যশপ্রীত বুমরা। —ফাইল চিত্র।
প্রথাগত ভাবে ক্রিকেট শেখা হয়নি ছোটবেলায়। গুরুত্ব দিয়ে ক্রিকেট খেলতে শুরু করার পরও পাত্তা পেতেন না যশপ্রীত বুমরা। কেউ কখনও তাঁর ভুলও শুধরে দিতেন না। বিশ্বের অন্যতম সেরা জোরে বোলার ভারত-অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় টেস্টের পর এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন ক্রিকেটজীবনের গোড়ার কথা। বুমরা বলেছেন, তাঁর অদ্ভুত বল করার ধরন (বোলিং অ্যাকশন) দেখে অনেকে বলেছিলেন, ছ’সাত মাসের বেশি তিনি খেলতে পারবেন না।
অস্ট্রেলিয়ার এক সংবাদমাধ্যমকে বুমরা বলেছেন, ‘‘বেশ বড় বয়সে ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছি। ছ’সাত বছর বয়স পর্যন্ত তেমন চটপটে ছিলাম না। খেলাধুলোও করতাম না খুব একটা। ১৬ বা ১৭ বছর বয়সে ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছি। তখন টেলিভিশনে খেলা দেখতাম। দেখে দেখেই শেখা শুরু। সেই অর্থে প্রথাগত প্রশিক্ষণ কখনও নিইনি।’’
তা হলে কী ভাবে শিখলেন এমন বোলিং করতে? বুমরা বলেছেন, ‘‘সব কিছুই টেলিভিশন দেখে শিখেছি। বিভিন্ন জিনিস দেখে করার চেষ্টা করতাম। নিজেই সমাধান খোঁজার চেষ্টা করতাম। এখনও সে ভাবেই নিজেকে তৈরি করার চেষ্টা করি। এই পদ্ধতিতে এখনও উপকৃত হই। নিজের ইচ্ছাশক্তি এবং সাহসে নির্ভর করতে পছন্দ করি। অনেক পরে ক্রিকেট প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেছি। এ ভাবেই আমার ক্রিকেট শুরু।’’
প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে যোগ দেওয়ার পর প্রথম দিকে খেলার সুযোগই পেতেন না বুমরা। সাজঘরে বসে থাকতে হত অধিকাংশ দিন। তা নিয়ে বুমরার বক্তব্য, ‘‘ছোটবেলায় অধিকাংশ সময় আমাকে বসে থাকতে হত। খেলার সুযোগ পেতাম না। কিছু সীমাবদ্ধতার জন্যই খেলা হত না আমার। একটা সময় পর্যন্ত সেই সীমাবদ্ধতাগুলো নিয়েই চলেছি।’’ বুমরা আরও বলেছেন, ‘‘প্রথম দিকে বল করার সময় প্রায় বাউন্ডারি থেকে দৌড় শুরু করতাম। ক্রিকেটকে গুরুত্ব দিতে শুরু করার পরও অনেকটা দৌড়তাম। তাতে বলের গতির পার্থক্য হয়নি। প্রায় একই রকম গতিতে বল করতাম। পরে মনে হল, বলের গতি যখন বাড়ছেই না তখন এত দৌড়নোর দরকার নেই। কম দৌড়ে কিছুটা শক্তি বাঁচানো ভাল। তাতে হয়তো বেশি ক্ষণ বল করতে পারব। তখন থেকে কম দৌড়ে বল করতে শুরু করলাম। তাতেও দেখলাম বলের গতি কমছে না। সেটাই এখনও বজায় রেখেছি।’’
প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলতে শুরু করার পরও কোনও কোচ কখনও বুমরাকে বল করার ধরন পরিবর্তন করতে বলেননি। তাই একই ভাবে এখনও বল করেন তিনি। এ নিয়ে ভারতীয় জোরে বোলার বলেছেন, ‘‘আসলে আমার উপর কারও ভরসাই ছিল না প্রথম দিকে। আমার বল করার ধরন দেখে সকলে মনে করতেন, বেশি দিন আমার পক্ষে খেলা সম্ভব নয়। ছ’সাত মাসের বেশি খেলতে পারব না। তাই আমার পিছনে সময় খরচ করার কথাও কেউ ভাবতেন না। কারও থেকে কোনও পরামর্শ পেতাম না। কী করলে আরও ভাল হবে বা কোনটা করা উচিত নয়, এমন কোনও পরামর্শ কেউ দিত না। সকলেই হয়তো ভাবতেন আমার প্রতিভা নেই।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘আমার মনে হয় এতে উপকারই হয়েছে। স্বনির্ভর হতে শিখেছি। আত্মবিশ্বাসী হতে শিখেছি। নিজের সমস্যা নিজে সমাধান করতে শিখেছি। আমার বল করার ধরন পরিবর্তনের কথাও কেউ ভাবেননি। কেউ তেমন পরামর্শ দিতেন না।’’
তা হলে কী করে আজকের জায়গায় পৌঁছলেন? বুমরা বলেছেন, ‘‘নিজে সব করতে শিখে ভালই হয়েছে। নিজেকে নিজের মতো করে উন্নত করতে পেরেছি। আত্মবিশ্বাস, নিজের চেষ্টার প্রতি ভরসা এবং পরিশ্রম আমাকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। এটাই সবচেয়ে ভাল হয়েছে।’’
এক সময় ক্রিকেট মহলে গুরুত্ব না পাওয়া সেই বুমরাই এখন ভারতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ভারতের জোরে বোলিং আক্রমণকে নেতৃত্ব দেন। রোহিত শর্মার অনুপস্থিতিতে টেস্ট দলকেও নেতৃত্ব দেন। বিশ্বের সব দেশের ব্যাটারেরাই তাঁকে সমীহ করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy