দ্বিপাক্ষিক সিরিজে সে ভাবে শামির অভাব বোঝা না গেলেও এশিয়া কাপে সেটা স্পষ্ট। —ফাইল চিত্র
এশিয়া কাপ থেকে প্রায় ছিটকে যাওয়ার মুখে ভারতীয় দল। শেষ দু’টি ম্যাচেই ভারতের বোলিং আক্রমণের ব্যর্থতা দেখা গিয়েছে। যশপ্রীত বুমরা চোটের জন্য নেই। টি-টোয়েন্টিতে দক্ষ হর্ষল পটেলেরও চোট। নেওয়া যায়নি তাঁকেও। ১৫ জনের দলে প্রথমে রাখা হয়নি দীপক চহারকে। আবেশ খান চোট পেয়ে ছিটকে যেতে তাঁকে নেওয়া হয়। এমন অবস্থায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, কেন দলে নেওয়া হয়নি মহম্মদ শামিকে? বাংলার অভিজ্ঞ পেসারকে বসিয়ে রাখার কারণ স্পষ্ট হচ্ছে না অনেকের কাছেই।
আইপিএলে গুজরাত টাইটান্সের ট্রফি জয়ের পিছনে বড় ভূমিকা নেন শামি। ১৬ ম্যাচে নেন ২০টি উইকেট। নতুন বলে বিধ্বংসী ছন্দে দেখা যায় তাঁকে। গুজরাতের হয়ে সব থেকে বেশি উইকেট শামির দখলেই। তবু বাংলার পেসারকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভারতের হয়ে খেলতে দেখা যায় না। ভারতের জার্সিতে শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ তিনি খেলেছিলেন ২০২১ সালের বিশ্বকাপে। তার পর থেকে ভারত একাধিক টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেললেও দলে রাখা হয়নি শামিকে। তরুণ ক্রিকেটারদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, আইপিএলে ভাল খেলার জন্যই টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা করে নিয়েছেন দীনেশ কার্তিক।
দ্বিপাক্ষিক সিরিজে সে ভাবে শামির অভাব বোঝা না গেলেও এশিয়া কাপে সেটা স্পষ্ট। মহম্মদ আজহারউদ্দিন মনে করছেন ভারতের বোলিং আক্রমণ অভিজ্ঞতার অভাবে ভুগল। চাপ সামলাতে পারলেন না ভুবনেশ্বর কুমারও। সুপার ফোরে পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে শেষ ওভারে গিয়ে হারতে হয়েছে। মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ছ’উইকেটে হারে ভারত। ভুবনেশ্বর ১৯তম ওভারে বল করতে এসে ১৪ রান দেন। পাকিস্তান ম্যাচে ১৯তম ওভারে বল করতে এসে দিয়েছিলেন ১৯ রান। এই দলের সব থেকে অভিজ্ঞ পেসার তিনিই। কঠিন সময় বল করতে এসে চাপ সামলাতে পারেননি। শেষ ওভারে অর্শদীপ সিংহ চেষ্টা করলেও ম্যাচ জেতাতে পারেননি। আনন্দবাজার অনলাইনকে ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক বললেন, “সিনিয়র ক্রিকেটার দলে থাকা সব সময় ভাল। বুমরা যখন দলে নেই, সেখানে শামিকে প্রয়োজন ছিল। কেন নেওয়া হল না জানি না। ওর অভিজ্ঞতা কাজে লাগত।” আজহারউদ্দিনের সুর শোনা গেল সাবা করিমের গলাতেও। প্রাক্তন নির্বাচক বললেন, “শামি থাকলে অবশ্যই ভাল হত। নতুন বলে ও উইকেট নিতে পারত। শামির অভিজ্ঞতা কাজে লাগত ভারতের।”
দলে আরও একজন পেসার থাকলে এমন হত না বলেই মত রবি শাস্ত্রীর। ভারতের প্রাক্তন কোচ বলেন, “আমি অবাক ভারত মাত্র চার জন পেসার নিয়ে এখানে এসেছে দেখে। আরও এক জন পেসার প্রয়োজন ছিল। মহম্মদ শামির মতো কেউ ঘরে বসে আছে দেখে আমি অবাক। আইপিএলে অত ভাল খেলেও সুযোগ পেল না!”
অরুণ লাল মনে করছেন শামির বয়স হচ্ছে। সেই কারণে তাঁকে সব ম্যাচ খেলাতে চাইছে না ভারত। বাংলার প্রাক্তন কোচ বললেন, “মনে হয় শামিকে ওরা বিশ্রাম দিয়ে খেলাতে চাইছে। ইংল্যান্ড যে ভাবে জেমস অ্যান্ডারসনদের খেলায়। সেই কারণে এশিয়া কাপে হয়তো শামিকে নেয়নি ভারত। তবে বড় প্রতিযোগিতায় বিশ্রাম না দিয়ে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে বিশ্রাম দেওয়া ভাল ছিল।”
২২ অক্টোবর থেকে শুরু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেই প্রতিযোগিতায় শামিকে নেওয়ার দাবি উঠতে শুরু করেছে। যশপ্রীত বুমরা ইতিমধ্যেই জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে রিহ্যাব শুরু করে দিয়েছেন। শামিকেও ফেরানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন অনেকে। টি-টোয়েন্টিতে ভারতের হয়ে ১৭টি ম্যাচ খেলেছেন শামি। নিয়েছেন ১৮টি উইকেট। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলার পেসারকে নিয়মিত দলে রাখা হলেও টি-টোয়েন্টিতে রাখা হয় না। গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে রাখা হয়নি বাংলার পেসারকে। বিদেশের মাঠে আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধেও টি-টোয়েন্টি সিরিজে রাখা হয়নি শামিকে। কিন্তু এশিয়া কাপে ব্যর্থতার পর শামিকে ফেরানোর দাবি উঠতে শুরু করেছে। অরুণ লাল বলেন, “টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শামিকে প্রয়োজন। ওর অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে।” সাবা করিম মনে করেন ভারতীয় দলে আরও এক জন পেসার প্রয়োজন। তিনি বলেন, “এশিয়া কাপে শেষ দু’টি ম্যাচে দু’জন পেসার এবং হার্দিক পাণ্ড্যকে নিয়ে খেলল ভারত। প্রয়োজন ছিল তিন জন পেসার। দীপক চহার রিজার্ভে ছিল। ওকে দলে প্রয়োজন ছিল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের খেলা উচিত তিন জন পেসার এবং হার্দিক পাণ্ড্যকে নিয়ে। সে ক্ষেত্রে শামিকে নেওয়া হলে ভালই হয়।” সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় এক সংবাদমাধ্যমে লেখেন, ‘টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বুমরার সঙ্গী হিসাবে শামির কথা ভাবতেই পারেন নির্বাচকরা। অস্ট্রেলিয়ার পিচে মিডিয়াম পেসারদের কিন্তু ব্যাটাররা শেষ করে দেবে।’
এশিয়া কাপ শুরুর আগে কৃষ্ণমাচারী শ্রীকান্ত, কিরণ মোরেরা বলেছিলেন যে, শামিকে না নেওয়া ভুল হচ্ছে। মোরে বলেছিলেন, “আমার মনে হয় রবিচন্দ্রন অশ্বিনের জায়গায় শামিকে নেওয়া উচিত ছিল। অথবা অক্ষর পটেলকে। অক্ষর খুব ভাল ছন্দে রয়েছে। শামি আশা করি বিশ্বকাপে খেলবে। উইকেট নিতে পারবে এমন বোলারকে দলে চাইব আমি। ম্যাচের যে কোনও সময় উইকেট নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে শামির।” শ্রীকান্ত বলেছিলেন, “আমার দলে শামি সব সময় থাকত। আমি নির্বাচক প্রধান হলে সবার আগে শামিকে নিতাম। তার বদলে রবি বিষ্ণোইকে বসাতাম। কারণ, দলে এক জন পেসার কম খেলাচ্ছে ভারত। বুমরা যখন নেই, তখন শামির দলে থাকা আরও বেশি জরুরি ছিল।”
এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার মুখে ভারত। সেই সময় দাঁড়িয়ে মোরে, শ্রীকান্তদের কথাই ঠিক প্রমাণিত হচ্ছে। শামির অভাব টের পাচ্ছে ভারত। যদিও এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে হেরে রোহিত বলেন, “বিশ্বকাপের দল ৯০-৯৫ শতাংশ তৈরি। কিছু ছোটখাটো বদল হবেই। ইচ্ছে করেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। এশিয়া কাপের আগেই ঠিক করেছিলাম। চার জন জোরে বোলার এবং দু’জন স্পিনার নিয়েই খেলার পরিকল্পনা রয়েছে। তবু আমি দেখতে চেয়েছিলাম, তিন জন জোরে বোলার খেলালে কী হতে পারে।”
পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগেও চলবে। শামিকে কী ফেরানো হবে? রাহুল দ্রাবিড়রা কী ভাবছেন? এশিয়া কাপের পর ভারতের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজ। সেই সিরিজে দেখা যাবে শামিকে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy