কলকাতা বিমানবন্দরে কোহলি। ছবি: টুইটার।
মুম্বইয়ে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে শুক্রবারই কলকাতায় এসে পড়ল ভারতীয় দল। শুক্রবার বিকেল ৫.৩০টা নাগাদ ভারতীয় দলের বিমান কলকাতার মাটিতে নামে। কিছু ক্ষণ পরেই ক্রিকেটারেরা একে একে বেরিয়ে আসতে থাকেন। ক্রিকেটারদের জন্যে বিমানবন্দরের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন হাজার হাজার সমর্থক। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মারা একে একে বেরিয়ে আসতেই সমর্থকেরা ক্রিকেটারদের নাম ধরে চিৎকার শুরু করেন। বিমানবন্দরে পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছিল ভারত বিশ্বকাপ জিতে দেশে ফিরেছে। এতটাই উন্মাদনা ছিল সমর্থকদের মধ্যে।
বিমানবন্দর থেকে বাসে চেপে বাইপাসের ধারে একটি হোটেলের দিকে রওনা দেয় ভারতীয় দল। বাসে ওঠার সময় সূর্যকুমার যাদব, রোহিত শর্মাকে ফুরফুরে মেজাজে দেখা গিয়েছে। তুলনায় একটু গম্ভীর ছিলেন কোহলি। বাকি ক্রিকেটারেরাও মোটামুটি ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন। শুক্রবার দলের কোনও অনুশীলন নেই। তবে ভারত যাদের বিরুদ্ধে খেলবে সেই দক্ষিণ আফ্রিকার সন্ধ্যাবেলায় অনুশীলন করার কথা রয়েছে।
ইডেনের এই ম্যাচ নিয়ে ইতিমধ্যেই ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। টিকিট না পাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ থেকে শুরু করে টিকিটের কালোবাজারিও চলছে দেদার। কলকাতায় বিশ্বকাপ টিকিটের কালোবাজারির তদন্তে নেমে কলকাতা পুলিশ ইতিমধ্যেই ডেকে পাঠিয়েছে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল (সিএবি)-এর সভাপতি স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়কে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। সিএবির পক্ষ থেকে অবশ্য কলকাতা পুলিশের এই ডেকে পাঠানোর বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে। ডাক পাঠানো হয়েছিল অনলাইনে টিকিট বিক্রি করা একটি সংস্থার প্রতিনিধিদের। শুক্রবারই তাঁরা হাজিরা দিয়েছেন ময়দান থানায়। কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, টিকিটের কালোবাজারির অভিযোগে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত মোট ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের ৯৪টি টিকিট। ময়দান এবং এন্টালি, কলকাতা পুলিশের এই দুই থানায় মোট সাতটি এফআইআর হয়েছে সিএবি এবং অনলাইনে টিকিট বিক্রি করা ওই সংস্থার বিরুদ্ধে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের ৯০০ টাকার টিকিট ৮০০০ টাকায় বিক্রির চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে তিন জনকে। তাদের নাম শুভ্রদীপ ভট্টাচার্য, সুমন সর্দার এবং সন্দীপন লাহা। তাঁদের কাছ থেকে ১৭টি টিকিট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া চড়া মূল্যে টিকিট বিক্রির অভিযোগে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করা হয়েছে হর্ষ গুপ্ত এবং হর্ষিত আগরওয়াল নামে দু’জনকে। তাঁদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে আটটি টিকিট। তাঁদের বিরুদ্ধে অনলাইনে বিপুল দামে টিকিট বিক্রি করার অভিযোগ জমা পড়েছে হেয়ার স্ট্রিট থানায়। বৃহস্পতিবারই এন্টালি থানা এলাকার মৌলালি মাজ়ারের কাছ থেকে ইসলামুল হোড়া (ওরফে টিঙ্কু) এবং হেমাল শাহ নামে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ৫ নভেম্বরের খেলার ১০টি টিকিট। এ ছাড়াও একাধিক অভিযোগের তদন্ত চলছে।
অনলাইনে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের টিকিট বিক্রি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে তিনি লিখেছেন, ‘‘অনলাইনে বিক্রেতারা দেখাচ্ছেন, ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের ৯০টি টিকিট রয়েছে। টিকিটগুলির দাম ৯০০০ টাকা বা তার বেশি। অথচ ইডেন গার্ডেন্সের আসন সংখ্যা প্রায় ৬৮ হাজার। কলকাতা পুলিশের উচিত, টিকিটের কালোবাজারির মাথাদের ধরা। বেটিং চক্রও ফাঁস করা উচিত।’’ যদিও তিনি ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের তারিখ ৫ নভেম্বরের পরিবর্তে ৩ নভেম্বর বলে উল্লেখ করেছেন।
পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও সিএবি কর্তারা জানাচ্ছেন, তাঁদের কার্যত কিছু করার নেই। সিএবির সভাপতি স্নেহাশিসের বক্তব্য, ‘‘বিশ্বকাপ আইসিসি-র ইভেন্ট। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) একটি সংস্থাকে অনলাইনে টিকিট বিক্রি করার দায়িত্ব দিয়েছে। সিএবি শুধু ম্যাচের আয়োজক। আমরাও টিকিট পেয়েছি অনলাইনে টিকিট বিক্রি করা ওই সংস্থার মাধ্যমে। চাহিদার তুলনায় অনেক কম টিকিট পেয়েছি আমরা। ফলে ক্লাব, অনুমোদিত সংস্থা, সদস্যদের নির্ধারিত কোটা কমাতে হয়েছে।’’
প্রায় একই কথা শোনা গিয়েছে বিসিসিআইয়ের প্রাক্তন সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মুখেও। তিনি বলেন, ‘‘ভারতের খেলার টিকিটের চাহিদা প্রচুর। সবাই খেলা দেখতে চান। কিন্তু স্টেডিয়ামের আসন সংখ্যা নির্দিষ্ট। তাই সবাই টিকিট পাবেন না এটাই স্বাভাবিক। চাহিদা প্রবল বলেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’’ টিকিটের কালোবাজারির অভিযোগের প্রসঙ্গেও বিসিসিআই এবং সিএবির পাশে দাঁড়িয়েছেন সৌরভ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘টিকিট বাইরে চলে যাওয়ার পর তার নিয়ন্ত্রণ বিসিসিআই বা সিএবির থাকে না। বাইরে কোথায় কী হচ্ছে, সেটা জানাও ক্রিকেট কর্তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সিএবির পক্ষে টিকিটের কালোবাজারি আটকানো সম্ভব নয়। কর্তারা তো আর মহমেডান মাঠে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন না। এই দায়িত্ব পুলিশকেই নিতে হবে। ফুটবল বিশ্বকাপেও এমন হয়। একটা ম্যাচের টিকিট ১৭ লাখ টাকাতেও বিক্রি হয়েছে। যার আসল দাম ছিল আড়াই লাখ টাকা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy