কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতের সঙ্গে আন্দ্রে রাসেলরা। ছবি: টুইটার
গত বছর এশিয়া কাপের সময় ক্রিস সিলভারউড সাজঘর থেকে সঙ্কেত পাঠিয়েছিলেন। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কার কোচের সেই কাণ্ড যদিও নতুন কিছু নয়। আগেও সিলভারউডকে এমন করতে দেখা গিয়েছে। বিভিন্ন কোচ চিরকুটের মাধ্যমে মাঠে অধিনায়ক বা অন্য কোনও ক্রিকেটারকে সঙ্কেত পাঠিয়েছেন। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কি অধিনায়কের থেকে কোচের গুরুত্ব বেশি হয়ে যাচ্ছে?
আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্স অধিনায়ক বেছে নিয়েছে নীতীশ রানাকে। তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার তেমন অভিজ্ঞতাই নেই। অধিনায়ক হিসাবে খেলেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে। তাঁর উপর দায়িত্ব রয়েছে আন্দ্রে রাসেল, টিম সাউদি, সুনীল নারাইনের মতো বড় নামকে সামলানোর।
শুধু কলকাতা নয়, আইপিএলে অনেক দলেরই অধিনায়ক তেমন বড় নাম নয়। রাজস্থান রয়্যালস দলে এক সময় শেন ওয়ার্ন, রাহুল দ্রাবিড়, শেন ওয়াটসন, অজিঙ্ক রাহানে, স্টিভ স্মিথের মতো অধিনায়করা ছিলেন। এখনও সেই দলে জস বাটলার, জেসন হোল্ডার, জো রুটের মতো অধিনায়করা রয়েছেন। সেখানে রাজস্থানের অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসন।
লখনউ সুপারজায়ান্টসের অধিনায়ক লোকেশ রাহুল। তিনি ব্যাটার হিসাবে আইপিএলে সফল হলেও অধিনায়ক হিসাবে নন। তার পরেও তাঁকেই অধিনায়ক রেখে দিয়েছে লখনউ। শিখর ধাওয়ানকে অধিনায়ক করেছে পঞ্জাব কিংস। তিনিও অধিনায়ক হিসাবে খুব বড় নাম নন। একাধিক দলে এমন হওয়ায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অধিনায়কের গুরুত্ব কমে যাচ্ছে কি না।
গত বার গুজরাত টাইটান্স অধিনায়ক করে হার্দিক পাণ্ড্যকে। তার আগে পর্যন্ত অধিনায়ক হিসাবে হার্দিকের নাম শোনা যায়নি। সেই সময় দেখা গিয়েছিল ম্যাচ চলাকালীন নোট লিখছেন আশিস নেহরা। জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছিলেন, “রাতের খাবারের তালিকা।” অনেকের ধারণা সেই তালিকায় ছিল দলের কে কখন বল করবেন। ডাগআউট থেকে হার্দিককে বার বার হাত নেড়ে নির্দেশ দিতেও দেখা গিয়েছে নেহরাকে। কোন বোলারকে কত ওভার করানো উচিত থেকে, কখন পেসার, কখন স্পিনারকে দিয়ে বল করানো হবে, সেই সব কিছুই নির্দেশ দিতেন নেহরা। হার্দিকও সে সব ভাল ভাবেই মেনে চলতেন। হার্দিকের ছোটবেলার কোচ জিতেন্দ্র সিংহ বলেন, “হার্দিকের মনে কোনও ইগো নেই। বিজ্ঞাপনে হার্দিককে যেমন দেখানো হয়, আসলে ও তার থেকে আলাদা। হার্দিক খুব ভাল শ্রোতা। ও হয়তো নিজের মতো কাজ করবে কিন্তু তার আগে সকলের পরামর্শ শুনবে।”
কলকাতা দলেও টিম সাউদি, শাকিব আল হাসানের মতো ক্রিকেটাররা রয়েছেন, যাঁরা আন্তর্জাতিক দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের বাদ দিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নীতীশের হাতে। কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত থাকছেন বাইরে থেকে নির্দেশ দেওয়ার জন্য। মাঠে থাকবেন শাকিব, রাসেল, সাউদিরা। নীতীশ নিজেও বলেছেন তাঁদের থেকে সাহায্য নেবেন। অর্থাৎ, সকলের সঙ্গে কথা বলেই অধিনায়ক চলবেন।
ঘরোয়া ক্রিকেটে পণ্ডিত দাপুটে কোচ বলেই পরিচিত। দলে তাঁর কথাই শেষ কথা বলে দেখে এসেছে ঘরোয়া ক্রিকেট। বাংলার সহকারী কোচ সৌরাশিস লাহিড়ী মনে করছেন এই কারণেই রাসেলদের বাদ দিয়ে নীতীশকে অধিনায়ক করা হয়েছে। সৌরাশিস বললেন, “টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কোচদের ভূমিকা অবশ্যই বাড়ছে। কেকেআরে পণ্ডিত রয়েছেন। তাঁর ধরনই হচ্ছে দলকে নিজের মতো করে চালনা করা। নীতীশ অধিনায়ক হলে সেটা অনেক সহজে সম্ভব বলে মনে হয়। তা ছাড়া ইমপ্যাক্ট প্লেয়ারের নিয়ম এসেছে। সব দলেই কোচের ভূমিকা আরও বাড়বে। তিনি বাইরে থেকে পুরো খেলাটা দেখতে পারছেন। মাঠে অধিনায়কের পক্ষে সেটা সম্ভব হয় না।”
ফুটবলে মাঠে ১১ জন খেলছেন আর বাইরে থেকে চিৎকার করছেন কোচ। এই দৃশ্য খুবই পরিচিত। ফুটবল মাঠে অধিনায়কের ভূমিকা খুব বড় হয় না। কোচরাই চালনা করেন দলকে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও কি সেটাই দেখা যেতে চলেছে? ম্যাচের রাশ কি ক্রিকেটেও থাকবে কোচদের হাতে? বাংলার প্রাক্তন কোচ অরুণ লাল বললেন, “এটা বলা কঠিন। তবে মাঠে দাঁড়িয়ে একজন অধিনায়ক যা দেখছে, সেটার থেকে কোচ বাইরে থেকে অনেক কিছু দেখার এবং ভাবার সময় পায়। আমার মনে হয় যদিও ভবিষ্যতে অধিনায়কের সঙ্গে কোচের কথা বলার সুযোগ ক্রিকেটেও করা হয় তাতে লাভই হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy