শেষ বার ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া এক দিনের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ২০২৩ সালের এক দিনের বিশ্বকাপ ফাইনালে। ওই ম্যাচের ফলাফল কী হয়েছিল, তা এখন নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। ১৪০ কোটি মানুষের অনেকেই সেই হৃদয়ভঙ্গের রাত আজও ভুলতে পারেননি। সেই ক্ষতে কিছুটা প্রলেপ পড়তে পারে মঙ্গলবার। বদলার ম্যাচে সেই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলতে নামছে ভারত। এ বারও নকআউট ম্যাচ। যে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ট্রফি হাতছাড়া হয়েছিল, সেই অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ট্রফি জয়ের থেকে এক ধাপ দূরে দাঁড়িয়ে থাকার সুযোগ।
সেই ফাইনালে দু’টি লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নেমেছিল অস্ট্রেলিয়া। প্রথমটি যদি হয় ট্রফি জেতা, দ্বিতীয়টি অহমদাবাদের ১.৩ লক্ষ দর্শককে চুপ করিয়ে দেওয়া। দু’টি কাজেই সফল হয়েছিল। দুবাইয়ে মঙ্গলবার এত সমর্থক পাশে পাবেন না রোহিতেরা। তবে হাজার বিশেক সমর্থক নিঃসন্দেহে ভারতের হয়েই গলা ফাটাবেন তাতে সন্দেহ নেই।
অস্ট্রেলিয়ার ওই দলের সঙ্গে এই দলের বিশেষ মিল নেই। ‘অহমদাবাদের ১.৩ লক্ষ দর্শককে চুপ করিয়ে দেব’, এই হুঙ্কার যিনি ছেড়েছিলেন সেই প্যাট কামিন্স চোট পেয়ে সিডনির বাড়িতে বসে। নতুন বলে তাঁর সতীর্থ মিচেল স্টার্কও নেই। যিনি দু’জনের অভাব ঢেকে দিতে পারতেন, সেই জশ হেজ়লউডও ছিটকে গিয়েছেন। ফলে এই অস্ট্রেলিয়া কার্যত ভাঙাচোরাই।
তবে ভারতের ‘মাথা’ব্যথা কমার কোনও সম্ভাবনা নেই। প্রথমত, অস্ট্রেলিয়া দলে ট্রেভিস হেড রয়েছেন। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল থেকে বিশ্বকাপ ফাইনাল, ভারতে জোড়া স্বপ্ন একার হাতে ধূলিসাৎ করেছেন। দ্বিতীয় জন স্টিভ স্মিথ। ভারতের বিরুদ্ধে রানের খিদে কোনও দিন তাঁর কমবে বলে মনে হয় না। এ ছাড়া গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্নাস লাবুশেনের মতো পুরনো ‘শত্রু’রা তো রয়েছেনই।
ভারতের হাতেও জসপ্রীত বুমরাহের মতো অস্ত্র নেই। তবে অহমদাবাদের ওই রাতের পর ভারতীয় দলে অনেক পরিবর্তন এসেছে। অনেক বেশি ম্যাচ জেতানো ক্রিকেটার এসেছেন। রবীন্দ্র জাডেজা, অক্ষর পটেল, কুলদীপ যাদব— এই স্পিন ত্রয়ী এখন গোটা বিশ্বের ত্রাস। তার সঙ্গে যোগ হয়েছেন বরুণ চক্রবর্তী, যাঁর বল এখনও অস্ট্রেলিয়া খেলেনি। ফলে বোলিং বিভাগে ভারত বেশ শক্তিশালী হয়েই নামবে।
তবে অস্ট্রেলিয়াও ফেলে দেওয়ার মতো নয়। তাদের তিন পেসার স্পেন্সার জনসন, বেন ডোয়ারশুইস, নাথান এলিসকে খেলার সে রকম অভিজ্ঞতা নেই ভারতীয় ব্যাটারদের। দ্বিতীয়ত, আইসিসি প্রতিযোগিতায় অস্ট্রেলিয়ার শাসন। যতই ভাঙাচোরা দল হোক, অস্ট্রেলীয় আইসিসি প্রতিযোগিতায় নিজেদের সেরা উজাড় করে দেয়। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে ৩৫০ রান তাড়া করে জেতার পরেই তা বোঝা গিয়েছে। প্রতিযোগিতা শুরুর আগে হিসাবের বাইরে রাখা অস্ট্রেলিয়া যে সেমিফাইনালে উঠবে, এটা অনেকেই ভাবেননি।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের ব্যাটিং ভরসা দিয়েছে। তিনটি ম্যাচেই ব্যাটারেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন। নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে টপ অর্ডার ব্যর্থ হলেও মিডল অর্ডার সামলে দিয়েছে। শ্রেয়স আয়ারের দায়িত্বশীল ব্যাটিং, অক্ষর পটেলের বুদ্ধিদীপ্ত ইনিংস এবং হার্দিক পাণ্ড্যের পরিমিত আগ্রাসন ভারতকে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করিয়েছে।
তবে কিছু চিন্তার কারণও থাকছে। বিরাট কোহলি এবং অ্যাডাম জ়াম্পার সাক্ষাতের দিকে নজর থাকবে। ভারতের তারকা ব্যাটার অতীতে জ়াম্পার বিরুদ্ধে বার বার সমস্যায় পড়েছেন। জ়াম্পা পাঁচ বার আউট করেছেন কোহলিকে। এ ছাড়া, বাঁহাতিদের বিরুদ্ধে রোহিত শর্মার দুর্বলতা অস্ট্রেলিয়া ম্যাচেও তাড়া করতে পারে। কারণ অসি দলে দুই বাঁহাতি পেসার জনসন এবং ডোয়ারশুইস রয়েছেন।
আরও পড়ুন:
২০১১ সালের পর আইসিসি প্রতিযোগিতায় ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া চার বার মুখোমুখি হয়েছে। দু’দলই দু’বার করে জিতেছে। তবে ভারত যেখানে দু’টি ম্যাচ জিতেছে রাউন্ড রবিন ফরম্যাটে, সেখানে অস্ট্রেলিয়ার দু’টি জয়ই নকআউট পর্বে। একটি ২০১৫-র বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল, অপরটি ২০২৩ বিশ্বকাপ ফাইনালে।
রোহিত, কোহলি, জাডেজা যদি জল্পনা অনুযায়ী এটাই শেষ আইসিসি প্রতিযোগিতায় খেলতে নামেন, তা হলে মরিয়া হয়ে আর একটা ট্রফি চাইবেন তাঁরা। আর সেই চাওয়ার পথে প্রধান বাধা অস্ট্রেলিয়াই। তাঁরা কি সেই কাজে সফল হবেন, দেড় বছর আগের হারের বদলা নিতে পারবেন? উত্তর পাওয়া যাবে কয়েক ঘণ্টা পরেই।