Advertisement
E-Paper

জ্বলছে ছাই, মাঠের লড়াইয়ের আঁচ মাঠের বাইরেও, অ্যাশেজে বিবাদ বাড়ছে দু’দলের

লর্ডস টেস্টে বেশ কয়েকটি বিতর্ক হয়েছে। তার ফলে মাঠ ও মাঠের বাইরে বিবাদ ক্রমশ বেড়ে চলেছে। এই বিবাদের জেড়ে বাড়ছে অ্যাশেজের উত্তাপও।

Chaos at Lord\\\\\\\'s

ইংল্যান্ডের স্টুয়ার্ট ব্রডের (বাঁ দিকে) সঙ্গে বিবাদ অস্ট্রেলিয়ার মার্নাশ লাবুশেনের। দেখছেন অ্যালেক্স ক্যারে (ডান দিকে)। ছবি: পিটিআই

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৩ ১৬:৩০
Share
Save

সবে দু’টি টেস্ট হয়েছে। এখনও বাকি তিনটি টেস্ট। তার মধ্যেই উত্তপ্ত অ্যাশেজ। একের পর এক ঘটনার জেরে বাড়ছে বিতর্ক। কখনও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে অস্ট্রেলিয়া। তো কখনও আবার অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটীয় স্পিরিট নিয়ে খোঁচা মেরেছে ইংল্যান্ড। মাঠের উত্তাপ ছড়িয়েছে মাঠের বাইরেও।

জো রুটের ক্যাচ

ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে রুটের ক্যাচ নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। অনেকটা দৌড়ে রুটের ক্যাচ ধরেন অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ স্মিথ। ক্যাচ ধরার পরেই তাঁর হাত থেকে বল বেরিয়ে যায়। কিন্তু বল মাটিতে পড়ার আগেই আবার বল ধরে নেন স্মিথ। ক্যাচ নেওয়ার পরে ডাইভ দেওয়ার সময় মনে হয় বল মাটিতে লেগেছে। সেই কারণে কিছু ক্ষণ ক্রিজেই দাঁড়িয়ে থাকেন রুট। পরে তৃতীয় আম্পায়ার আউট দেন। তাঁর মনে হয়, বল স্মিথের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এই ক্যাচ নিয়ে ক্ষোভ জানায় ইংল্যান্ড শিবির।

বেন ডাকেটের ক্যাচ

রুটের ক্ষেত্রে যেমন সিদ্ধান্ত ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে গিয়েছিল, ডাকেটের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত যায় রুটদের পক্ষে। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে অর্ধশতরান করার পরে ডাকেটের একটি শট ফাইন লেগ অঞ্চলে যায়। সেখানে ছিলেন মিচেল স্টার্ক। তিনি ক্যাচ ধরেন। কিন্তু ডাইভ দেওয়ার সময় হল মাটিতে লাগে। প্রথমে ডাকেটকে আউট দেন আম্পায়ার। কিন্তু পরে তৃতীয় আম্পায়ার আবার তাঁকে মাঠে ডেকে নেন। আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারেরা। তাঁদের মনে হয়েছিল, আউট ছিলেন ডাকেট।

অস্ট্রেলিয়ার ‘বডিলাইন’ বোলিং

গোটা ম্যাচ জুড়ে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের শরীর লক্ষ্য করে বল করতে থাকেন অস্ট্রেলিয়ার বোলারেরা। শুধু উপরের সারির ব্যাটারদের নয়, নীচের সারির ব্যাটারদেরও বাউন্সার করতে থাকেন প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্কেরা। ১১ নম্বরে নামা ইংল্যান্ডের জেমস অ্যান্ডারসনেরও হেলমেটে বল লাগে। সাধারণত, নীচের সারির ব্যাটারদের বাউন্সার করতে নিষেধ করেন আম্পায়ারেরা। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বোলারেরা কোনও নিয়ম মানেননি। অসি বোলারদের এই নেতিবাচক বোলিংয়ের সমালোচনা হয়েছে।

জনি বেয়ারস্টোর উইকেট

এই বিতর্কে সব থেকে বড় সংযোজন বেয়ারস্টোর উইকেট। ডাকেট আউট হওয়ার পরে ইংল্যান্ডের ইনিংস নির্ভর করছিল বেন স্টোকস ও বেয়ারস্টোর জুটির উপর। ক্যামেরন গ্রিনের বাউন্সার থেকে মাথা বাঁচিয়ে নেওয়ার পর বেয়ারস্টো ভুলেই গিয়েছিলেন বল কোথায়। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। উইকেটরক্ষক ক্যারে সঙ্গে সঙ্গে বল ছুড়ে উইকেট ভেঙে দেন। রান আউট হয়ে যান বেয়ারস্টো। কিছু ক্ষণ ক্রিজে দাঁড়িয়ে থাকার পরে সাজঘরে ফেরেন ইংরেজ ব্যাটার।

ক্রিকেটার-সমর্থক বিবাদ

মাঠের বিবাদ ছড়িয়েছে মাঠের বাইরেও। বেয়ারস্টোর উইকেট মেনে নিতে পারেননি ইংরেজ সমর্থকেরা। মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারেরা যখন সাজঘরে ফিরছিলেন, তখন ইংল্যান্ডের দর্শকেরা চিৎকার করে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের ‘চোর, প্রতারক’ ইত্যাদি সম্বোধনে ডাকতে থাকেন। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারেরা প্রথমে তাতে বিশেষ পাত্তা দেননি। কিন্তু সিঁড়ি দিয়ে উঠে লং রুমে ঢোকার পরেই বিপত্তি ঘটে। সেখানে ছিলেন এমসিসি-র সদস্যেরা। তাঁরা ইংল্যান্ডেরই সমর্থক। তাঁদের মধ্যে কয়েক জন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের উদ্দেশে কিছু বলেন। ডেভিড ওয়ার্নার এবং উসমান খোয়াজা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। তাঁরা পাল্টা দেন। শুরু হয়ে যায় উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়। ঝামেলা থামাতে এগিয়ে আসতে হয় নিরাপত্তারক্ষীদের। তাঁরা ওয়ার্নার, খোয়াজাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। ওই সমর্থকদের থেকে তাঁদের দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। লর্ডস কর্তৃপক্ষের তরফে আবেদন করা হয় ক্রিকেটারদের কোনও ভাবে বিরক্ত বা আক্রমণ না করার জন্যে। তাঁদের সংযত থাকার অনুরোধ করা হয়।

অস্ট্রেলিয়াকে খোঁচা ইংরেজ কোচের

এই পরিস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়াকে খোঁচা মেরেছেন ব্রেন্ডন ম্যাকালাম। সিরিজ়ে ফিরতে মরিয়া তিনি। সোমবার থেকে লন্ডনে শুরু উইম্বলডন। টেনিসের আবহে ইংরেজ কোচের কাছে অ্যাশেজও এখন ঠিক যেন টেনিসের একটি ম্যাচ। তার মধ্যে প্রথম দুই সেটে হেরেছেন তাঁরা। পরের তিনটি সেট জিততে হবে। সেই লক্ষ্যেই বেন স্টোকসদের এগিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছেন তিনি। ম্যাকালাম বলেন, ‘‘প্রথম দু’সেট হেরেছি। কিন্তু এখনও তিনটে সেট আছে আমাদের কাছে। পরের তিন টেস্ট জিততে পারলেই অ্যাশেজ জিতে যাব। আপাতত সে দিকেই লক্ষ্য আমাদের।’’

অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এখন তাঁদের সম্পর্ক খুব একটা ভাল জায়গায় নেই বলেই জানিয়েছেন ম্যাকালাম। লর্ডস টেস্ট লড়াইয়ের উত্তাপ আরও খানিকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। ম্যাকালাম বলেন, ‘‘এখন তো অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের সঙ্গে বসে খোশগল্পের কথা ভাবতেই পারছি না। কারণ, এই টেস্টে ক্রিকেটীয় স্পিরিট ভেঙেছে ওরা। অস্ট্রেলিয়া চাইলে সেটা না করলেও পারত। এর ফলে হয়তো ওরা ম্যাচ জিতেছে, কিন্তু ক্রিকেট দুনিয়ার চোখে ছোট হয়ে গিয়েছে।’’

আগামী ৬ জুলাই থেকে হেডিংলেতে তৃতীয় টেস্টে খেলতে নামবে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। লর্ডসের উত্তাপ সেখানেও ছড়ায় কি না সে দিকেই চোখ থাকবে ক্রিকেট দুনিয়ার।

কিন্তু কেন এই সিরিজ়কে অ্যাশেজ় বলা হয়? তার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক ইতিহাস। যা কিছুটা ব্যাঙ্গাত্মক। খানিকটা শোকেরও। ১৮৮২ সালে ওভালে আয়োজিত টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার কাছে প্রথম হেরেছিল ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার ফ্রেড স্পফোর্থের অনবদ্য বোলিংয়ের কাছে হারতে হয়েছিল ইংরেজদের। চতুর্থ ইনিংসে ৮৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিততে পারেনি তারা। স্পফোর্থ ৪৪ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন। ০-১ ব্যবধানে সিরিজ় হেরে গিয়েছিল। পরের দিন ইংল্যান্ডের সংবাদ পত্র ‘দ্য স্পোর্টিং টাইমস্‌’ তাদের প্রতিবেদনে ক্রিকেট দলের তীব্র সমালোচনা করেছিল। লেখা হয়েছিল, ইংরেজ ক্রিকেটকে চিরস্মরণীয় করে রাখল ওভালের ২৯ আগস্ট, ১৮৮২ তারিখটি। গভীর দুঃখের সাথে বন্ধুরা তা মেনে নিয়েছে। ইংরেজ ক্রিকেটকে ভস্মীভূত করা হয়েছে এবং ছাইগুলো অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া হয়েছে। এর পরের বছর সিরিজ় পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় যায় ইংল্যান্ড। সংবাদমাধ্যমের ব্যঙ্গ মনে রেখে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক আইভো ব্লাই বলেছিলেন, তাঁরা অ্যাশেজ পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন। সে সময় কয়েকজন অস্ট্রেলীয় মহিলা ব্লাইকে আগের সিরিজ়ে পরাজয় নিয়ে পাল্টা ব্যঙ্গ করে ছাই ভর্তি একটি পাত্র দিয়েছিলেন। যাতে ছিল উইকেটের উপরে থাকা বেলের ছাই। তার পর থেকে দু’দেশের টেস্ট সিরিজ় ‘অ্যাশেজ’ বলে পরিচিত হয়। ব্লাই অবশ্য ছাইয়ের সেই আধারটি ব্যক্তিগত উপহার হিসাবে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। বিজয়ী দলকে ট্রফি হিসাবে তা দেওয়া হত না তখন। ব্লাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী লর্ডসে এমসিসি জাদুঘরে সেই পাত্রটি দান করে দিয়েছিলেন।

Ashes 2023 england cricket australia cricket

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।