Advertisement
E-Paper

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন রোহিতেরা! অভিযোগ ঠিক? উত্তর খুঁজল আনন্দবাজার অনলাইন

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দুবাইয়ের একটি মাঠে সব ম্যাচ খেলছে ভারত। প্রতি ম্যাচে ভারতীয় দলকে পিচের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হচ্ছে না। সফরও করতে হচ্ছে না। সত্যিই বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন রোহিতেরা?

picture of Rohit Sharma

রোহিত শর্মা। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:৪৫
Share
Save

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে ভারতীয় দল। পাকিস্তান আয়োজক হয়ে যতটা ঘরের মাঠে খেলার সুযোগ পাচ্ছে, তার থেকে বেশি ভারত চেনা মাঠে খেলার সুযোগ পাচ্ছে। প্রতিযোগিতার এক সপ্তাহের মধ্যেই এই অভিযোগ উঠেছে। প্যাট কামিন্স, নাসের হুসেন, মাইক আর্থারটনের মতো ক্রিকেটব্যক্তিত্বেরা এ জন্য দুষেছেন ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলকে (আইসিসি)। রোহিত শর্মার দল কি সত্যিই বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে? জয় শাহ আইসিসি চেয়ারম্যান হওয়ায় সম্ভবত আরও বেশি কথা উঠছে।

সাদা চোখে দেখলে সামান্য সুবিধা পাচ্ছে ভারতীয় দল। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী সব দলকেই অন্তত দু’টি শহরে খেলতে হচ্ছে গ্রুপ পর্বের ম্যাচ। ভারতের গ্রুপে থাকা বাকি তিনটি দেশকে খেলতে হচ্ছে দু’টি দেশ ঘুরে। সেখানে ভারতীয় দল ম্যাচগুলি খেলছে শুধু দুবাইয়ে। একই মাঠে প্রতিযোগিতার সব ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছেন রোহিতেরা। অন্য দলগুলির মতো একাধিক শহরে যাতায়াত করতে হচ্ছে না ভারতীয় দলকে। এতে দু’টি ম্যাচের মাঝে বিশ্রামের সুযোগ বেশি পাচ্ছেন বিরাট কোহলি, শুভমন গিল, মহম্মদ শামিরা। একই ধরনের পিচে এবং পরিবেশেও খেলার সুযোগ পাচ্ছে ভারত। প্রতিযোগিতার বাকি দলগুলি এই সুবিধাও পাচ্ছে না। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) পাকিস্তানে দল পাঠাতে রাজি না হওয়ায় আয়োজক পাকিস্তানও ঘরের মাঠে খেলার সুযোগ পায়নি ভারতের বিরুদ্ধে। ভারতের বিরুদ্ধে যারা সেমিফাইনাল খেলবে, তাদেরও যেতে হবে দুবাইয়ে। রোহিতেরা ফাইনালে উঠলে খেতাবি লড়াই হবে না পাকিস্তানে। আপাত ভাবে দেখলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির হাইব্রিড মডেলের সুফল পাচ্ছে ভারতীয় দল, যা নিয়ে সরব একাধিক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ।

সমাজমাধ্যমে ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক নাসের হুসেন বলেছেন, ‘‘প্রথম একাদশ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বড় সুবিধা পাচ্ছে ভারত। একই মাঠে সব ম্যাচ খেলছে ওরা। অন্য দলগুলিকে বিভিন্ন মাঠে খেলতে হচ্ছে। পিচের চরিত্র বুঝে দল বাছতে হচ্ছে। ভারতের সেই সমস্যা নেই। একই দল খেলিয়ে যেতে পারছে।’’ ইংল্যান্ডের আর এক প্রাক্তন অধিনায়ক আর্থারটন বলেছেন, ‘‘ভারত অবশ্যই বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে। একই জায়গায় সব ম্যাচ খেলছে। ভারত কতটা সুবিধা পাচ্ছে, তা পরিমাপ করা কঠিন। তবে এই সুবিধা অনৈতিক।’’ চোটের জন্য চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে না পারা অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক কামিন্স বলেছেন, ‘‘নিঃসন্দেহে ভারত বিরাট একটা সুবিধা পাচ্ছে। সব ম্যাচ ওরা একই মাঠে খেলছে। এমনিতেই ভারতকে দেখে যথেষ্ট শক্তিশালী মনে হচ্ছে। পাশাপাশি একই মাঠে সব ম্যাচ খেলায় আলাদা করে সুবিধাও পেয়ে যাচ্ছে। ভারতকে এ ভাবে মাঠ বেছে নেওয়ার সুবিধা দেওয়া আইসিসির ঠিক হয়নি।” যদিও পরে তিনি দাবি করেন, তাঁর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

কামিন্স সুর নরম করলেও বিতর্ক কমছে না। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হাইব্রিড মডেলে হবে, আইসিসি এই সিদ্ধান্ত জানানোর পরই শুরু হয়েছিল গুঞ্জন। ক্রিকেট মহলের একটা অংশ থেকে বলা হচ্ছিল, ভারত ছাড়া অন্য দলগুলির ক্রিকেটারেরা বিশ্রামের সুযোগ অনেক কম পাবেন, যা প্রভাবিত করতে পারে দলগুলির পারফরম্যান্সকে। ক্রিকেট মহলের একটা অংশ আবার বলছে, প্রতিযোগিতার দল নির্বাচনেও বাড়তি সুবিধা পেয়ে গিয়েছে ভারত। একই মাঠে সব ম্যাচ হওয়ায় নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে ১৫ জনের দল নির্বাচন করা হয়েছে। নিশ্চিন্তে দলে পাঁচ জন স্পিনার রাখতে পেরেছেন অজিত আগরকর, গৌতম গম্ভীরেরা।

পাকিস্তান এবং দুবাইয়ের পিচের চরিত্র আলাদা। পাকিস্তানের পিচগুলিতে ব্যাটারেরা যতটা সুবিধা পাচ্ছেন, দুবাইয়ে তা পাচ্ছেন না। দুবাইয়ে ২৫০-৬০ রান করলেও ম্যাচ জেতা যাচ্ছে। পাকিস্তানে ৩০০-র বেশি করেও নিশ্চিত থাকা যাচ্ছে না। ভারত ছাড়া সব দলকে প্রায় সব ম্যাচেই পিচের চরিত্রের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হচ্ছে নতুন করে।

ভারতীয় দল কি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সত্যিই বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে? যতটা প্রচার করা হচ্ছে, ততটা বোধহয় নয়। দুবাইয়ের পিচে স্পিনারেরা কিছুটা সুবিধা পাচ্ছেন ঠিক কথা। সেমিফাইনালে আফগানিস্তান সামনে পড়লে বেশ কঠিন হতে পারে লড়াই। নিউ জ়িল্যান্ডের সঙ্গেও সমস্যায় পড়তে পারে ভারতীয় দল। মিচেল স্যান্টনারের দলে বেশ কয়েক জন বাঁহাতি ব্যাটার রয়েছেন। তাই প্রথম দু’ম্যাচের মতো তিন জন বাঁহাতি স্পিনার নিয়ে খেলার ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব নয়। ফলে জয়ী একাদশে পরিবর্তন করতেই হবে গম্ভীরকে। ওয়াশিংটন সুন্দর বা বরুণ চক্রবর্তীর মধ্যে কাউকে আনতে হবে প্রথম একাদশে। গ্রুপ পর্ব ছাড়াও নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ফাইনালেও খেলতে হতে পারে রোহিতদের। তাই চিন্তা থাকছেই। শুধু পিচের চরিত্র দেখে প্রথম একাদশ তৈরি করা যায় না। প্রতিপক্ষ দলে কত জন বাঁহাতি এবং ডানহাতি রয়েছেন, সে দিকেও নজর রাখতে হয়।

শুধুই কি তাই? গত এক দিনের বিশ্বকাপ ভারত ঘরের মাঠে খেললেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। সে বার সবচেয়ে বেশি সফর করতে হয়েছিল রোহিতদেরই। বিসিসিআই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভারতের ম্যাচগুলি আয়োজন করেছিল সমর্থকদের স্বার্থে। আয়োজক দেশ হয়েও ভারতীয় দল সবচেয়ে কম বিশ্রাম পেয়েছিল। তবু ফাইনালের আগে পর্যন্ত সব ম্যাচ জিতেছিলেন রোহিতেরা।

দুবাইয়ের মতো পিচেই ২০২৩ সালে এক দিনের বিশ্বকাপ ফাইনাল হয়েছিল। অহমদাবাদের সেই ম্যাচ অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছিল ভারত। আবার শ্রীলঙ্কা সফরে একই রকম পিচে ব্যর্থ হয়েছিলেন রোহিতেরা। পিচের চরিত্র এক হলেও ভারতীয় দলকে খেলতে হচ্ছে বিদেশের মাটিতেই। মাঠ এক হলেও রোজ এক পিচে খেলা হচ্ছে না। কিছুটা হলেও বদলে যাচ্ছে পিচের চরিত্র। তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হচ্ছে ভারতের ক্রিকেটারদের। আসল কথা হল পারফরম্যান্স। আধুনিক পেশাদার ক্রিকেটে তিন-চার ঘণ্টার বিমানসফর ক্লান্তির অজুহাত হতে পারে না। বিভিন্ন মাঠের পিচের চরিত্র এবং শিশির সম্পর্কিত যথেষ্ট তথ্যও থাকে দলগুলির কাছে। নির্দিষ্ট দিনে যে দল ভাল পারফর্ম করে, তারাই জেতে। পিচ থেকে দু’দলের ব্যাটার বা বোলারেরাই সুবিধা পান। তাই কোনও ম্যাচেই ভারতীয় ক্রিকেটারেরা বাড়তি কোনও সুবিধা পাচ্ছেন না। তা ছাড়া সাদা বলের ক্রিকেটে যে কোনও দিন যে কোনও দল জিততে পারে। যেমন গত এক দিনের বিশ্বকাপেই আফগানিস্তানের কাছে হারতে হয়েছিল ইংল্যান্ড, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কাকে।

ICC Indian Cricket team Dubai Rohit Sharma

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}