পর্যবেক্ষণ: পর্যাপ্ত জল দিয়েও ফাটল আটকাতে পারেননি ফ্লিন্ট। ছবি: টুইটার।
ওয়ান্ডারার্সে ডিন এলগারের ইনিংসে মুগ্ধ ক্রিকেট দুনিয়া। শরীরে একের পর এক আঘাত নিয়ে খেলে টেস্ট জিতিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক। কিন্তু তাঁর এই ইনিংসের মাহাত্ম্য কয়েক গুণ বেড়ে যায় বিশেষ এক জনের কথায়। তিনি ওয়ান্ডারার্সের পিচ প্রস্তুতকারক ইভান ফ্লিন্ট। যিনি নিজেই পিচের অসমান বাউন্স দেখে রীতিমতো চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। যে বাউন্স ব্যাটারদের কাজটা ভীষণই কঠিন করে দিয়েছিল।
বছর দুয়েক আগে ওয়ান্ডারার্সে দক্ষিণ আফ্রিকাকে দ্বিতীয় ইনিংসে ধসিয়ে দিয়ে টেস্ট জিতেছিল ভারত। এ বারও পিচ প্রস্তুতকারক চিন্তায় ছিলেন, হঠাৎ করে ব্যাটিং-ধস নামে কি না। কেন এ রকম মনে করছেন তিনি? ওয়ান্ডারার্স টেস্ট শেষ হওয়ার পরের দিন জোহানেসবার্গ থেকে হোয়াটসঅ্যাপ কলে ফ্লিন্ট বলছিলেন, ‘‘এ বারের পিচ নিয়ে আমি একটু চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। জানতাম, ওয়ান্ডারার্সে অসমান বাউন্স থাকবে। কিন্তু এই অসমান বাউন্সটা যে এত তাড়াতাড়ি দেখা দেবে, বুঝতে পারিনি।’’
টেস্ট শুরুর আগে ফ্লিন্ট জানিয়েছিলেন, তিনি প্রার্থনা করছেন চতুর্থ-পঞ্চম দিনের আগে যেন এই অসমান বাউন্সটা না দেখা দেয়। পিচে ফাটল তৈরি হলেই বল এক বার অতিরিক্ত বাউন্স করে, এক বার নিচু থাকে। এ বার কিন্তু অসমান বাউন্স একেবারে প্রথম দিন থেকেই দেখা গিয়েছে। একই জায়গায় পড়ে কোনও বল ছিটকে উঠেছে, কোনও বল নিচু থেকেছে। সদ্য সমাপ্ত টেস্টে এও দেখা গিয়েছে, দু’দলের পেসারদের বেশ কয়েকটা বাউন্সার উইকেটকিপারের মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গিয়ে চার হয়ে গিয়েছে! ফ্লিন্টের কথায়, ‘‘এ বার টেস্ট শুরুর আগে প্রবল গরম পড়েছিল। যা নিয়ে আমরা চিন্তায় ছিলাম। জল দেওয়া হলেও পিচ কয়েকটা জায়গায় ফেটে যায়। যেখানে বল পড়লেই সমস্যা তৈরি হয়েছে।’’
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে সাত উইকেট নেওয়া ভারতীয় পেসার শার্দূল ঠাকুর বলেছিলেন, ‘‘উইকেটে একটা ফাটল আছে। যেখানে বল পড়লে অনেক কিছু হচ্ছে। আমি ওই ফাটল লক্ষ্য করেই বল করে যাই।’’
পিচে অসমান বাউন্স থাকার কারণেই এলগারের শরীরে এত বেশি আঘাত লাগে। প্রত্যাশার চেয়ে হঠাৎ হঠাৎ করে ছিটকে ওঠা বল দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়কের শরীরে আঘাত করে। দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেক বারই এলগারের বিরুদ্ধে খেলা সে দেশের প্রাক্তন অলরাউন্ডার হেনরিখ মালান বৃহস্পতিবার বলছিলেন, ‘‘ডিনের সবচেয়ে বড় গুণ হল ওর মানসিক শক্তি। ও হয়তো অনেকেরই মতো প্রতিভাবান নয় বা ওর হাতে হয়তো অত বেশি শট নেই, কিন্তু মানসিকতা দিয়ে ঘাটতিগুলো পুষিয়ে দেয়।’’
সদ্য আয়ারল্যান্ডের জাতীয় ক্রিকেট দলের কোচের দায়িত্ব পাওয়া মালান আরও বলেন, ‘‘ডিনের ক্রিকেট জীবনের মূলমন্ত্রই হল, লড়াই। যে লড়াইটা ওর প্রতিটা ইনিংসে দেখা যায়। দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটে ওর মতো যোদ্ধা ক্রিকেটার খুব কমই দেখা গিয়েছে।’’ মালান মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সেই লড়াইটাই দেখা গিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা ওপেনারের ব্যাটিংয়ে। মালানের কথায়, ‘‘ওয়ান্ডারার্সের পিচে ব্যাট করা কতটা কঠিন, তা সবাই বুঝেছে। শুধু দক্ষতা দিয়ে ওই পিচে টিকে থাকা কঠিন। জেদ, হার-না-মানা মানসিকতা ডিনকে ওই ইনিংসটা খেলতে সাহায্য করেছে।’’
ওয়ান্ডারার্সের পিচ প্রস্তুতকারক স্বীকার করে নিচ্ছেন, এটা মোটেই সেরা পিচ নয়। ফ্লিন্টের কথায়, ‘‘এই পিচটাকে আমি কিছুতেই সেরা বলতে পারব না। অনেক আগে থেকেই অসমান বাউন্স দেখা দেয় পিচে। যা আমাকে চিন্তায় রেখেছিল। তবে এটা বলব, একটা উত্তেজক টেস্ট ম্যাচ উপহার দিয়েছে ওয়ান্ডারার্সের উইকেট।’’
সাধারণত দেখা যায়, টেস্ট শেষে পিচ প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে কথা বলে যান দু’দলের কোচ-অধিনায়কেরা। তখন প্রশংসা-নিন্দা দুই জোটে পিচ-কারিগরদের। এ বার কি কারও সঙ্গে আপনার কথা হয়েছে টেস্ট শেষে? ফ্লিন্টের জবাব, ‘‘না, এ বার আর কারও সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়নি। জৈব সুরক্ষা বলয়ের নিয়মের জন্য কেউ কারও সঙ্গে কথা বলতে পারছি না। পিচ নিয়ে সবার মতামতটা জানা একান্ত জরুরি ছিল।’’
সবশেষে পিচ প্রস্তুতকারক বলে গেলেন, ‘‘তবে রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গে খেলার দিনগুলোয় দেখা হত। আমাকে সুপ্রভাত জানাতে ভুলত না দ্রাবিড়। অত্যন্ত ভদ্রলোক।’’ ফ্লিন্টের আশা, মঙ্গলবার থেক শুরু কেপ টাউন টেস্টেও জমজমাট একটা লড়াই দেখা যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy