মেয়ে ফতিমাকে কোলে নিয়ে বিসমা মারুফ। —ফাইল চিত্র।
দু’বছর আগে কমনওয়েলথ গেমসে নিজের মেয়েকে ভিলেজে রাখার অনুমতি পাচ্ছিলেন না প্রথমে। শেষ পর্যন্ত আদায় করে নিয়েছিলেন মেয়েকে কাছে রাখার অধিকার। আর সেই মেয়েকে নিয়ে ভারতীয় দলের মহিলা ক্রিকেটারদের ছবি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। বাচ্চা মেয়েটি ফতিমা। আর তাঁর লড়াকু মায়ের নাম বিসমা মারুফ। যিনি পাকিস্তানের হয়ে ১৭ বছর ক্রিকেট খেলেছেন। নেতৃত্বও দিয়েছেন। এ বার অবসর নিলেন। তিন বছরের মেয়েকে নিয়েই সময় কাটানোর ভাবনা বিসমার।
১৭ বছরের কেরিয়ার শেষে বিসমার মেয়েদের ক্রিকেটে পাকিস্তানের হয়ে এক দিনের এবং টি-টোয়েন্টিতে সব থেকে বেশি রানের মালিক। খেলেছেন ২৭৬টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। কেরিয়ারে কোনও শতরান না থাকলেও ৯৯ রানে আউট হওয়ার যন্ত্রণা রয়েছে। এক দিনের ক্রিকেটে ৩৩৬৯ রান করেছেন বিসমা। টি-টোয়েন্টিতে করেছেন ২৮৯৩ রান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৩৩টি অর্ধশতরান রয়েছে তাঁর।
৩২ বছরের বিসমা তিন বছর আগে মা হয়েছিলেন। তার পর যে তিনি আবার ক্রিকেটে ফিরবেন এমনটা আশা করেননি অনেকেই। কিন্তু বিসমা ফিরেছিলেন। পাকিস্তানের মতো দেশে মাতৃত্বের পর খেলায় ফিরে আসার ঘটনা খুবই কম। কিন্তু বিসমা হারতে চাননি। সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে ফিরে এসেছিলেন। এ কাজে তাঁকে সাহায্য করেছিল বোর্ডও।
১৯৯১ সালের ১৮ জুলাই লাহোরে এক কাশ্মীরী পরিবারে জন্ম বিসমার। বাড়ির লোক কখনওই ক্রিকেট খেলায় মত দেননি। তাঁরা চেয়েছিলেন, মেয়ে পড়াশুনো করে ডাক্তার হোক। কিন্তু স্কুলজীবনের শেষের দিক থেকে ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে বিসমার। সেই আগ্রহ এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, লাহোর কলেজ অব উওমেন বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েও ক্রিকেট খেলার জন্য পড়াশুনো ছেড়ে দেন। ডাক্তার হওয়ার পর্ব সেখানেই শেষ।
২০২১-এর অগস্টে বিসমা মা হয়েছিলেন। জন্ম হয়েছিল ফতিমার। সেই বছর এপ্রিলেই মাতৃত্বের খবর জানিয়ে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ক্রিকেট থেকে ছুটি নিয়েছিলেন বিসমা। দলের তৎকালীন কোচ ডেভিড হেম্প এবং বোর্ডের সহযোগিতায় ফের ক্রিকেটে ফেরেন। বোর্ড একটি নীতি চালু করে, যেখানে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকা সত্ত্বেও ক্রিকেটারেরা এক বছর বেতন পাবেন এবং পরের বছর চুক্তিও পুনর্নবীকরণ করা হবে। এতেই অনুপ্রাণিত হয়ে ক্রিকেটে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন বিসমা। বলেছেন, “বোর্ড এ ভাবে পাশে না দাঁড়ালে হয়তো ক্রিকেট ছাড়তে হত আমায়। এখন আমি মাকে সব সময় সঙ্গে রাখি। জানি মেয়ে নিরাপদে রয়েছে।”
ক্রিকেট এবং মাতৃত্ব উপভোগ একসঙ্গেই চলছিল বিসমার। পাকিস্তানকে ৯৬ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে রয়েছে ৬২টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ এবং ৩৪টি এক দিনের ম্যাচ। সানা মীর ৬৫টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর পরেই রয়েছেন বিসমা। এক দিনের ক্রিকেটে সেই তালিকায় বিসমা তৃতীয় স্থানে। সানা (৭২) এবং শায়জাদা খান (৩৯) বিসমার এগিয়ে রয়েছেন। বিসমার নেতৃত্বে ৪৩টি ম্যাচে পাকিস্তান জিতেছিল।
খেলা ছাড়ার কথা জানিয়ে বিসমা বলেন, “যে খেলাকে সব থেকে ভালবাসি, সেখান থেকে অবসর নিচ্ছি। দারুণ একটা যাত্রা ছিল। এই পথে অনেক ধরনের বাধা ছিল। কখনও সাফল্য পেয়েছি, কখনও ব্যর্থ হয়েছি। পরিবারের সেই সমস্ত মানুষকে ধন্যবাদ যাঁরা এই যাত্রায় আমার পাশে ছিলেন। ধন্যবাদ পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে। তাদের জন্যই আমি নিজের প্রতিভা দেখাতে পেরেছি। আমার জন্য বোর্ড নিয়ম পাল্টে ফেলেছিল। মা হওয়ার পরেও দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলতে পেরেছি। ধন্যবাদ আমার সব সতীর্থকে। সেই সব ক্রিকেটার আমার পরিবার হয়ে গিয়েছিল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy