দেশ ছেড়ে যাওয়া ছাড়া তাঁর কাছে আর কোনও উপায় ছিল না। এমনই দাবি করলেন আইপিলের ‘জন্মদাতা’ ললিত মোদী। কোটি কোটি টাকা তছরুপে অভিযুক্ত ললিত সেই ২০১০ সাল থেকে বিদেশি মাটিতে ঘাঁটি গেড়েছেন। দেশছাড়া হওয়ার পিছনে কী কারণ রয়েছে? ১২ বছর পর সে নিয়ে মুখ খুললেন আইপিএলের ‘কলঙ্কিত’ নায়ক।
ঘরের পিচ ছেড়ে অন্য ময়দানে আশ্রয় নেওয়ার পিছনে সংবাদমাধ্যম থেকে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড, সকলকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন ললিত। রবিবার সকালে টুইটারে একটি দীর্ঘ পোস্টে সে সবই জানিয়েছেন তিনি। ললিত লিখেছেন, ‘‘কেন আমি ভারত ছাড়লাম, তা বরাবরই আলোচনার বিষয়। তবে আমার আর কোনও উপায় ছিল না।’’
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে প্রথম আইপিএলের চেয়ারম্যান তথা কমিশনার ছিলেন ললিত। দেশের মাটিতে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে নয়া ধাঁচের এই প্রতিযোগিতা চালুর পিছনে ললিতকেই সিংহভাগ কৃতিত্ব দেওয়া হয়। তবে এককালে বিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি ললিতের ভাবমূর্তিতে ধাক্কা লাগে ২০১০ সালে। তাঁর বিরুদ্ধে আয়কর ফাঁকি-সহ ৪৭০ কোটি টাকা আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এর পরই আইপিএল থেকে তাঁকে বরখাস্ত করে বিসিসিআই। বছর তিনেক পরে তাঁকে ক্রিকেট প্রশাসনের সব পদ থেকেও নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল। সে বছরই দেশ ছেড়ে লন্ডনে পাড়ি দিয়েছিলেন ললিত। আজ পর্যন্ত দেশে ফেরেননি।
আরও পড়ুন:
Here is a picture what I said and why. I had overwhelming comments. And I felt I needed to reply.
— Lalit Kumar Modi (@LalitKModi) November 13, 2022pic.twitter.com/UmIQfpwGkb
ললিতের দাবি, ‘‘আমাদের দেশে আইনি প্রক্রিয়া শুরুর আগেই সংবাদমাধ্যমের শুনানি এবং ফাঁসির সাজায় আমি ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। আমার চারপাশে দিনরাত ২০০ জনের বেশি সাংবাদিক ঘোরাফেরা করতেন, যাঁদের কাজই ছিল, সব কিছু নেড়েঘেঁটে দেখা। এর বিরুদ্ধে দেশে কোনও আইনও নেই। ফলে ওঁরা যা খুশি বলতে পারতেন বা ক্ষমতাসীন সরকার যা বলাতেন, তা-ই বলতেন!’’
সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেও ললিতের দাবি, আদতে সরকারের লক্ষ্য তিনি নন, অন্য কেউ ছিলেন। সে জন্য তথ্য বিকৃতি করে তাঁকে ময়দানে নামার হুমকিও দেওয়া হত। ললিত লিখেছেন, ‘‘পরিস্থিতি যে ভাবে এগোচ্ছিল তাতে আমি জেনে গিয়েছিলাম, কখনই আদালতে যেতে পারব না।’’
আইপিএলে বহু বারই ম্যাচ গড়াপেটার অভিযোগ উঠেছে। ললিতের কথায়ও সে প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। তাঁর দাবি, ‘‘সবচেয়ে উপরে ছিল গড়াপেটা মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য। এ ছাড়া, বিসিসিআইয়ের ভিতরে ঈর্ষাকাতর পরিবেশ। সে সময় সব কিছু ছেড়েছুড়ে বাইরে থেকে লড়াই চালানোই বিচক্ষণতা হবে বলে মনে হয়েছিল। এবং তা-ই করেছিলাম।’’
তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ যে এক বারের জন্যও আদালতে প্রমাণ করা যায়নি, টুইটে তা-ও উল্লেখ করেছেন ললিত। তাঁর দাবি, ‘‘আমি কোনও অন্যায় করিনি। বছরের পর বছর আমার আইনজীবীরা আদালতের শুনানিতে হাজির হয়েছেন। আদালতে আমরা সমস্ত তথ্যপ্রমাণই দিয়েছিলাম।’’
বিসিসিআই থেকে আইপিলের মতো লাভদায়ক টুর্নামেন্ট— সবেতেই যে লোধা কমিশন বা গড়াপেটা মাফিয়ারা কামড় বসাতে চেয়েছিলেন, সে দাবিও করেছেন ললিত। শূন্য থেকে শুরু করে আইপিএলকে বিশ্বমানের প্রতিযোগিতা হিসাবে গড়ে তোলার পিছনে তাঁর নিজের অবদান কতটা, সে ‘বড়াই’ করেছেন তিনি।