Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
Washington Sundar

তিন বছর পর টেস্টে সুযোগ পেয়ে ৭ উইকেট, রোহিতকে ঠিক প্রমাণ করে গাওস্করকে ভুল প্রমাণ করলেন সুন্দর!

বৃহস্পতিবার নিউ জ়িল্যান্ডের ১০টি উইকেটই তোলেন তামিলনাড়ুর দুই স্পিনার। অশ্বিন এবং ওয়াশিংটন। তরুণ অলরাউন্ডারের নামকরণের নেপথ্যে রয়েছে এক অদ্ভুত ঘটনা।

Washington Sundar

ওয়াশিংটন সুন্দর। ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:০৯
Share: Save:

রাচিন রবীন্দ্র তখন ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিচ্ছেন। বেঙ্গালুরুর পর পুণেয় শতরান করবেন বলে মনে করা হচ্ছিল। তেমনই একটা সময় ওয়াশিংটন সুন্দরের বল সাপের ফণার মতো বার হল হাত থেকে। ব্যাটের সামনে দিয়ে গিয়ে লাগল মিডল স্টাম্পে। বোঝা গেল কেন তিন বছর পর আবার টেস্ট জার্সি দেওয়া হয়েছে ওয়াশিংটনকে।

ভারতীয় ক্রিকেটে ওয়াশিংটনের একটি রেকর্ড আছে। সবচেয়ে কম বয়সে (১৮ বছর ৮০ দিন) টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল তাঁর। ভারতের হয়ে ৫৩টি টি-টোয়েন্টি এবং ২২টি এক দিনের ম্যাচ খেলেছেন তিনি। সাদা বলের ক্রিকেটে ৭০ উইকেট নেওয়া সেই ওয়াশিংটন লাল বলের ক্রিকেটে ভারতের জার্সি পরেননি তিন বছর। ফিরলেন বৃহস্পতিবার। আর ফিরেই তুলে নিলেন সাত উইকেট।

২৫ বছরের ওয়াশিংটনের টেস্ট অভিষেক হয়েছিল ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। ব্রিসবেনের পিচে অভিষেক ম্যাচে চার উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ব্যাট হাতে করেছিলেন ৬২ রান। শেষ টেস্টটিও খেলেছিলেন সেই বছরই। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আমদাবাদে খেলার পর লাল বলের ক্রিকেটে ফেরার জন্য অপেক্ষা করতে হল তিন বছর। আসলে রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাডেজা, অক্ষর পটেল এবং কুলদীপ যাদবকে টপকে তাঁর পক্ষে জায়গা করে নেওয়া সম্ভব হয়নি। বৃহস্পতিবার হল কারণ কিউয়ি দলে পাঁচ জন বাঁহাতি ব্যাটার রয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে জাডেজার সঙ্গে আরও এক জন বাঁহাতি স্পিনারকে খেলাতে চায়নি দল। সেই কারণেই ডাক পড়ে ওয়াশিংটনের। প্রথম টেস্টে দলে না থাকা তামিলনাড়ুর অলরাউন্ডার দ্বিতীয় টেস্টে দলে ফিরেই জায়গা করে নেন প্রথম একাদশে।

ভারতীয় দলে আসার আগে ওয়াশিংটন রঞ্জি খেলছিলেন। সেখানে তামিলনাড়ুর হয়ে ১৫০ রান করেন তিনি। নেন ৬ উইকেট। সেই কারণেই তাঁর দলে ঢোকা নিয়ে ভারতের সহকারী কোচ রায়ান টেন দুশখতে বলেছিলেন, “রঞ্জিতে ভাল খেললে ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়া যায়। এটা বাকিদের কাছেও একটা বার্তা।” সিদ্ধান্তটি যে ভুল নয় তা বুঝিয়ে দিয়েছেন ওয়াশিংটন। দিনের শেষে বলেন, “কোচ এবং অধিনায়ককে ধন্যবাদ। আমি এই সিরিজ়ের শুরুতে দলে ছিলাম না। এই টেস্টের আগে দলে নেওয়া হয়। সুযোগও দেওয়া হয়। অদ্ভুত একটা অনুভূতি।”

দিনের শুরুর সেশনটা নিউ জ়িল্যান্ডের ছিল। তারা প্রথম সেশনে মাত্র দু’উইকেট হারিয়েছিল। ১৯২ রানে তিন উইকেট হারানো নিউ জ়িল্যান্ড যে ২৫৯ রানে শেষ হয়ে যাবে সেটা বোঝা যায়নি। ওয়াশিংটন বলেন, “আমি পরিকল্পনামাফিক বল করেছি। বাকিটা ঈশ্বরের ইচ্ছে। সঠিক জায়গায় বল রাখতে চেয়েছিলাম। সেটা করতে পেরেছি। গতির হেরফের করেছি।”

ওয়াশিংটনকে দলে নেওয়ার জন্য রোহিত শর্মা, গৌতম গম্ভীরদের সমালোচনা করেছিলেন সুনীল গাওস্কর। তিনি বলেছিলেন, “ওয়াশিংটনকে দলে নেওয়া মানে বোঝা যাচ্ছে কোচ এবং অধিনায়ক ব্যাটিং নিয়ে চিন্তিত। বোলিংয়ের জন্য ওকে নেওয়া হয়নি, ব্যাট হাতে রান চায় ওরা। আমি কুলদীপকেই দলে নিতাম। ও বাঁহাতিদের বিরুদ্ধে বল বাইরে নিয়ে যেতে পারে। তবে কুলদীপের থেকে ওয়াশিংটন অনেক ভাল ব্যাটার।” পুণেয় এখনও ব্যাট করার সময় হয়নি ওয়াশিংটনের। তবে বল হাতে কুলদীপের অভাব বুঝতে দেননি তিনি। রোহিতদের সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না এবং গাওস্করের যুক্তি যে ভুল, তা বুঝিয়ে দিলেন ওয়াশিংটন। বৃহস্পতিবার নিউ জ়িল্যান্ডের ১০টি উইকেটই নেন তামিলনাড়ুর দুই স্পিনার অশ্বিন এবং ওয়াশিংটন।

তরুণ অলরাউন্ডারের নামকরণের নেপথ্যে রয়েছে এক অদ্ভুত ঘটনা। ওয়াশিংটনের বাবা মণিসুন্দর। তিনিও ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন দেখতেন। আর তাঁর সেই স্বপ্ন সত্যি করার নেপথ্যে ছিলেন পিডি ওয়াশিংটন। আর্থিক ভাবে সাহায্য করেছিলেন মণিসুন্দরকে। নিজে ক্রিকেটার হিসাবে সাফল্য না পেলেও পিডি ওয়াশিংটনকে ভোলেননি তিনি। সেই কারণে ছেলের নাম রেখেছিলেন ওয়াশিংটন। তাঁর দিদি মণিসুন্দর শৈলজাও ক্রিকেট খেলেন। তবে দেশের হয়ে খেলার সুযোগ হয়নি। শুধু তামিলনাড়ুর হয়ে খেলেছেন। দিদি না পারলেও ভাই ভারতের হয়ে তিন ধরনের ক্রিকেট খেলে ফেলেছেন। এ বার ধারাবাহিক ভাবে খেলার সুযোগ পেতে পারেন। তবে সেটা করতে গেলে ওয়াশিংটনকে ধারাবাহিক ভাবেই ভাল খেলতে হবে।

বৃহস্পতিবার দিনের শেষে ওয়াশিংটনকে জিজ্ঞেস করা হয় কার উইকেট নিয়ে সবচেয়ে ভাল লেগেছিল তাঁর। নিজে সে ভাবে বেছে নেননি। তবে ধারাভাষ্যকার যখন রাচিন রবীন্দ্র এবং টম ব্লান্ডেলের উইকেটের মধ্যে একটি বেছে নিতে বলেন, তখন রাচিনের উইকেটের কথাই বলেন ওয়াশিংটন। ১০৫ বলে ৬৫ রান করা রাচিনকে আউট করতে বেগ পেতে হচ্ছিল। তিনি খুব সহজ ভাবেই সামলাচ্ছিলেন ভারতের স্পিন আক্রমণ। বেঙ্গালুরুর পর পুণেতেও শতরানের পথে এগোচ্ছিলেন তিনি। সেই সময় ওয়াশিংটনের বল রাচিনের ব্যাটের কান ঘেঁষে গিয়ে স্টাম্পে লাগে। বলের লাইন বুঝতে পারেননি রাচিন। এক বার ভুল করেন, তাতেই উইকেট তুলে নেন ওয়াশিংটন।

লাল বলের ক্রিকেটে তেমন ধারাবাহিক না হলেও সাদা বলের ক্রিকেটে জায়গা করে নিয়েছেন ওয়াশিংটন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৩১ ম্যাচে ৬৫টি উইকেট নেওয়া অলরাউন্ডার আইপিএলে ৬০টি ম্যাচ খেলেছেন। ২০১৭ সালে তাঁর আইপিএলে অভিষেক হয় রাইজিং পুণে সুপারজায়ান্টসের হয়ে। তার পর চার বছর রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে খেলার পর ২০২২ থেকে তিনি রয়েছেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদে। তবে সব ম্যাচে দলে সুযোগ পান না। ৮ বছরে মাত্র ৬০টি ম্যাচ খেলা দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে কোনও দলেই সে ভাবে ধারাবাহিক নন তিনি। পুণে টেস্টের পর আইপিএলের কেরিয়ারেও কি বদল হবে? আইপিএলে ভাল খেলে ভারতের টেস্ট দল সুযোগ পাওয়ার নজির রয়েছে, উল্টোটাও কি হতে পারে? সামনেই যে আইপিএলের নিলাম।

অন্য বিষয়গুলি:

Washington Sundar Team India New Zealand tour of India 2024
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy