যশপ্রীত বুমরা এবং মহম্মদ শামির। —ফাইল চিত্র।
ক্রিকেটে ম্যাচ জিততে গেলে সব সময় জুটির বড় ভূমিকা থাকে। ব্যাটারদের মতো বোলারদেরও জুটি হয়। আর টেস্ট ম্যাচ জেতাতে এই বোলিং জুটি সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
ভারতীয় ক্রিকেটের সৌভাগ্য, দারুণ একটা পেস জুটি উঠে এসেছে। যশপ্রীত বুমরা এবং মহম্মদ শামির জুটি। যে কারণে বিদেশের মাঠেও ভারত এখন শাসন করছে। বুধবার কেপ টাউনেও এই জুটির দাপট দেখা গেল। বুমরা ৪২ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট তুলে নিল, শামি ৩৯ রান দিয়ে দুই।
বুমরা-শামি যুগলবন্দি আমাকে অন্য আর একটা জুটির কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। গুপী গাইন-বাঘা বাইন। বাংলা সাহিত্যের অমর ওই জুটির মতোই কার্যকর বুমরা-শামি। এই তুলনাটা করলাম একটা কথা বোঝানোর জন্য। একটা জুটি যখন তৈরি হয়, তখন দু’জনে একে অন্যের পরিপূরক হয়ে ওঠে। গুপীর গানের সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত দিত বাঘার ঢোল। দু’জনে এক সঙ্গে গানবাজনা না করলে কি আর তাদের চিনতাম? বুমরা-শামির ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা তাই। দু’জনে দু’প্রান্ত থেকে ক্রমাগত ব্যাটারদের উপরে চাপ সৃষ্টি করে যায়। বুমরা ওর অভিনব বোলিং অ্যাকশন, দুরন্ত গতি আর বাউন্সে। শামি সিমের ব্যবহার এবং নিখুঁত লাইন-লেংথে। এই সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে পড়ে ব্যাটাররা কাউকে না কাউকে ঠিক উইকেট দিয়ে আসবে।
বুমরা-শামি দু’জনকেই আমি কাছ থেকে দেখেছি। ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে যদি সচিন তেন্ডুলকর এবং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ব্যাটিং জুটি শ্রেষ্ঠত্বের সম্মান পেয়ে থাকে, তা হলে বোলিংয়ে এই মুকুট উঠবে বুমরা-শামির মাথায়। দেশের মাঠে নিষ্প্রাণ উইকেটেও ওরা ভারতের অন্যতম অস্ত্র। আর বিদেশে তো কথাই নেই। এ দিন দু’জনেই আগুনে বোলিং করল। কত বল যে ব্যাটাররা খেলতে গিয়ে ফস্কেছে, ইয়ত্তা নেই। শামি হয়তো দু’উইকেট পেয়েছে। কিন্তু ও যে ভাবে বল করছিল, তাতে আরও কয়েকটা উইকেট পেতেই পারত।
ক্রিকেটে একটা কথা আছে। দলগত প্রচেষ্টাই ম্যাচ জেতায়। আরে, ক্যাচ তো সেই ফিল্ডারকেই ধরবে হবে! এ দিন যেমন শামির বলে দ্বিতীয় স্লিপে বাঁ-দিকে ঝাঁপিয়ে টেম্বা বাভুমার অসাধারণ একটা ক্যাচ ধরল কোহলি। টেস্টে ওর একশোতম ক্যাচ।
জোহানেসবার্গের মতো কেপ টাউনও বড় পরীক্ষা নিচ্ছে ব্যাটারদের। দক্ষিণ আফ্রিকা ২১০ রানে শেষ হয়ে যাওয়ার পরে দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত ৫৭-২। এগিয়ে ৭০ রানে। এই পিচে যে দল স্টাম্প টু স্টাম্প বল রাখতে পারবে, তাদের সফল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
দক্ষিণ আফ্রিকার পিচে একটা অন্য ব্যাপার আছে। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে সেটা দেখেছি। নব্বইয়ের দশকের শেষে আমরা অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিলাম দক্ষিণ আফ্রিকায়। তখনই দেখেছিলাম ব্যাপারটা। ওখানকার পিচে ফাটল থাকে। যেটা ব্যাটারদের সামনে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। অসমান বাউন্স তৈরি হয়। কোন বলটা উঠবে, কোনটা একটু নিচু থাকবে, বোঝা কঠিন। পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকায় সুইংয়ের চেয়ে বেশি হয় সিম মুভমেন্ট। অর্থাৎ সেলাইয়ে পড়ে বল বেশি নড়াচড়া করে, কাট করে। আর ফাটলে পড়লে তো
কথাই নেই।
এ দিনই যেমন ঘটল। দিনের প্রথম ওভারেই দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনার এডেন মার্করামকে ফিরিয়ে দিল বুমরা। মার্করাম বলটা ছাড়তে গিয়েছিল। ও ভেবেছিল, বল বাউন্স করে উইকেটের ওপর দিয়ে চলে যাবে। প্রথম দিন ওই লাইন-লেংথে পড়া বল বিরাট কোহলিও ছেড়েছে। এবং, সেগুলো উইকেটের ওপর দিয়ে চলে গিয়েছে। মার্করামের ক্ষেত্রে বলটা মোটেই প্রত্যাশিত বাউন্স করল না। কাট করে ভিতরে ঢুকে এসে উইকেটে লাগল। পিচে ওই রকম একটা ফাটলে পড়ার ফলে যেটা হল।
ম্যাচ যত গড়াবে, পিচের এই ফাটল তত বাড়বে। দক্ষিণ আফ্রিকা এখানে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করবে। তখন কিন্তু অশ্বিনের উইকেট পাওয়া উচিত। ভুললে চলবে না, কেপ টাউনে আর এক অফস্পিনার হরভজন সিংহের ইনিংসে সাত উইকেট আছে। এই মাঠে স্পিনাররাও সুবিধে পেয়ে থাকে। ইদানীং অশ্বিন নিজেকে নিয়ে খুব পড়ে থাকছে। এ বার সময় এসেছে, বিদেশের মাঠে ভারতকে টেস্ট জেতানোর। দেখা যাক, কেপ টাউনে দ্বিতীয় ইনিংসে অশ্বিনের অফস্পিন আমাদের কী দিতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy