(বাঁ দিকে) রিভার্স সুইপ মারছেন পাটীদার। রোহিতকে ফিরিয়ে উল্লাস বশিরের (ডান দিকে)। শুক্রবার বিশাখাপত্তনমে। ছবি: রয়টার্স।
বৃহস্পতিবার রাতেই জানতে পারেন, বিশাখাপত্তনমে টেস্ট অভিষেক হতে চলেছে তাঁর। ইংল্যান্ড লায়ন্সের বিরুদ্ধে সদ্য দু’টি শতরান করে ভারতীয় দলে আসা ক্রিকেটার শান্তিতেই ঘুমিয়েছিলেন রাতে। কারণ, এই মাঠে আগে একাধিক প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন। জানেন, উইকেট কী রকম আচরণ করতে পারে। অভিষেক টেস্টে ইনিংসের শুরুটাও করেছিলেন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই। কিন্তু ৩২ রানেই থেমে যায় তাঁর প্রথম টেস্ট ইনিংস। তিনি রজত পাটীদার।
যশস্বী জয়সওয়ালের সঙ্গে ৭০ রানের জুটি গড়ে কঠিন সময় থেকে দলকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন রজত। কিন্তু ভাগ্য তাঁকে সঙ্গ দেয়নি। রেহান আহমেদের ডেলিভারি ডিফেন্ড করার পরে বল গড়িয়ে লেগে যায় স্টাম্পে। সেখানেই বড় রানের ইনিংস গড়ার স্বপ্ন ধাক্কা খায় রজতের।
বড় রানের স্বপ্নভঙ্গের দিনই ভারতীয় টেস্ট দলে সুযোগ পাওয়ার স্বপ্নপূরণ হয় পাটীদারের। সাংবাদিক বৈঠকে এসে এ দিন রজত বলেন, ‘‘টেস্ট খেলার স্বপ্নই এত দিন দেখে এসেছি। অনেক পরিশ্রম করেছি এই জায়গায় পৌঁছনোর জন্য। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকে বরাবরই প্রাধান্য দিয়েছি। যার ফল পেলাম আজ।’’ যোগ করেন, ‘‘গতকালই জানতে পেরেছি যে আমার টেস্ট অভিষেক হতে চলেছে। সত্যি বলতে, একেবারেই ভয় পাইনি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট এত বছর খেলার পরে এই ফর্ম্যাটে ভয় লাগে না। তবে বোলিংয়ের মান উচ্চস্তরের। বিশেষ করে পেস বোলিং। অ্যান্ডারসনকে সামলানো সহজ ছিল না।’’
যশস্বীর সঙ্গে জুটি গড়ার সময় দু’জনের মধ্যে কী কথা হচ্ছিল? রজতের উত্তর, ‘‘আমরা আলোচনা করছিলাম, কী ভাবে আমাদের জুটি আরও এগিয়ে নেওয়া যায়।’’
যশস্বীর ইনিংসে মুগ্ধ পাটীদার। ১৭৯ রানে অপরাজিত রয়েছেন ভারতীয় দলের ওপেনার। সামনে থেকে সেই ইনিংস গড়তে দেখেন দলের নবাগত ক্রিকেটার। পাটীদার বলছিলেন, ‘‘ও খুব সাহসী ক্রিকেটার। তবে ধৈর্য ধরে ইনিংস সাজিয়েছে। মারার বল ছেড়ে দেয়নি। আমরা কিন্তু খুব একটা বেশি শট খেলিনি। তবুও বোর্ডে ৩৩৬ রান এসেছে বোর্ডে। অবশ্যই চাইব, দ্বিতীয় দিন যতটা সম্ভব ওরা ব্যাট করুক। ইংল্যান্ডকে বড় রানের লক্ষ্য দিতে চাই।’’
পাটীদারের অভিষেকের দিনেই ইংল্যান্ড জার্সিতে প্রথম টেস্ট খেলেন পাক-বংশোদ্ভূত অফস্পিনার শোয়েব বশির। তাঁর প্রথম টেস্ট উইকেটের নাম রোহিত শর্মা। দ্বিতীয় উইকেট অক্ষর পটেল। জীবনের প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে ভারতীয় অধিনায়কের উইকেট পেয়ে আপ্লুত বশির। সাংবাদিক বৈঠকে হাসিমুখে সকলের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেলেন।
বশির বলছিলেন, ‘‘রোহিত শর্মা যে আমার জীবনের প্রথম টেস্ট উইকেট হবে, কল্পনাও করতে পারিনি। রোহিত অসাধারণ ক্রিকেটার। বিশ্বের অন্যতম সেরা। স্পিনারদের বিরুদ্ধে ও সত্যি বড় শক্তি।’’ যোগ করেন, ‘‘আমার জন্য এই দিনটি বিশেষ স্মরণীয় হয়ে থাকবে। শেষ দু-তিন বছরে যে সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছি, তার পরে এই প্রাপ্তি আমার কাছে স্বপ্নের মতো।’’
সময় মতো ভিসা হাতে না পেয়ে হায়দরাবাদ টেস্ট খেলতে পারেননি বশির। কতটা চিন্তিত ছিলেন সেই সময়? আদৌ কি ভাবতে পেরেছিলেন, ভারতে এসে টেস্ট অভিষেকের স্বপ্ন পূরণ হবে? তরুণ অফস্পিনার বলে দেন, ‘‘ভিসা হাতে পাওয়া নিয়ে মোটেও চিন্তায় ছিলাম না। জানতাম, ঠিক পাব। সত্যি বলতে একটু সমস্যা হচ্ছিল। কিন্তু এখন আমি এখানে। টেস্ট অভিষেকও হল। আগে কী হয়েছিল সেটা নিয়ে ভাবি না। ইসিবি ও বিসিসিআই-কে ধন্যবাদ দিতে চাই। তাদের উদ্যোগে দ্রুত ভারতে
আসতে পেরেছি।’’
প্রথম টেস্ট খেলার আগে অধিনায়ক বেন স্টোকসের বার্তাই উদ্বুদ্ধ করে তরুণ স্পিনারকে। বলেন, ‘‘স্টোকস বলেছিল, ‘মনে করো কেন ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছিলে। পরিবারের সদস্যদের কথা ভাবো। মাঠে গিয়ে নিজেকে উজাড় করে দাও। আমরা জানি তোমার মধ্যে কী আছে। এ বার সেটা সারা বিশ্বকে দেখাও।’ অধিনায়কের এই বার্তা শুনেই আমি আরও উদ্বুদ্ধ হই।’’
জেমস অ্যান্ডারসনের টেস্ট অভিষেক হওয়ার সময় জন্মাননি বশির। শুক্রবার তাঁর সঙ্গে প্রথম টেস্ট খেললেন। কী রকম অভিজ্ঞতা? বশির বলেন, ‘‘জিমির টেস্ট ক্যাপের নম্বর ৬১৩। আমার ৭১৩। সুতরাং আমাদের মধ্যে আরও ১০০ জন টেস্ট খেলেছে। এতেই বোঝা যায়, বয়স শুধুই সংখ্যামাত্র। ওঁর সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা অসাধারণ। দ্বিতীয় দিন দ্রুত উইকেট ফেলে বিপক্ষকে অলআউট করার লক্ষ্যে নামব। সফল হওয়ার মরিয়া চেষ্টা করবে সকলে।’’
ভারতের বিরুদ্ধে অভিষেক ম্যাচ স্মরণীয় করে রেখেছেন অনেকেই। বশিরও সেই তালিকায় যোগ দেন কি না, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy