গত বারের চ্যাম্পিয়ন। কলকাতা নাইট রাইডার্সকে নিয়ে এ বারের আইপিএলেও ভাল ফলের প্রত্যাশা রয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। বাড়তি পাওনা, এ বারের প্রতিযোগিতায় প্রথম ম্যাচেই মাঠে নামবে কেকেআর। আইপিএলের প্রথম ম্যাচের মতো ফাইনালও হবে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে। আগামী ২৫ মে-র ফাইনালেও নাইটদের দেখতে চাইবেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। প্রত্যাশার পাহাড়প্রমাণ চাপ নিয়েই মাঠে নামতে হবে অজিঙ্ক রাহানেদের।
শনিবার কেকেআরের প্রথম প্রতিপক্ষ রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। প্রতিযোগিতার প্রথম সব সময় কঠিন হয়। তার উপর সেই ম্যাচ যদি ঘরের মাঠে হয় এবং প্রতিপক্ষ দলে থাকেন বিরাট কোহলি। চাপ বেড়ে যায় কয়েক গুণ। শনিবারের ম্যাচে সেই চাপ সামলাতে হবে গত বারের চ্যাম্পিয়নদের।
এ বারের কেকেআর দলে অভিজ্ঞতার অভাব নেই। রাহানে ছাড়াও রয়েছেন সুনীল নারাইন, আন্দ্রে রাসেলদের মতো ক্রিকেটারেরা। বেঙ্কটেশ আয়ার, বরুণ চক্রবর্তী, রিঙ্কু সিংহ, হর্ষিত রানারও চাপ সামলে বহু বার পারফর্ম করেছেন। দলে ভারসাম্য রয়েছে। ব্যাটিং শক্তি বেশ ভাল। কেকেআরের বোলিংকেও হালকা ভাবে নেওয়ার সুযোগ থাকবে না প্রতিপক্ষ দলগুলির। ট্রফি জয়ের অন্যতম দাবিদার হিসাবেই প্রতিযোগিতা শুরু করবে কেকেআর।
আরও পড়ুন:
ভারতীয় দলে ব্রাত্য হয়েছেন আগেই। আইপিএলের দলগুলিও আগ্রহ হারিয়েছিল রাহানেকে নিয়ে। নিলামের শেষ দিকে সুযোগ বুঝে তাঁকে তুলে নেন কেকেআর কর্তৃপক্ষ। অনেকে মনে করেছিলেন, কেকেআরের প্রথম একাদশে রাহানের জায়গা হবে না। অথচ তাঁর অভিজ্ঞতায় আস্থা রেখেছে কেকেআর। তাঁকেই দেওয়া হয়েছে নেতৃত্বের গুরুদায়িত্ব। ঘরোয়া ক্রিকেটের আটটি ইনিংস হঠাৎ করেই রাহানের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে মুম্বইয়ের হয়ে আট ইনিংসে রাহানে করেন ৪৬৯ রান। গড় ৫৮.৬২। স্ট্রাইক রেট ১৬৪.৫৬। পাঁচটি অর্ধশতরানও করেন। প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও ছিলেন তিনি। ২০ ওভারের ক্রিকেটে এমন পারফরম্যান্স নিঃসন্দেহে ঈর্ষনীয়।
অধিনায়ক রাহানে আন্তর্জাতিক স্তরেও সফল। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তাঁর নেতৃত্বে পিছিয়ে থাকা ভারত টেস্ট সিরিজ় জিতেছিল ২০২০-২১ মরসুমে। ৩৬ রানে অলআউটের চাপ সামলে দলকে পথ দেখিয়েছিলেন। নিজে শতরান করেছিলেন মেলবোর্নে। কোহলি দেশে ফিরে আসার পর সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দলকে। দীর্ঘ দিন কোহলির সহ-অধিনায়ক ছিলেন। মুম্বইয়ের অধিনায়ক হিসাবেও সব ধরনের ক্রিকেটে তিনি সাফল্য পেয়েছেন।
রাহানের ক্রিকেটজীবন যখনই চাপে পড়েছে, তখনই নিজেকে প্রমাণ করেছেন তিনি। যেমন ২০১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সফরে প্রথম দু’টি টেস্টে খেলার সুযোগ পাননি। জোহানেসবার্গে তৃতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ রান করে দলকে জয় এনে দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার মানসিকতা রয়েছে মুম্বইকরের মধ্যে। তাঁর এই মানসিকতাকেই সম্ভবত মূলধন করতে চেয়েছে কেকেআর। ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার খুব বেশি সুযোগ পাননি রাহানে। আইপিএলে আগে কখনও অধিনায়ক হননি। যদিও সাতটি দলের হয়ে আইপিএল খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে রাহানের। ২০০৮ সাল থেকে খেলছেন। সব ক্রিকেটার সম্পর্কে ধারণা রয়েছে। চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে গত দু’মরসুম মিডল বা লোয়ার মিডল অর্ডারে ব্যাট করেছেন রাহানে। ইনিংসের শেষ দিকে নেমে আগ্রাসী মেজাজে খেলেছেন। ২০ ওভারের ক্রিকেটের দাবি মেনে দ্রুত রান তুলেছেন। ম্যাচের পর ম্যাচ দেখিয়ে দিয়েছেন, তিনি শুধু লাল বলের ক্রিকেটার নন। সাদা বলের ক্রিকেটেও মানানসই।
গত বারের চ্যাম্পিয়ন দলের তিন জন গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটারকে এ বার ধরে রাখতে পারেননি কেকেআর কর্তৃপক্ষ। তাঁরা হলেন শ্রেয়স আয়ার, ফিল সল্ট এবং মিচেল স্টার্ক। তাঁদের অভাব ঢাকতে বিকল্প ক্রিকেটারদের নিয়েছে কেকেআর। সল্টের বিকল্প হিসাবে দলে এসেছেন কুইন্টন ডি’কক। সল্টের মতোই আগ্রাসী ওপেনিং ব্যাটার এবং উইকেটরক্ষক তিনি। প্রাক্তন অধিনায়ক শ্রেয়সের জায়গায় রাহানে। দু’জনই দক্ষ মিডল অর্ডার ব্যাটার। আর স্টার্কের জায়গায় নেওয়া হয়েছে অনরিখ নোখিয়াকে। রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার জোরে বোলার স্পেনসার জনসনও। দলে রয়েছেন রভম্যান পাওয়েল, মইন আলির মতো বিদেশিরা। সব মিলিয়ে অভিজ্ঞতা এবং তারুণ্যের ভারসাম্য রয়েছে দলে। শক্তিশালী রিজ়ার্ভ বেঞ্চ যে কোনও দলের বড় মূলধন। কেকেআরের রিজ়ার্ভ বেঞ্চ এ বার বেশ শক্তিশালী। বলা যায়, কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতের হাতে পর্যাপ্ত বিকল্প রয়েছে।
৩৬ বছরের ব্যাটারই এ বার তুরুপের তাস হতে পারেন কেকেআরের। রাহানের ক্রিকেটজীবন যখনই খাদের কিনারায় পৌঁছেছে, তখনই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। দলের বিপদেও বহু বার জবাব দিয়েছে তাঁর ব্যাট। নিঃশব্দে লড়াই করে গিয়েছেন মাথা ঠান্ডা রেখে। ক্রিকেটের প্রতি সব সময় সৎ থাকার চেষ্টা করেছেন। দলের স্বার্থই তাঁর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অধিনায়ক হিসাবে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার কথা ভাবেন না, যা চাপে রাখতে পারে প্রতিপক্ষ দলগুলিকেও। তাই নাইটদের খেতাব ধরে রাখার লড়াইয়ে রাহানেই সেনাপতি।