এশিয়া কাপ নিয়ে জটিলতার জন্য বিসিসিআইকে দুষছে পিসিবি। —ফাইল ছবি।
এশিয়া কাপ কি হবে? কোথায় হবে এ বারের প্রতিযোগিতা? পাকিস্তানকেই কি দেখা যাবে আয়োজকের ভূমিকায়? এমন নানা প্রশ্ন ঘুরছে ক্রিকেটপ্রেমীদের মুখে মুখে। ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বে গত কয়েক মাস ধরে এশিয়া কাপ নিয়ে জল্পনা এবং জটিলতা বেড়ে চলেছে। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেনি। এই পরিস্থিতিতে এশিয়া কাপ নিয়ে প্রশ্ন শুনে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সচিবের কাছে গিয়ে জেনে নেওয়ার পরামর্শ দিলেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান।
এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের বৈঠকেও এশিয়া কাপ নিয়ে জট খোলেনি। বিসিসিআই সচিব জয় শাহ এবং পিসিবি চেয়ারম্যান নাজম শেঠির বৈঠকেও সমাধান সূত্র অমিল। এশিয়া কাপ নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে শেঠি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘এর উত্তর পেতে আপনাদের যেতে হবে আমার ভাই এবং বন্ধু জয় শাহর কাছে। আমরা আশা করছি, তিনি হাসি মুখে আমাদের কাছে আসবেন। এসে বলবেন, ‘প্রতিযোগিতার চারটি দল পাকিস্তানে খেলুক আর একটি দল খেলুক নিরপেক্ষ জায়গায়।’’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘শেষ বার দুবাইয়ে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের বৈঠকের সময় জয়ের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। ভাল পরিবেশেই আমাদের কথা হয়েছিল। আমরা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছিলাম।’’
বিসিসিআই সভাপতির সঙ্গে ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক ভাল হলেও ক্রিকেট নিয়ে জয়ের বক্তব্য মানতে পারছে না পিসিবি চেয়ারম্যান। এশিয়া কাপ নিয়ে জটিলতার দায় তিনি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের উপরই চাপিয়েছেন। ক্ষুব্ধ শেঠি বলেছেন, ‘‘এশিয়া কাপ পাকিস্তানের বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিসিসিআই অনড়। আমরা ওদের পাকিস্তানে এসে খেলার অনুরোধ করেছি। তা হলে আমরাও ভারতে গিয়ে খেলব। আমাদের এই বক্তব্য নতুন নয়। ২০০৮ সাল থেকে একাধিক বার আমরা ভারতে দল পাঠিয়েছি। অথচ ভারতীয় বোর্ড পাকিস্তানে দল পাঠায়নি।’’
পিসিবি চেয়ারম্যান আরও বলেছেন, ‘‘একটা সময় বিসিসিআই দল না পাঠানোর কারণ হিসাবে নিরাপত্তার কথা বলত। কিন্তু এখন আর ওদের সেই যুক্তি টিকছে না। কারণ বিশ্বের সব দেশই এখন পাকিস্তানে এসে খেলে যাচ্ছে। নিরাপত্তা নিয়ে কেউই প্রশ্ন তোলেনি। তাই বিসিসিআইয়ের কাছে এখন আর কোনও অজুহাত নেই।’’
পাকিস্তানে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের না পাঠানো নিয়ে ভারতীয় বোর্ডের সমালোচনা করেছেন পিসিবি চেয়ারম্যান। খোঁচা দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘ভারতের ব্রিজ দল, বেসবল দল, বাস্কেটবল দল, কবাডি দল সবাই পাকিস্তানে এসে প্রতিযোগিতা খেলছে। কারও কোনও সমস্যা হচ্ছে না। যত অসুবিধা শুধু ক্রিকেটের বেলায়। আমরা না খেলার ব্যাপারে কখনও অনড় নই। বিসিসিআই একমাত্র অনড়।’’
পাকিস্তানের অন্য দেশে গিয়ে খেলতে কোনও সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন শেঠি। তাঁর অভিযোগ, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড অন্য দেশের বোর্ডগুলিকেও নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। শেঠি বলেছেন, ‘‘প্রথমত আমরা কোনও দেশের বোর্ডকে উস্কাচ্ছি না। আমরা আয়োজক দেশ। তা হলে আমরা কেন সংযুক্ত আরব আমিরশাহি বা বাংলাদেশ বা শ্রীলঙ্কায় খেলতে যাব? আমরাও বলতে পারি, লন্ডনে গিয়ে খেলব। লর্ডসে খেললে বেশ মজা হবে। আয়োজক হিসাবে আমরা শ্রীলঙ্কার সাহায্য চাইছি না। আমরা প্রতিযোগিতা আয়োজন করার জন্য সব বিকল্পের খোঁজ করছি।’’
শেঠি জানিয়েছেন, বিকল্প প্রস্তাবও নামা না হলে তাঁরা এশিয়া কাপ খেলবেন না। সেই সময় তাঁরা তিন দেশের এক দিনের প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে চান। ইংল্যান্ড এবং আরও একটি দেশকে আমন্ত্রণ জানাতে চান। যদিও এ নিয়ে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে এখনও কথা বলেননি।
শেঠির মতে, নিয়মিত ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট হলে সকলেই খুশি হবেন। তিনি বলেছেন, ‘‘ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট হলে সবাই খুশি হয়। আমাদের দেশের সরকার খুশি হবে। সাধারণ মানুষ খুশি হবে। ক্রিকেটাররাও খুশি হবে। ভারত-পাকিস্তান খেলা হলে ক্রিকেটে আরও টাকা আসবে। আমি চাইছি এই বিতর্কের মধ্যে থেকে একটা পথ বের করতে। সমস্যা হচ্ছে ভারত আমাদের দেশে না আসার অবস্থানে অনড় থাকায়। এ জন্যই সমস্যার জট খুলছে না। বিশ্বকাপ এবং চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়েও সমস্যা তৈরি হবে এই অচলাবস্থা ভাঙতে না পারলে।’’
এর পর নিজের উদ্যোগের কথা বলেছেন পিসিবি চেয়ারম্যান। তিনি বলেছেন, ‘‘সকলেই জানেন আমি সব সময় শান্তির পক্ষে। সব সময় ভারত-পাকিস্তান বন্ধুত্বের পক্ষে। এই সমস্যার সমাধান দরকার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে গত ৫০ ধরে বিষয়টার মধ্যে সরকার জড়িয়ে যায়। আমি ক্রিকেট নিয়ে ভাবি। ক্রিকেটের দরজা খুলতে চাই। চাই শুভবুদ্ধির উদয় হোক।’’
প্রথম থেকেই পাকিস্তানে গিয়ে এশিয়া কাপ খেলতে নারাজ ভারত। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের বিকল্প প্রস্তাবও খারিজ করে দিয়েছে বিসিসিআই। অন্য দিকে, পিসিবি কর্তারাও নিজেদের অবস্থানে অনড়। প্রতিযোগিতা তাদের দেশ থেকে সরিয়ে নেওয়া হলে বয়কটের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। এক দিনের বিশ্বকাপ নিয়েও ভারতের উপর পাল্টা চাপ তৈরির চেষ্টা করছেন শেঠিরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy