সাইকা ইশাকের সঙ্গে তাঁর কোচ শিবসাগর সিংহ। ছবি: সংগৃহীত।
মুম্বইয়ে ভারতের জার্সিতে তখন প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছেন সাইকা ইশাক। পার্ক সার্কাসের মেয়ে ভারতের জার্সি পরে যখন ইংল্যান্ডের ব্যাটারদের স্পিনের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছেন, তখন তাঁর কোচ শিবসাগর সিংহের মনে পড়ে যাচ্ছিল আড়াই বছর আগের একটা ফোন কলের কথা। আনন্দবাজার অনলাইনকে সেই কথাই জানালেন সাইকার কোচ।
সাইকার উত্থানের পিছনে বড় ভূমিকা রয়েছে শিবসাগরের। এক সময় বাংলা দল থেকেই বাদ পড়ে যাওয়া সাইকা তাঁর হাত ধরেই ঘুরে দাঁড়ান। সেখান থেকে শুধু বাংলা নয়, ভারতের জার্সিও বুধবার পরা হয়ে গেল বাংলার বোলারের। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছেন সাইকা। তিনি চাইতেন মেয়ে ক্রিকেট খেলুক। বাবার সেই স্বপ্ন পূরণ করেছিলেন অনেক আগেই। এ বার ভারতের জার্সিতে নেমে পড়লেন সাইকা। কোচ শিবসাগর বললেন, “আড়াই বছর আগে রাত ১০টা নাগাদ আমার কাছে মোবাইলে একটা ফোন এসেছিল। হতাশ গলায় শুনিয়েছিল বাদ পড়ার কথা। কিছু দিন আগে ওই রাত ১০টা নাগাদ আবার সেই ফোন। এ বার উচ্ছ্বাস। ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার কথা জানাল। আড়াই বছরে সাইকার জীবনটাই পাল্টে গিয়েছে।”
উইমেন্স প্রিমিয়ার লিগে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে খেলেছিলেন সাইকা। ১৫টি উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। আর দু’টি উইকেট নিলেই প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হতে পারতেন। সেটা না হলেও তাঁর দল প্রতিযোগিতা জিতে নিয়েছিল। সেই দলের অধিনায়ক ছিলেন হরমনপ্রীত কৌর। বুধবার তাঁর নেতৃত্বেই আরও একটি ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন সাইকা। শুধু এ দিন তাঁর গায়ে ছিল ভারতীয় দলের জার্সি। শিবসাগর বললেন, “ভারতের হয়ে খেলতে যাওয়ার আগে আমার কাছে এসেছিল অনুশীলন করতে। আমি সেই সময় বলেছিলাম বাড়তি কিছু করার প্রয়োজন নেই। ভারতের হয়ে খেলা মানে শুধু জার্সিটা বদল হবে। যে ভাবে বল করে ভারতের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছে, সেটাই অনুশীলন করে যেতে বলেছিলাম।”
পার্ক সার্কাসে বাড়ি সাইকার। বাবা মারা যাওয়ার পর তিন ভাইবোন মানুষ হয়েছেন মায়ের কাছে। অভাবের সংসারে সাইকার ক্রিকেট আলো নিয়ে এসেছে। মেয়েদের আইপিএলের পর ভারতীয় ক্রিকেট। অনেকটাই বদলে গিয়েছে সাইকার জীবন। বদলে গিয়েছেন সাইকাও। চুলে সোনালি রং করিয়েছেন। শিবসাগর বললেন, “সাইকা আরও পরিণত হয়েছে। অনেক মানুষের সঙ্গে মিশছে। আরও অনেক নম্র, ভদ্র হচ্ছে। কথা বলার ধরন পরিণত হয়েছে।”
শিবসাগরের মতে সাইকার সব থেকে বড় অস্ত্র কঠিন মানসিকতা। কোচ বললেন, “মঙ্গলবার আমার সঙ্গে কথা হয় সাইকার। ওর কথা বলার মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস ছিল। বলছিল খেলার সুযোগ পেলে আমি পারব ভাল বল করতে। সাইকা খুব বেশি দূরের লক্ষ্য মাথায় রাখে না। একটা করে বল নিয়ে ভাবে। পুরো মনোযোগ থাকে যে বলটা করছে সেটার দিকে। সেটাই ওর সব থেকে বড় অস্ত্র।” বুধবার ভারতের হয়ে প্রথম ম্যাচে ৪ ওভারে ৩৮ রান দিয়ে একটি উইকেট নেন সাইকা। ৭৫ রান করা ড্যানি ওয়াটের উইকেট তুলে ইংল্যান্ডের ১৩৮ রানের জুটি ভাঙেন সাইকাই। তাঁর বলে স্টাম্প করেন বাংলার আর এক মেয়ে রিচা ঘোষ।
সাইকার ক্রিকেটার হিসাবে পরিণত হওয়ার পিছনে যেমন শিবসাগরের হাত রয়েছে, তেমনই বড় ভূমিকা রয়েছে ঝুলন গোস্বামীর। ভারতের প্রাক্তন অধিনায়কের সান্নিধ্য পেয়েছেন সাইকা। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “আমি আজ যা হয়ে উঠেছি সেটার পিছনে বড় ভূমিকা রয়েছে ঝুলুদির। কোনও রকম সমস্যা হলেই আমি ওর কাছে যাই। সব সময় পাশে পেয়েছি ঝুলুদিকে। ও আমার অনুপ্রেরণা। খুব ইতিবাচক লাগে ঝুলুদির কথা শুনলে। ওর মতো খেলতে চাইতাম। যখন থেকে ক্রিকেট খেলে শুরু করেছি, তখন থেকে ঝুলুদিকেই অনুসরণ করেছি।” মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে খেলার সময় বোলিং কোচ হিসাবেও সাইকার পাশে ছিলেন তাঁর ঝুলুদি।
এক এক করে স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে সাইকার। এক সময় বাংলা দল থেকে বাদ পড়ে যাওয়া মেয়েটি এখন ভারতীয় দলে। আগামী দিনে ধারাবাহিক ভাবে দেশের হয়ে খেলতে চাইবেন সাইকা। তাঁর কোচ যদিও জানালেন, সাইকা খুব দূরের কথা ভাবে না। কিন্তু বাংলা চাইবে ভারতের হয়ে সাইকা অনেক দিন পর্যন্ত খেলুক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy