Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
joe root

Joe Root: ব্র্যাডম্যানের দেখানো পথ আর ভিডিয়ো বিশ্লেষণ অস্ত্র রুটের

মাঠের বাইরের রুটকে ক’জন চেনেন? যে রুট একনিষ্ঠ সাধনার মধ্যে দিয়ে নিজেকে এই উচ্চতায় নিয়ে এসেছেন?

সাধনা: খারাপ সময় কাটাতে মরিয়া ছিলেন রুট।

সাধনা: খারাপ সময় কাটাতে মরিয়া ছিলেন রুট। ফাইল চিত্র।

কৌশিক দাশ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২২ ০৭:০৭
Share: Save:

তিন টেস্ট, ৩৯৬ রান। গড় ৯৯। সেঞ্চুরি দু’টো। হাফসেঞ্চুরি একটা।

সাড়া জাগানো এই পরিসংখ্যানের মালিকের নাম জো রুট। অধিনায়কত্ব ছাড়ার পরে নিজেকে আবার নতুন করে ফিরে পেয়েছেন তিনি। নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে সদ্য সমাপ্ত সিরিজ়ে নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন অন্য উচ্চতায়। যার প্রমাণ নিউজ়িল্যান্ডের বোলাররা পেয়েছেন তিন টেস্টে।

মাঠের ভিতরের এই রুটকে তো ক্রিকেট বিশ্বের সবাই চেনেন। কিন্তু মাঠের বাইরের রুটকে ক’জন চেনেন? যে রুট একনিষ্ঠ সাধনার মধ্যে দিয়ে নিজেকে এই উচ্চতায় নিয়ে এসেছেন?

বার্মিংহ্যাম টেস্টের আগে সেই রুটের খোঁজ পেতে যোগাযোগ করা হয়েছিল রুট ক্রিকেট অ্যাকাডেমির ডিরেক্টর বেন স্টিফেন্সের সঙ্গে। যিনি প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ককে খুব কাছ থেকে দেখে আসছেন বেশ কিছু বছর ধরে। দেখেছেন, কী ভাবে এক পায়ে ব্যাটিং অনুশীলন করে অতীতে তৈরি করেছিলেন নিজেকে। এ বার রুটের অন্য একটা দিক তুলে ধরেছেন বেন। যেখানে প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে নিজেকে আরও ধারালো করছেন বর্তমান প্রজন্মের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান।

কী সেই প্রযুক্তি? একটি ভিডিয়ো বিশ্লেষণ। অন্যটি, মাইক্রো বল ফিডার।

বেনের কথাতেই জানা গেল, মাঝের খারাপ সময়টা কাটাতে কতটা মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন রুট। আর ছন্দে ফিরতে সাহায্য নিয়েছিলেন ভিডিয়ো বিশ্লেষকের। দু’জনের আলোচনার বিষয়বস্তু কী ছিল, তাও জানিয়েছেন বেন। ইংল্যান্ড থেকে ফোনে বলছিলেন, ‘‘রুটের যতগুলো আউটের ভিডিয়ো জোগাড় করা সম্ভব, তা করেছিল ভিডিয়ো বিশ্লেষক। তার পরে দু’জনে মিলে কাটাছেঁড়া করেছিল ওই আউটগুলো। রুট দেখতে চেয়েছিল, কোথায় ভুল করে ওআউট হচ্ছে।’’

অনেক ক্রিকেটার ছন্দে ফিরে আসতে নিজের সেরা ইনিংসগুলোর ভিডিয়ো দেখেন। যাতে আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে। রুট একেবারে অন্য প্রকৃতির। তিনি খুঁজতে চেয়েছিলেন নিজের ভুল। কোন শটটা বার বার খেলে আউট হচ্ছেন, ফুটওয়ার্কে কী গন্ডগোল হচ্ছে, বল ছাড়ার মুহূর্তে স্পিনারদের ‘গ্রিপ’টা কেন ঠিক বুঝতে পারছেন কি না, এ সব খুটিয়ে দেখেন রুট। এর পরে নিজের দুর্বলতাগুলো নোটবুকে তুলে চলে সে সব ঠিক করার জন্য মরিয়া চেষ্টা। বেন বলছিলেন, ‘‘ঘণ্টার পর ঘণ্টা নেটে অনুশীলন করত রুট। যে শটটা খেলতে গিয়ে আউট হয়েছে, সেটা নিখুঁত করার চেষ্টা চালিয়ে যেত। আর এই পরিশ্রমের ফল আবার দেখা গেল নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ়ে।’’

গত কয়েক মাসে রুট নিজেকে ডুবিয়ে রেখেছিলেন আরও একটা উদ্ভাবনে। যার নেপথ্যে ছিল একশো বছর আগে ডন ব্র্যাডম্যানের অনুশীলন পদ্ধতি। গল্‌ফ বল আর স্টাম্প নিয়ে ব্যাটিং! ডনের দেখানো সেই রাস্তায় হেঁটেই সাফল্যের খোঁজে ছিলেন তিনি।

রুট অ্যাকাডেমির ইঞ্জিনিয়ার, রুট নিজে, তাঁর ভাই মিলে একটা মেশিনের নকশা তৈরি করেন। যার ফলশ্রুতি, মাইক্রো বল ফিডার। কী কাজ এই মেশিনের? বেনের ব্যাখ্যা, এটাও এক ধরনের বোলিং মেশিন। কিন্তু সাধারণ ক্রিকেট বলের বদলে গল্‌ফ বলের আয়তনের বল ছুটে আসবে ব্যাটসম্যানের দিকে। এবং, আসবে অনেক দ্রুত গতিতে। যা ব্যাটসম্যানের ক্ষিপ্রতা আরও বাড়িয়ে দেবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

এই মাইক্রো বল মেশিন তৈরির নেপথ্যে ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়কের মস্তিষ্কই সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে। রুট নিশ্চিত, এ রকম ছোট বলে খেলে ব্যাটসম্যানের রিফ্লেক্স অনেক বেড়ে যাবে। অতীতে মাইক্রো বলে অনুশীলন করে রুট দেখেছেন, এর বাউন্স অনেক বেশি। ফলে বাউন্স সামলানোটাও রপ্ত হয়ে যাবে ব্যাটসম্যানের। বেন বলছিলেন, ‘‘নিঃসন্দেহে বলতে পারি ব্যাটসম্যানদের আরও নিখুঁত করে তুলবে এই মাইক্রো বল ফিডার। যে কারণে রুট এত বেশি আগ্রহী এই বিশেষ ধরনের বোলিং মেশিনে। এর নকশা তৈরি করতে রুট অনেক সময় ব্যয় করেছে।’’ তবে বেন এটা বলতে ভুলছেন না, ‘‘গল্‌ফ বলে ক্রিকেট অনুশীলন করার পথিকৃত তো এক জনই। একশো বছরেরও বেশি আগে ব্র্যাডম্যান আমাদের ওই রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছেন। আমরা সেটা প্রযুক্তির মাধ্যমে সবার কাছে তুলে ধরছি।’’

শুক্রবার থেকে শুরু বার্মিংহ্যাম টেস্টে তাই ভারতীয় বোলারদের এমন এক জো রুটকে সামলাতে হবে, যিনি নিজেকে প্রযুক্তির সাহায্যে আরও নিখুঁত করে তুলেছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

joe root England Sir Don Bradman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE