক্ষ্যে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy