Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Mohammed Shami

খালি পায়ে কাদায় দৌড়, শামির মাঠে ফেরার রহস্য! আরও তিন বছর খেলবেন, মনে করছেন কোচ

এনসিএ তাঁকে ফিটনেস সার্টিফিকেট দেওয়ার আগে শামি নিজেই নিজের পরীক্ষা নিয়েছিলেন। তাঁর ছোটবেলার কোচ বদরুদ্দিন সিদ্দিকি জানালেন শামির কঠোর পরিশ্রমের কথা, প্রত্যাবর্তনের রহস্য।

Mohammed Shami with coach

(বাঁ দিকে) মহম্মদ শামি। কোচ বদরুদ্দিন সিদ্দিকি (ডান দিকে)। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৪ ১২:৫১
Share: Save:

নিজেই নিজের পরীক্ষা নেন মহম্মদ শামি। শরীর দিচ্ছে কি না বোঝার চেষ্টা করেন নিজে নিজে। যে কারণে বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমি থেকে উত্তরপ্রদেশের আমরোহার খামারবাড়িতে ফিরে কাদার উপর দৌড়ে বুঝে নিয়েছিলেন তিনি কতটা ফিট। এনসিএ তাঁকে ফিটনেস সার্টিফিকেট দেওয়ার আগে শামি নিজেই নিজের পরীক্ষা নিয়েছিলেন। তাঁর ছোটবেলার কোচ বদরুদ্দিন সিদ্দিকি জানালেন শামির কঠোর পরিশ্রমের কথা, প্রত্যাবর্তনের রহস্য।

শামির যখন ১৫ বছর বয়স, তখন থেকে তাঁকে দেখছেন বদরুদ্দিন। মোরাদাবাদের ক্রিকেট কোচ জানেন আপাতত ভারতীয় দলের বাইরে থাকা এই পেসার কতটা পরিশ্রমী। সেই সঙ্গে দেখেছেন ছাত্রের মনের জোরও। ৩৪ বছরের শামির মধ্যে এখনও সেই মানসিক কাঠিন্য লক্ষ্য করছেন কোচ। বিশ্বাস করেন আরও তিন বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে পারবেন শামি।

এক বছর পর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরেছেন শামি। গত বছর ১৯ নভেম্বর ভারতের হয়ে এক দিনের বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছিলেন। তার পর থেকেই চোট নিয়ে ভুগছিলেন শামি। ফিরলেন বাংলার জার্সিতে। ইনদওরে মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে খেলছেন তিনি। প্রথম ইনিংসে নিয়েছেন চার উইকেট। আনন্দবাজার অনলাইনকে বদরুদ্দিন বললেন, “দেখে মনেই হচ্ছে না এক বছর পর বল করছে শামি। আগের মতোই ফিট দেখাচ্ছে ওকে।”

Coach and Shami

কোচ বদরুদ্দিন সিদ্দিকির সঙ্গে মহম্মদ শামি। ছবি: সংগৃহীত।

ছাত্রকে ভাল মতো চেনেন বদরুদ্দিন। জানেন ১০০ শতাংশ ফিট না হলে শামি কখনও খেলার সিদ্ধান্ত নিতেন না। নিজেকে ফিট করে তোলার জন্য এবং কতটা সুস্থ হয়েছেন বোঝার জন্যই কাদামাটিতে দৌড়। ছোটবেলার কোচ বললেন, “শামি যদি পুরো ফিট না হত তা হলে ও কখনওই খেলতে নামত না। নিজের ফিটনেস বোঝার জন্য বাড়িতে কাদামাটির উপর দৌড়েছিল ও। শামি এটা প্রায়ই করে। কিছুটা জায়গা জুড়ে কাদামাটি বানিয়ে তার উপর দৌড়য়। কাদায় পা আটকে যায়। যদি ওর কোনও সমস্যা থাকে, তা হলে ওই মাটিতে স্বাভাবিক ভাবে দৌড়তে পারবে না। সেটাই পরীক্ষা করে ও। শামি দেখে নিয়েছিল ও পারছে।”

এই বছর ফেব্রুয়ারি মাসে শামির অস্ত্রোপচার হয়। তার পর ক্রাচ নিয়ে হাঁটতে হয়েছিল বেশ কিছু মাস। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। তার পর এনসিএ-তে রিহ্যাব করেন। শামি কবে ফিরবেন তা নিয়ে জল্পনা ছিল। কখনও শোনা যায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ়ে ফিরবেন। কখনও বলা হয় রঞ্জি ট্রফির শুরু থেকে খেলবেন। নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ়েও শামির ফেরার কথা বলেছিলেন অনেকে। বাংলার ক্রিকেট সংস্থার বার্ষিক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, “বিশ্বাস রেখেছি মাঠে নামলে নিজের সেরাটা দিতে পারব। মানসিকতার বদল হয়নি। আমি কঠোর পরিশ্রম করি। যত বার পারব, তত বার উঠে দাঁড়াব। নিজের উপর বিশ্বাস হারাতে চাই না।” শেষ পর্যন্ত শামি ফেরেন রঞ্জির পঞ্চম ম্যাচে, মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে।

Mohammed Shami

অস্ত্রোপচারের পর খামারবাড়িতে মহম্মদ শামি। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।

শামি বাংলার হয়ে খেললেও তাঁর জন্ম উত্তরপ্রদেশে। সেখানেই তাঁর ক্রিকেট জীবন শুরু। ক্লাব ক্রিকেট খেলার জন্য কলকাতায় আসেন। জায়গা করে নেন বাংলা দলে। সেখান থেকে ঢুকে পড়েন ভারতীয় দলেও। দেশের জার্সিতে ৬৪ টেস্টে ২২৯টি উইকেট নিয়েছেন তিনি। ১০১টি এক দিনের ম্যাচে নিয়েছেন ১৯৫টি উইকেট। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দেশের হয়ে ২৩টি ম্যাচে শামি নিয়েছেন ২৪ উইকেট। তাঁর সুইং যে কোনও ব্যাটারের কাছেই দুঃস্বপ্নের মতো। শেষ এক দিনের বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচে ২৪ উইকেট নিয়েছিলেন শামি। আইপিএলেও বিভিন্ন দলের হয়ে বল হাতে সফল তিনি।

উত্তরপ্রদেশের আমরোহায় একটি খামারবাড়ি রয়েছে শামির। ১৫০ বিঘা জমি নিয়ে তৈরি করেছেন সেই বাড়ি। সেখানে বানিয়েছেন ক্রিকেট পিচ। অনুশীলনের সব রকমের সুবিধা রয়েছে সেখানে। কোভিডের সময় যখন সব জায়গায় ক্রিকেট খেলা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মারা যখন অনুশীলন করতে পারছিলেন না, তখন শামি পুরোদমে অনুশীলন করেছেন তাঁর নিজের তৈরি নেটে।

২০১৫ সালে শামি এই খামারবাড়িটি কেনেন। সেখানে ক্রিকেট পিচ তৈরি করেন। খেলা না থাকলে সেখানেই নিজের মতো অনুশীলন করেন তিনি। শুধু নিজে নন, শামির ওই খামারবাড়িতে অনুশীলন করে গিয়েছেন সুরেশ রায়না, ভুবনেশ্বর কুমারের মতো ক্রিকেটারেরাও। সেখানেই কাদামাটিতে দৌড়ে নিজের ফিটনেস যাচাই করে মাঠে ফিরলেন শামি।

গত বছর গোড়ালিতে চোট পেয়েছিলেন শামি। এই বছর তাঁর হাঁটু ফুলে যায়। যে কারণে মাঠে ফিরতে বেশি সময় লাগে। অস্ট্রেলিয়া সফরের জন্য যখন ভারতীয় দল ঘোষণা করা হয়, শামি তখনও পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। যে কারণে ১৮ জনের দলে তাঁর নাম ছিল না। রঞ্জিতে খেলে নিজের ফিটনেসের প্রমাণ দিয়েছেন শামি। এখন দেখার নির্বাচকেরা তাঁকে অস্ট্রেলিয়া সফরে পাঠান কি না। কোচ বদরুদ্দিন বললেন, “শামি অস্ট্রেলিয়া যাবে কি না সেটা নির্বাচকেরা সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে আমার মনে হয় দ্বিতীয় টেস্টের পর থেকে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পাওয়া যাবে ওকে।”

২২ নভেম্বর থেকে শুরু প্রথম টেস্ট। শনিবার রঞ্জি ম্যাচ শেষ হলেও শামিকে অস্ট্রেলিয়া পাঠিয়ে প্রথম টেস্টে নামিয়ে দেওয়ার ঝুঁকি হয়তো নেবে না ভারতীয় দল। তবে দ্বিতীয় টেস্টের আগে প্রধানমন্ত্রী একাদশের বিরুদ্ধে অনুশীলন ম্যাচ রয়েছে। সেখানে শামিকে খেলিয়ে দেখে নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে বোর্ড সূত্রে জানা গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয় টেস্টে অ্যাডিলেডে গোলাপি বল হাতে দেখা যেতেই পারে শামিকে। তবে তাঁর অস্ট্রেলিয়া যাওয়া পুরোপুরি নির্ভর করছে বাংলার রঞ্জি ম্যাচ দেখতে আসা নির্বাচক অজয় রাত্রা এবং জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির মেডিক্যাল দলের প্রধান নিতিন পটেলের উপর। তাঁরা সবুজ সঙ্কেত দিলে তবেই প্রধান নির্বাচক অজিত আগরকর ভাববেন শামিকে পাঠানোর কথা।

চোট সারিয়ে এক বছর পর মাঠে ফেরা শামি যদিও আরও তিন বছর খেলতে পারবেন বলে মনে করছেন কোচ। বদরুদ্দিন বললেন, “শামি এক জন শিল্পী। ওর বোলিংয়ের শিল্প কখনও কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। মাঠে ফেরার জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছিল ও। যদি ফিটনেস ধরে রাখতে পারে তা হলে এখনও তিন বছর খেলবে বলে বিশ্বাস করি।”

অন্য বিষয়গুলি:

Mohammed Shami Cricket Association Of Bengal Ranji Trophy 2024-25
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy