Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
ICC ODI World Cup 2023

৯ বছরে ৯ নক আউটে ৯ হার, বিশ্ব ক্রিকেটে নতুন ‘চোকার্স’ তকমা এঁটে গেল বিরাটদের গায়ে?

গত ন’বছরে আইসিসি প্রতিযোগিতার নক আউটে বার বার চাপের মুখে হারতে হয়েছে ভারতকে। বিশ্ব ক্রিকেটে কি তা হলে নতুন ‘চোকার্স’ বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মারা! প্রশ্ন উঠছে।

odi world cup

ফাইনালে হারের পর বিশ্বকাপ ট্রফির দিকে তাকিয়ে বিরাট কোহলি। ছবি: রয়টার্স

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:৪৭
Share: Save:

২০১৩ সাল। শেষ বার কোনও আইসিসি প্রতিযোগিতা জিতেছিল ভারত। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছিল দেশ। তার পরে ন’বছরের শূন্যতা। এই সময়ের মধ্যে ভারত ন’বার কোনও না কোনও আইসিসি প্রতিযোগিতার নক আউটে খেলেছে। প্রত্যেক বারই হারতে হয়েছে ভারতকে। বার বার চাপের ম্যাচে মুখ থুবড়ে পড়েছে ভারতীয় দল। তা হলে কি বিশ্ব ক্রিকেটের নতুন ‘চোকার্স’ ভারত! যে তকমা এত দিন দক্ষিণ আফ্রিকাকে দেওয়া হত, সেই তকমা কি এ বার থেকে ভারতের গায়েও এঁটে গেল!

শুরুটা হয়েছিল ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল থেকে। শ্রীলঙ্কার কাছে হেরেছিলেন ধোনিরা। পরে আরও দু’টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নক আউট খেলেছে ভারত। ২০১৬ সালে দেশের মাটিতে সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের কাছে ও ২০২২ সালের সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়েছে দলকে। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হার বড় ধাক্কা দিয়েছিল ভারতকে।

একই কথা খাটে তিনটি এক দিনের বিশ্বকাপের ক্ষেত্রেও। ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ও ২০১৯ সালে নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ চারে হেরেছিলেন বিরাট কোহলিরা। ২০২৩ সালে দেশের মাটিতে ফাইনালে সেই পরাজিত হয়েও মাঠ ছাড়তে হল রোহিত শর্মাদের।

সাদা বলের মতো লাল বলের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হওয়ার পর থেকে পর পর দু’টি ফাইনাল খেলেছে ভারত। প্রথম বার নিউ জ়িল্যান্ড ও পরের বার অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারতে হয়েছে। সব মিলিয়ে ন’বছরে মোট ন’বার।

কিন্তু কেন বার বার এমনটা হচ্ছে? এমন নয় যে এই প্রতিটি ক্ষেত্রে গ্রুপ পর্বে ভারত খারাপ খেলেছে। বরং প্রতি বার গ্রুপ পর্বে দাপট দেখিয়েছে তারা। চলতি বছর টানা ১০টি ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে। তা হলে কেন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলছে তারা? শুধুই কি চাপ? না কি নেপথ্যে অন্য কোনও কারণও আছে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দু’টি কারণে এটা হতে পারে। ১) বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে সেমিফাইনাল বা ফাইনালের চাপ নিতে না পেরে সহজ বিষয়ে ভুল করা। স্বাভাবিক খেলা খেলতে না পারা। ২) প্রতিপক্ষ সম্পর্কে বেশি হোমওয়ার্ক না করে মাঠে খেলতে নামা। ফলে প্রতিপক্ষের ভুলত্রুটি ধরতে না পারা।

চলতি বিশ্বকাপে ভারত প্রতিটি ম্যাচে যে পরিকল্পনা নিয়ে খেলেছে তাতে মনে হয়নি প্রতিপক্ষ সম্পর্কে হোমওয়ার্ক না করে তারা নেমেছে। প্রতিটি দলের ভয়ঙ্কর ক্রিকেটারদের সামনে আলাদা করে ফিল্ডিং সাজানো হয়েছিল। বোলারেরা আলাদা পরিকল্পনা করে বল করছিলেন। তা হলে কি ফাইনালে সে সব গুলিয়ে গেল? ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পরিকল্পনা না করেই নেমে পড়লেন রোহিতেরা? তা হয়তো নয়। কিন্তু প্রতিটি ম্যাচে পরিকল্পনা কাজে না-ও লাগতে পারে। সেটাই দেখা গিয়েছে ফাইনালে।

ফাইনালে ভারতকে সমস্যায় ফেলেছে ব্যাটিং। চলতি বিশ্বকাপে যে ভাবে মাঝের ওভারে ভারতীয় ব্যাটারেরা খেলেছেন তা ফাইনালে দেখা যায়নি। একটা সময় বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুল এত ধীরে খেলেছেন যে ওভারের পর ওভার রান হয়নি। যেন একটি আবরণের মধ্যে নিজেদের ঢুকিয়ে রেখেছিলেন তাঁরা। তারই সুবিধা নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। অর্থাৎ, বদলটা হয়েছে মানসিকতায়। ফাইনাল জিততে হলে একটু সাহস দেখাতে হয়। রবিবার আমদাবাদে সেই সাহসটা দেখাতেই ভুলে গিয়েছিল ভারত। টস জিতে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স যেমন প্রথমে বল করে সাহস দেখিয়েছিলেন তার পালটা সাহস দেখাতে পারলেন না বিরাটেরা। সেখানেই তফাত হয়ে গেল।

ব্যাটিং ব্যর্থতার পরে চাপ নিতে পারল না দলের ফিল্ডিং এবং বোলিংও। মহম্মদ শামি উইকেট নিলেও বলের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারলেন না। অতিরিক্ত রান দিলেন। ফলে অস্ট্রেলিয়ার উপর চাপ কমল। বিরাট ও শুভমনের মধ্যে দিয়ে ক্যাচ গলে চার হল। উইকেটের পিছনে বেশ কয়েকটি বল ধরতে সমস্যায় পড়লেন রাহুল। ভারতের স্পিনারেরাও উইকেট থেকে সুবিধা তুলতে পারেননি। প্রথমার্ধের চাপ দেখা গিয়েছে দ্বিতীয়ার্ধেও।

এই চাপে বার বার ব্যর্থ হচ্ছে ভারত। কয়েক বছর আগেও ‘চোকার্স’ তকমার উপর অধিকার ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। ১৯৯৯ বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল, ২০১৫ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে যে ভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা চাপের কাছে হারত সেটাই দেখা যাচ্ছে ভারতের ক্ষেত্রেও। ফলে প্রশ্ন ওঠাটা অস্বাভাবিক নয় যে ভারতের গায়েও কি লেগে গিয়েছে ‘চোকার্স’ তকমা। যত দিন না রোহিত, কোহলিরা কোনও আইসিসি প্রতিযোগিতা জিততে পারেন, তত দিন কিন্তু এই তকমা লেগেই থাকবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE