Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Rohit Sharam

ভারত বনাম আইপিএল! কোহলি, রোহিতদের বাদ দিয়েই কি কোটিপতি লিগ?

একের পর এক ক্রিকেটার চোট পেয়েছেন। রজার বিন্নী বোর্ড প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যশপ্রীত বুমরাকে মাত্র দু’টি ম্যাচ খেলতে দেখেছেন। তাতে সব মিলিয়ে মাত্র ছ’ওভার বল করেছেন ভারতীয় পেসার।

Rohit Sharma

ভারতীয় দল এবং আইপিএলে খেলার চাপ বাড়ছে ক্রিকেটারদের উপর। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৩ ০৯:৩৪
Share: Save:

আইপিএল শুরুর ঠিক আগে জোর সংঘাত। কোটিপতি লিগের সঙ্গে লেগে গেল খোদ ভারতীয় ক্রিকেটের। কারণ, একের পর এক ভারতীয় ক্রিকেটারের চোট নিয়ে রজার বিন্নীর কড়া মনোভাব। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি প্রবল ভাবে চাইছেন, যাঁরা ভারতীয় দলে নিয়মিত খেলেন, সেই রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা যেন আইপিএলের পথ না মাড়ান। জয় শাহদের সামনে বিন্নী তুলে ধরছেন অস্ট্রেলিয়ার মডেল।

কী চাইছেন বিন্নী

চেতেশ্বর পুজারা ছাড়া আইপিএলে প্রায় সব ভারতীয় ক্রিকেটার খেলেন। এ বারও খেলবেন। বিশ্বকাপের আগে যা এখন চিন্তার কারণ হয়ে গিয়েছে বোর্ড প্রধানের। আবার যদি কোনও ক্রিকেটার চোট পান, তা হলে তাঁকে ছাড়া বিশ্বকাপ খেলতে হতে পারে। অথবা বিশ্বকাপের ঠিক আগে সুস্থ হলে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ছাড়াই নামতে হতে পারে। জানা গিয়েছে, এই অবস্থায় বিন্নী চাইছেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা আইপিএলে না খেলুক। কিন্তু বোর্ড প্রধানের এমন ইচ্ছা আদৌ আইপিএলের দলগুলি মানতে চাইবে কি না সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। জানা গিয়েছে, এর মধ্যে ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের সঙ্গে বিন্নীর এই নিয়ে বৈঠক করারও কথা ছিল। শাহরুখ খান, মুকেশ অম্বানিরা যে কোনও ভাবেই এই প্রস্তাব মানবেন না, তা বলাই বাহুল্য। আইপিএলের দলগুলি কোনও ভাবেই রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের বসিয়ে রাখতে চাইবে না। বিপুল টাকা খরচ করে দল তৈরি করেছে তারা। সেখানে সেরা ক্রিকেটারদের বসিয়ে রাখতে কেন রাজি হবে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলি। বোর্ড সভাপতি অস্ত্র হিসাবে তৈরি রেখেছেন অস্ট্রেলিয়াকে।

অস্ট্রেলীয় মডেল কী

আইপিএলে ক্রিকেটারদের খেলতে পাঠানোর ব্যাপারে বেশ কিছু কড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া বোর্ড। গত বছর আইপিএল শুরু হয়ে যাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা এসেছিলেন। তত দিনে প্রতিটি দল প্রায় তিন থেকে চারটি ম্যাচ খেলে ফেলেছিল। অস্ট্রেলিয়া বোর্ড প্যাট কামিন্সদের ছাড়েনি। তাঁদের ম্যাচ না থাকলেও ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। কোপ পড়েছে আইপিএলের সময় বিজ্ঞাপন করার ক্ষেত্রেও। ২০২১ সালের পর থেকে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা আইপিএল খেলতে এলেও কোনও বেটিং সংস্থা, মদ, স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর খাবার এবং তামাক জাতীয় বস্তুর বিজ্ঞাপনের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন না। শুধু তাই নয়, আইপিএলের বিজ্ঞাপনী প্রচারে কোনও একটি বিগ ব্যাশ দলের একাধিক ক্রিকেটার বা অস্ট্রেলিয়ার কোনও একটি প্রদেশের একাধিক ক্রিকেটারকে ব্যবহার করার উপরেও নিষেধাজ্ঞা আছে। অস্ট্রেলিয়া বোর্ডের বক্তব্য, একটা বিজ্ঞাপনের শুটিং করতে প্রচুর সময় লাগে। ফলে বিজ্ঞাপন করলে ক্রিকেটারদের অনুশীলন এবং বিশ্রামের সময় কমে যায়। এটা খুব ভাল ভাবে নেয়নি আইপিএলের দলগুলি। সেই সময় বোর্ডকে ব্যাপারটি জানানোর কথাও বলেছিল তারা।

Jasprit Bumrah

চোটের কারণে বহু দিন মাঠের বাইরে যশপ্রীত বুমরা। —ফাইল চিত্র

২০২১ সালে ভরা করোনার মধ্যেও আইপিএল হয়েছিল। সেটাও ভাল ভাবে নেয়নি অস্ট্রেলিয়ার সরকার। সে বার আইপিএল থেকে ফেরার ব্যবস্থা ক্রিকেটারদের করে নিতে বলা হয়েছিল। সে দেশের সরকার বা বোর্ড পাশে দাঁড়ায়নি। আইপিএল খেলতে আসাই যেন দোষ হয়েছিল। দেশে ফেরার ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের।

বিন্নী কী বলছেন

ভারতীয় বোর্ড নিজের দেশের ক্রিকেটারদের উপর এত কঠোর অবশ্যই হবে না। যে আইপিএল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কোষাগারে কোটি কোটি টাকা এনে দেয়, সেখানে নিজের দেশের ক্রিকেটারদের খেলা আটকানো যে কঠিন তা জানেন বিন্নী। কিন্তু তিনি ভয় পাচ্ছেন আইপিএল খেলতে গিয়ে একাধিক ভারতীয় ক্রিকেটার চোট পেলে এবং বিশ্রামের অভাবের কারণে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে না পারলে ভারতীয় দলের ক্ষতি হবে। পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া যদি আইপিএলকে সরিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে গুরুত্ব দেয়, তা হলে ভারতও কেন সেটা করতে পারবে না সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

গত বছর ১৮ অক্টোবর বিসিসিআইয়ের প্রধানের দায়িত্ব নেন রজার বিন্নী। সেই দিনই তিনি বলেছিলেন, “ক্রিকেটারদের বার বার চোট পাওয়া খুব চিন্তার কারণ। কী ভাবে ক্রিকেটারদের চোট পাওয়া কমানো যায়, সে দিকে নজর দেব। বেঙ্গালুরুতে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ভাল মানের চিকিৎসক ও ফিজিয়ো রয়েছেন। তাঁদের কাজে লাগাতে চাই। আমি এর শেষ দেখে ছাড়তে চাই।” কিন্তু চোট কমেনি। একের পর এক ক্রিকেটার চোট পেয়েছেন। বিন্নী বোর্ড প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যশপ্রীত বুমরাকে মাত্র দু’টি ম্যাচ খেলতে দেখেছেন। তাতে সব মিলিয়ে মাত্র ছ’ওভার বল করেছেন ভারতীয় পেসার।

ভারতীয় দলে কার কার চোট

শুধু বুমরা নয়, ভারতীয় দলে চোট সমস্যা কিছুতেই যাচ্ছে না। শ্রেয়স আয়ার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পুরো টেস্ট সিরিজ় খেলতে পারেননি। বুমরা দীর্ঘ দিন মাঠের বাইরে। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ, দীপক চাহারদেরও চোট রয়েছে। এত ক্রিকেটারের চোটের কারণে বিশ্বকাপের দল গড়াই কঠিন হয়ে যাচ্ছে ভারতের কাছে। বছরের শুরুতে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের পরিকল্পনা ছিল ১৮-২০ জনের দল বেছে নিয়ে বিশ্বকাপ পর্যন্ত তাঁদের নিয়ে খেলা। গত বারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মতো দল বাছাই নিয়ে আবার সমালোচনার মুখে পড়তে রাজি ছিল না বোর্ড। কিন্তু যেমন ভাবা, তেমন কাজ হয়নি। সব পরিকল্পনা ঘেঁটে গিয়েছে। ৩১ মার্চ থেকে শুরু হবে আইপিএল। ফাইনাল হবে ২৮ মে। দু’মাস ধরে চলবে এই প্রতিযোগিতা। অক্টোবরে দেশের মাটিতে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপের আগে পরিকল্পনা আরও ঘাঁটবে বলে আশঙ্কা বিন্নীর।

শুধু তা-ই নয়, আইপিএল শেষ হলেই ভারত খেলতে যাবে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল। সেটার পরেও একাধিক সিরিজ় এবং এশিয়া কাপ রয়েছে বিশ্বকাপের আগে। তখন কোনও সিনিয়র ক্রিকেটার বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পাবেন না। বিশ্বকাপের আগে নিজেদের তরতাজা রাখতে আইপিএলের সময়টাই সেরা সুযোগ ছিল বলে মনে করছেন বিন্নী।

Hardik Pandya

চোট সারিয়ে মাঠে ফিরে এসেছেন হার্দিক পাণ্ড্য। —ফাইল চিত্র

হার্দিক পাণ্ড্যর বক্তব্য

গত বার চোট সারিয়ে আইপিএলে ফিরে চমকে দিয়েছিলেন হার্দিক। গুজরাতকে আইপিএল জিতিয়েছিলেন ভারতীয় অলরাউন্ডার। তাঁর নেতৃত্বও প্রশংসিত হয়েছিল। ভারতীয় দলও আগামী দিনে তাঁকে সাদা বলের অধিনায়ক করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। একাধিক ক্রিকেটারের চোট সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি স্বাভাবিক ভাবেই আইপিএলের ধারেকাছে যাননি। হার্দিক শুধু বলেন, “দলের স্ট্রেংথ এবং কন্ডিশনিং কোচের উপর ভরসা রাখতে হবে। আমি তাঁকে বিশ্বাস করি। কোন ক্রিকেটার খেলার মতো জায়গায় রয়েছে, বা কে নেই সেটা তিনিই সব থেকে ভাল বুঝতে পারেন। কোনও ক্রিকেটারকে যদি বিশ্রাম দেওয়া হয় তাতে কারও আপত্তি থাকে না। সকলে জানে তাদের ভালর জন্যই সেটা করা হচ্ছে। ক্রিকেটারদের উপরও এই ভরসা আমাদের আছে। ক্রিকেটারদের উপর ম্যানেজমেন্ট ভরসা রেখেছে। সেই কারণেই আমার মনে হয় বিশ্রাম নেওয়ার পর আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ফিরে আসে ক্রিকেটাররা।”

বোর্ডের বাকি কর্তাদের আঙুল কার দিকে

বোর্ডের একটা অংশ যদিও আইপিএলের দিকে আঙুল তুলছে না। ক্রিকেটারদের চোট পাওয়া নিয়ে বরং জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিকে দুষছে তারা। বোর্ডের সূত্র এক ইংরাজি দৈনিককে জানিয়েছে যে, “বিশ্রাম দেওয়ার পরেও একাধিক ক্রিকেটার এই ভাবে চোট পেলে বাছাই করা ক্রিকেটার নিয়ে খেলার কথা কী করে ভাবা হবে? জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিকে এটা বলা হয়েছে। দল এবং নির্বাচকরা অন্য ক্রিকেটারদের তৈরি রাখার কথাও ভাবতে শুরু করে দিয়েছে। এটার দায় কাউকে তো নিতে হবে।”

বোর্ডের একটা অংশ জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির দিকে বল ঠেলে আইপিএলকে বাঁচাতে চাইছে। তাদের যুক্তি, আইপিএল থেকেই বোর্ডের আসল লাভ। এতটাই লাভ যে করোনার সময় বোর্ড আইপিএল আয়োজন করার পিছনে প্রচুর পরিশ্রম করলেও রঞ্জি ট্রফি আয়োজন একটি বছর ঘরোয়া ক্রিকেটের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতাটাই খেলতে পারেননি জয়দেব উনাদকটরা।

সব মিলিয়ে যা পরিস্থিতি, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের আয়োজন করা আইপিএলই এখন ভারতীয় ক্রিকেটের সবথেকে বড় শত্রু হয়ে গিয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Team India BCCI NCA IPL 2023 Roger Binny
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy