জুটি: নতুন বলে শামি-সিরাজের সুইং ভাঙল নিউ জ়িল্যান্ডকে। ছবি: পিটিআই।
রায়পুরের নতুন এই স্টেডিয়ামে মাঠ ভর্তি দর্শক ভিড় জমিয়েছিল একটা ভাল আন্তর্জাতিক একদিনের ম্যাচ দেখার জন্য। কিন্তু সব মিলিয়ে শনিবারের ম্যাচটা হল ৫৫ ওভারের! নিউ জ়িল্যান্ডকে আট উইকেটে উড়িয়ে দিয়ে দ্বিতীয় একদিনের ম্যাচ জিতে নিল ভারত। সঙ্গে ঘরের মাঠে আরও একটা সিরিজ়।
এই ম্যাচের শুরুতেই অবশ্য একটা নাটক ছিল। এমন ঘটনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তো বটেই, কোনও দিন ঘরোয়া ক্রিকেটেও ঘটেছে বলে মনে করতে পারছি না। টস জেতার পরে রোহিতের কাছে যখন জানতে চাওয়া হল, কী নেবেন— ব্যাটিং না বোলিং, তখন ভারত অধিনায়ক চুপ করে রইল। প্রায় ১৫-২০ সেকেন্ড ধরে মনে করার চেষ্টা করল! তার পরে বলতে পারল, বোলিং করব! সিদ্ধান্তে অবশ্য যে কোনও ভুল ছিল না, সেটা ভারতীয় পেসাররা বুঝিয়ে দিল প্রথম ১০ ওভারেই। পাঁচ উইকেট হারানোর পরে নিউ জ়িল্যান্ড যে আর ম্যাচে ফিরতে পারবে না, সেটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। টম লাথামদের ইনিংস শেষ হল ১০৮ রানে। ভারত দু’উইকেট হারিয়ে ওই রান তুলে নেয়।
ভারত সফরে এসে বিদেশি দলগুলো স্পিনারদের জন্য প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু এখন ভারতীয় পেসাররাই বিপক্ষকে শেষ করে দিয়ে চলে যাচ্ছে। যেমন এ দিন করল মহম্মদ শামি-মহম্মদ সিরাজ-শার্দূল ঠাকুর-হার্দিক পাণ্ড্য। শামি (৩-১৮) প্রথম ওভারেই উইকেট তুলে নেয়। নিউ জ়িল্যান্ডের ওপেনার ফিন অ্যালেনকে প্রথম চারটে বল অফস্টাম্পের উপরে আউটসুইং রেখেছিল। পঞ্চম বলটা ভিতরে নিয়ে এসে অ্যালেনের স্টাম্প ভেঙে দেয়। বলের সেলাইটাকে ঠিক মতো ব্যবহার করার ক্ষেত্রে শামির কাছেধারে এখন বিশ্বের কেউ নেই। শামির বলের ‘সিম পজিশন’ আমাকে গ্লেন ম্যাকগ্রার কথা মনে করিয়ে দেয়। অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি পেসারও বলের সেলাইটাকে অত সুন্দরভাবে কাজে লাগাত।
তবে ইনিংসের সেরা ডেলিভারিটা করেছে সিরাজ। যে বলে ও হেনরি নিকোলসকে আউট করল। লেগস্টাম্পের উপরে দু’টো ডেলিভারি রাখার পরে তিন নম্বর বলটা অফ-মিডলে রাখল। বলটা অফস্টাম্প থেকে কেটে বেরিয়ে যাওয়ার মুখে নিকোলসের ব্যাটে চুমু খেয়ে স্লিপে দাঁড়ানো শুভমন গিলের হাতে চলে যায়। এ দিন হার্দিক পাণ্ড্য নিজের বলে একটা অসাধারণ ক্যাচ নিয়ে বুঝিয়ে দিল, ও পুরোপুরি ফিট। যা বিশ্বকাপের আগে ভারতকে নিশ্চিন্ত করবে। হার্দিক যে এখন একদিনের ক্রিকেটেও বল করা শুরু করেছে, এটা একটা ভাল দিক। এর পাশাপাশি শার্দূল ঠাকুরের কথাও বলতে হবে। এই ছেলেটা সে ভাবে প্রচারের আলোয় থাকে না, কিন্তু কাজের কাজটা করে দেয়।
এ দিন কুলদীপ যাদবকে দিয়ে আট ওভার বল করাল রোহিত। ইডেনের ম্যাচের পর থেকে কুলদীপ ভারতের বড় অস্ত্র হয়ে উঠছে। ওকে কিন্তু সতর্ক ভাবে ব্যবহার করতে হবে। আমাদের হাতে রবীন্দ্র জাডেজার বিকল্প হিসেবে অক্ষর পটেল আছে। আর অশ্বিনের বদলি হিসেবে ওয়াশিংটন সুন্দর আছে। কিন্তু কুলদীপের মতো চায়নাম্যান স্পিনার আর কই? যুজ়বেন্দ্র চহালকেও বাইরে থাকতে হচ্ছে কুলদীপের জন্য। এ দিনের পরে বলা যেতেই পারে, বিশ্বকাপ মহড়ায় ভারতীয় বোলিংকে দেখে খুশি হওয়া যেতেই পারে। মনে রাখবেন, এর সঙ্গে কিন্তু যোগ দেবে যশপ্রীত বুমরা।
এই ম্যাচে শুভমনের স্লিপ ফিল্ডিংয়ের কথাও বলতে হবে। সাধারণত দেখা যায়, ব্যাটসম্যানরা খুব ভাল স্লিপ ফিল্ডার হয়। যেমন সুনীল গাওস্কর, রাহুল দ্রাবিড়, মার্ক ওয়, মাহেলা জয়বর্ধনে। সেই তালিকায় কিন্তু শুভমনও চলে আসতে পারে। স্লিপ ফিল্ডারদের ডান পায়ের পাতাটা সাধারণত ব্যাটসম্যানের দিকে থাকে। শুভমনেরটা একটু ঘুরে থাকে। যে কারণে ডান দিকে ভাল ক্যাচ নিতে পারে। এ দিন যেমন দু’টো ধরল।
এর পরে ব্যাট করতে নেমে সহজেই রানটা তুলে দিল ভারত। রোহিত শর্মা অর্ধশতরান করল। খুব বড় রান না পেলেও রোহিতকে ছন্দে দেখিয়েছে। এই রকম ইনিংস ওর আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে। শুভমনও ভাল ব্যাট করল। ওর কয়েকটা ড্রাইভ মনে রাখার মতো। এমনকি, দেখলাম সুনীল গাওস্করও প্রশংসা করে গেল এই তরুণ ওপেনারের।
এই টুকরো টুকরো ছবিগুলো মিলেমিশে ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য একটা ভাল ‘কোলাজ’ কিন্তু ক্রমে তৈরি হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy