শামিকে নিয়ে উল্লাস সতীর্থদের। ছবি: পিটিআই।
ভারত ২২৯-৮ (রোহিত ৮৭)
ইংল্যান্ড ১২৯ (শামি ৪/২২, বুমরা ৩/৩২)
স্কোরবোর্ডে মাত্র ২২৯ রান ওঠার পর অনেকেই শঙ্কায় ছিলেন, এই রান নিয়ে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারত জিততে পারবে তো? পয়েন্ট তালিকায় সবার নীচে থাকা ইংরেজদের বিরুদ্ধে হেরে পচা শামুকে পা কাটবে না তো? দিনের শেষে সমর্থকদের সব চিন্তা দূর করে দিলেন ভারতীয় বোলারেরা। ব্যাটিংয়ে একদিন খারাপ গিয়েছে তো কী হয়েছে, বোলারেরা তো রয়েছেন। যশপ্রীত বুমরা এবং মহম্মদ শামির দাপটে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে কম রানের পুঁজি নিয়েও হাসতে হাসতে জিতল রোহিত শর্মার দল। ভারত জিতল ১০০ রানে। সকালে রোহিতের ব্যাট, সন্ধেয় শামির বলে রাতে জিতে গেল ভারত।
বিশ্বকাপে ছয়ে ছয় করে ফেলল ভারত। তার থেকেও বড় কথা, এ বারের বিশ্বকাপে ভারতীয় দল প্রায় সব রকম পরিস্থিতিতেই সফল। আগে ব্যাট করে বড় রান তুলে জেতা, বিপক্ষের রান তাড়া করা এ সব তো হয়েই গিয়েছে। আসল পরীক্ষা ছিল কম রানের পুঁজি নিয়েও কী ভাবে জেতা যায়। রবিবার সেটাও হয়ে গেল। রোহিতের দলকে এখন নিঃসন্দেহে বিশ্বকাপের অপ্রতিরোধ্য দল মনে হচ্ছে, যারা পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, দিনের শেষে দু’পয়েন্ট নিয়েই বাড়ি ফিরবে।
টসে হেরে আগে ব্যাট করে ২২৯ রান ওঠায় লখনউয়ের হাজার পঞ্চাশেক সমর্থক তো বটেই, দেশজুড়ে কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমী চিন্তায় পড়েছিলেন। হাজার হোক, দলটার নাম ইংল্যান্ড। এত বড় বড় ক্রিকেটার। ফর্মে ফেরার জন্যে ভারত ম্যাচ জেতা আদর্শ হতে পারে। কিন্তু দাঁতনখহীন এই ইংল্যান্ড হয়তো বাংলাদেশ বা আফগানিস্তানের থেকেও খারাপ। প্রতিটি ক্রিকেটারই যেন গত বারের বিশ্বকাপের ছায়ামাত্র। কেউ নিজের ফর্মের ধারেকাছে নেই। গুরুত্বপূর্ণ সময়েও এমন শট খেলছেন যা চোখে দেখা যায় না।
মহম্মদ শামি আবার বোঝালেন, কেন তাঁকে এই দলে দরকার। প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে প্রথম বলে উইকেট নিয়েছিলেন। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ওভারে উইকেট নিলেন। দ্বিতীয় স্পেলে এসে জুটি ভাঙলেন। তাঁর বল খেলতেই পারছিলেন না ইংরেজ ব্যাটারেরা। শামি চিন্তা দূর করলে, চাপ রাখলেন মহম্মদ সিরাজ। বলে তো ব্যর্থই। এমন কিছু ফিল্ডিংও মিস্ করলেন যা দেখে মাঠে রেগে গেলেন রোহিতও।
লখনউয়ের প্রথম বল পড়া থেকেই বোঝা গিয়েছিল এই পিচে প্রথম ইনিংস খেলা সহজ হবে না। ম্যাচ যত এগোল, তত সেটা আরও ভাল করে বোঝা গেল। বল পড়ে ব্যাটে এল ধীরে। অসমান বাউন্স লক্ষ করা গেল একাধিক বার। স্পিনারেরা সুবিধা পেলেন। আইপিএলে কম রানের কারণে লখনউয়ের পিচ যথেষ্ট বদনাম কুড়িয়েছিল। রবিবার লাল মাটির পিচেও ভারতকে আগাগোড়া হিমশিম খেতে হল।
শুরুটা ভাল হয়নি। প্রথম ওভারেই ডেভিড উইলি মেডেন নিলেন রোহিত শর্মার বিরুদ্ধে। দ্বিতীয় ওভারে উঠল চার। তিন নম্বর ওভারে খোলস ছেড়ে বেরোলেন রোহিত। উইলিকে দু’টি ছক্কা মারলেন। লখনউয়ের জনতা যখন আনন্দে গা ঝাড়া দিয়ে বসেছে, তখনই নেমে এল নিস্তব্ধতা। ওকসের বলে স্টাম্প ভেঙে গেল শুভমন গিলের। ইংল্যান্ড ম্যাচের অনুশীলনে কঠোর প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু বিশ্বকাপে শুভমনের ব্যাটে বড় রান এখনও এল না।
নবাবের শহর অপেক্ষা করছিল একজনেরই। তিনি বিরাট কোহলি। অপেক্ষা বেশি ক্ষণ করতে হল না। শুভমন ফিরতেই গ্যালারিতে জোরালো গর্জন। কিন্তু লখনউবাসীকে কাবাব-পার্টির কোনও সুযোগ দিলেন না কোহলি। শুরু থেকে একটু ধীরে খেলছিলেন। কিন্তু আটটি বল কেটে গেলেও রান করতে পারেননি। ভেতরে ভেতরে অধৈর্য হয়ে পড়েছিলেন কি না জানা নেই। কিন্তু নবম বলে যে শটটা খেললেন সেটা মোটেই ‘কোহলি-চিত’ নয়। শর্ট বল এগিয়ে এসে মিড-অফ অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে তুলে মারার চেষ্টা। বলে-ব্যাটে সংযোগ হয়নি। মিড-অফে বেন স্টোকস দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লোপ্পা ক্যাচ নিলেন। একানা স্টেডিয়ামে তখন শ্মশানের নিস্তব্ধতা।
শ্রেয়স আয়ারকে নিয়ে এ বার ভাবতেই হবে ভারতকে। চার নম্বরে খেলার মতো হাতে আর কেউ নেই বলে ব্যর্থ শ্রেয়সকে প্রতি ম্যাচেই খেলিয়ে যাওয়া অনুচিত বলে মত বিশেষজ্ঞদের। এই ম্যাচ তাঁর কাছে নায়ক হয়ে ওঠার আদর্শ সুযোগ ছিল। শ্রেয়স হেলায় তা হারালেন। শুরুটা খারাপ করেননি। ক্রিজে থিতু হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু অফ স্টাম্পের বাইরের বলে পুল মারার দুর্বলতা কে থামাবে? কাঁধ সমান উচ্চতার বলে না তাকিয়েই ব্যাট চালিয়েছিলেন শ্রেয়স। বল জমা পড়ল মিড অফের হাতে।
৪০ রানে ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর প্রমাদ গুণতে শুরু করেন অনেকেই। এ বারের বিশ্বকাপে এত খারাপ অবস্থার মধ্যে আগে কখনও পড়েনি ভারত। তাই রক্ষাকর্তা হিসাবে কাউকে এগিয়ে আসতেই হত। সেটাই করলেন কেএল রাহুল। অতীতে বহু বার দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন। তবে রোহিত শর্মার প্রশংসা একই রকম প্রাপ্য। সবে নিজের আগ্রাসী মানসিকতা বের করে আনছিলেন। দলের বিপদের সময় আবার খোলসে ঢুকে পড়লেন। মারকুটে খেলার চেয়ে খুচরো রান নিয়ে স্কোরবোর্ড সচল রাখার দিকে নজর দিয়েছিলেন রাহুল।
টি-টোয়েন্টিতে দু’জনে একসঙ্গে ওপেন করেছেন আগে। তাই রোহিত-রাহুল জুটি মোটেই একে অপরের কাছে অপরিচিত নয়। পুরনো সেই বন্ধুত্বই তাঁরা ক্রিজে ফিরিয়ে আনেন। ভারতের ধস আটকান তাঁরা। রোহিত তবু একটু মারছিলেন। রাহুল নজর দিয়েছিলেন টুকরো-টাকরা রান নেওয়ার দিকেই। ৯১ রানের মাথায় জুটি ভাঙল। রাহুল কিছুটা উইকেট ছুড়েই দিলেন। উইলির বলের বাউন্স বুঝতেই পারেননি।
রোহিতের সঙ্গ দেওয়ার জন্যে কাউকে একজন দরকার ছিল। সেটা করলেন সূর্যকুমার যাদব। এমনিতেই বিশ্বকাপে তিনি ভরসা দিতে পারেননি। কিন্তু দরকারের মুহূর্তে তাঁর ব্যাট থেকে ৪৯ রানের দামী ইনিংস পাওয়া গেল। অকারণে খারাপ শট নিয়ে আউট না হলে প্রথম অর্ধশতরান বাঁধাই ছিল। তার মাঝেই লখনউয়ের নজর ছিল রোহিতের দিকে। আরও একটি শতরান কি আসবে? কিন্তু হল না। ৮৭ রানের মাথায় উইকেট বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হলেন তিনি। শেষ দিকে বুমরার সৌজন্যে ভারত এই পিচের জন্যে মোটামুটি ভদ্রস্থ একটা স্কোর খাড়া করে।
নতুন বলে শামির কার্যকারিতা কারওরই অজানা নয়। কিন্তু বাংলার পেসারের হাতে নতুন বল তুলে দেওয়া নিয়ে রোহিতের একটা অনীহা এই ম্যাচেও শুরুর দিকে দেখা গেল। সেই বুমরা এবং মহম্মদ সিরাজকে দিয়েই শুরু করালেন। বুমরা প্রথম ওভারে ৪ রান দিলেও সিরাজ দিলেন ১২। প্রথম চার ওভারে উঠে গেল ২৬ রান।
খেলা ঘুরতে শুরু করল পঞ্চম ওভারে। যখন মনে হচ্ছে ইংরেজ ওপেনাররা ম্যাচ বের করতে চলেছেন, তখনই জোড়া ধাক্কা বুমরার। পর পর তুলে নিলেন দাউইদ মালান এবং জো রুটকে। এর মধ্যে রুটের উইকেট বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল রুটের উইকেটই। কারণ ভারতের মাটিতে তিনি যথেষ্ট অভিজ্ঞ। দাঁড়িয়ে গেলে ম্যাচ বার করে দিতে পারতেন। কিন্তু খারাপ ফর্ম কাটল না এই ম্যাচেও। না হলে প্রথম বলেই আড়াআড়ি শট খেলতে যান!
সাফল্যের গন্ধ পেয়ে আর সিরাজ নয়, ষষ্ঠ ওভারেই শামিকে নিয়ে এলেন রোহিত। স্টোকসকে প্রায় খেলালেন শামি। নিজের পরের ওভারেই বোকা বানিয়ে ফিরিয়ে দিলেন ইংরেজ অলরাউন্ডার। প্রথম পাঁচটি বলে কোনও মতে খেললেন স্টোকস। ষষ্ঠ বলেই স্টাম্প ছেড়ে মারতে গেলেন। স্টাম্পই উড়ে গেল। এর পরে জনি বেয়ারস্টোকেও তুলে নিলেন। ৩০-০ থেকে ৩৯-৪ হয়ে গেল ইংল্যান্ড। লখনউ আচমকা জেগে উঠল।
পঞ্চম উইকেট পড়তেও সময় লাগল না। ইংল্যান্ড সবে জস বাটলার এবং মইন আলির হাত ধরে ৫০-এর গন্ডি পেরিয়েছে। তার আগেই কুলদীপ যাদবকে এনেছেন রোহিত। সেই কুলদীপ নিজের দ্বিতীয় ওভারেই তুলে নিলেন বাটলারকে। লেট কাট করতে গিয়েছিলেন ইংরেজ অধিনায়ক। কুলদীপের ঘূর্ণি বল এসে তাঁর স্টাম্প ভেঙে দিল।
মাঝে কিছুটা সময় খেলা ধরে নিয়েছিলেন মইন এবং লিভিংস্টোন। কুলদীপ এবং সিরাজকে দিয়ে চাপে থাকা ইংল্যান্ডের মুখে কয়েক ওভার করিয়ে নেন রোহিত। ২৪তম ওভারে শামিকে ফেরাতেই সাফল্য। প্রথম বলেই মইন খোঁচা দিলেন রাহুলের হাতে। এর পর লিভিংস্টোন ফিরতেই ইংল্যান্ডের কিছু পড়ে ছিল না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy