Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
India vs South Africa 2021-22

India vs South Africa 2021-22: লজ্জার এই সিরিজ় হার নিয়েও চর্চা হোক

দক্ষিণ আফ্রিকা ছিল কোহলিদের কাছে ‘লাস্ট ফ্রন্টিয়ার’ বা শেষ সীমান্ত। যা জয় করার দারুণ সুযোগ ছিল এ বার।

পরাস্ত: কেপ টাউনে হার। সিরিজ় হাতছাড়া বিরাটদের।

পরাস্ত: কেপ টাউনে হার। সিরিজ় হাতছাড়া বিরাটদের। ফাইল চিত্র।

রাজু মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২২ ০৪:২৬
Share: Save:

যত চর্চা চলছে বিরাট কোহলির অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়া নিয়ে। একটা বিষয় থেকে আমরা সম্পূর্ণ ভাবে চোখ সরিয়ে রাখছি— দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ় হার। এমন একটা দুর্বল দলের বিরুদ্ধে কী ভাবে হেরে গেলাম, সেই প্রশ্নের থেকে কে ভারতীয় দলের নেতৃত্ব দেবে, তা কখনও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে? জাতীয় উদ্বেগের উর্ধ্বে কি ব্যক্তিগত কারণ কখনও যেতে পারে?

দক্ষিণ আফ্রিকা ছিল কোহলিদের কাছে ‘লাস্ট ফ্রন্টিয়ার’ বা শেষ সীমান্ত। যা জয় করার দারুণ সুযোগ ছিল এ বার। বলতে দ্বিধা নেই, এই দক্ষিণ আফ্রিকা ওদের দেশের সবচেয়ে দুর্বল দলগুলির একটি। কাগিসো রাবাডা ছাড়া প্রথম একাদশে এক জনও বিশ্বমানের ক্রিকেটার ছিল না। আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে, ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তরা কেউ সিরিজ় শুরুর আগে এই দক্ষিণ আফ্রিকা দলের খেলোয়াড়দের নামও জানতেন কি না। এ রকম একটা দলের কাছে সিরিজ় হেরে যাওয়া মোটেও ভারতীয় ক্রিকেটের পক্ষে ভাল বিজ্ঞাপন নয়।

দুর্বল দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে সিরিজ় হেরে আসা খুব সঙ্গত কতগুলি প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। আমরা কি প্রথম টেস্ট জয়ের পরে আত্মতুষ্টিতে ভুগছিলাম? যে দল আমরা বেছে নিচ্ছিলাম, তা কি সাম্প্রতিক ফর্মের ভিত্তিতে নাকি পুরনো কীর্তির কথা ভেবে? বোর্ড প্রেসিডেন্টের সঙ্গে অধিনায়কের সঙ্ঘাত কি দলের মনোবলের উপরে প্রভাব ফেলেছিল? এ ছাড়া ডিআরএস নিয়ে যে রকম আচরণ করেছে আমাদের ছেলেরা, সেটাও মোটেও সমর্থনযোগ্য নয়।

এর মধ্যেই কোহলির পদত্যাগ নতুন করে বিতর্কের ঢাকনা উপুড় করে দিয়ে গেল। সিরিজ় শুরুর আগে টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ান ডে-তে কোহলির অধিনায়কত্ব নিয়ে বিতর্কের ঝড় বয়ে গেল। বোর্ড প্রেসিডেন্টের মন্তব্যকে খণ্ডন করে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে অধিনায়ক বলল, বোর্ডের পক্ষে কেউ তাকে নেতৃত্বে থাকার অনুরোধ জানায়নি। তার মধ্যে টেস্ট সিরিজ় শুরু হয়ে গেলেও ভিতরে-ভিতরে ভূকম্পন থামেনি, বোঝাই গেল। এ ভাবে সঙ্ঘাত জারি রেখে নেতৃত্বের মুকুট ধরে রাখা কঠিন। কোহলির সরে যাওয়া ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা। হয়তো টেস্ট সিরিজ় জিতলে তা-ও অন্য রকম কিছু ভাবতে পারত বিরাট। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটে শক্তির কেন্দ্র এখন উত্তর থেকে পশ্চিমে স্থানান্তরিত হয়েছে। বুদ্ধিমান বিরাট সেটাও নিশ্চয়ই দেখেছে এবং বুঝেছে যে, বোর্ডের রোষানলে থেকে মুকুট সামলানো সহজ হবে না।

গত কয়েক মাসে যে ভাবে পট-পরিবর্তন হয়েছে, সেটাও নিশ্চয়ই প্রভাবিত করেছে বিরাটকে। টি-টোয়েন্টি নেতৃত্ব ও নিজের ইচ্ছায় ছাড়তে পেরেছিল। ওয়ান ডে অধিনায়কত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। টেস্ট অধিনায়কত্ব নিয়েও স্বস্তির জায়গাটা চলে যাচ্ছিল আস্তে আস্তে। বিশেষ করে এত জায়গায় ভাল করার পরে দুর্বল দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে সিরিজ় হার নিশ্চয়ই ওকে
বিদ্ধ করেছে।

ইতিহাসটাও মাথায় রাখা দরকার। ভারতীয় বোর্ডের সঙ্গে সঙ্ঘাতে জড়িয়ে কোনও অধিনায়কই বেশি দিন টিঁকতে পারেনি। ১৯৮৯-তে পাকিস্তানে ইমরান খানের দুর্ধর্ষ দলের বিরুদ্ধে সিরিজ় ড্র করে ফেরার পরেও কৃষ্ণমাচারী শ্রীকান্তকে সরে যেতে হয়েছিল বোর্ডের সঙ্গে সঙ্ঘাতে জড়িয়ে পড়ার জন্য। শ্রীকান্তের সোজাসাপ্টা ভঙ্গি পছন্দ ছিল না বোর্ডের। তারা ‘ইয়েস ম্যান’ চেয়েছিল। ১৯৫৯-এ টেস্ট ম্যাচ শুরুর সকালে পলি উমরিগরকে নাটকীয় ভাবে অধিনয়াকত্ব ছাড়তে হয়েছিল। বোর্ডের শীর্ষ কর্তার সঙ্গে দল নির্বাচন নিয়ে মতবিরোধ হয় পলির। দ্বিতীয় ও তৃতীয় টেস্টে গুলাম আহমেদকে নেতৃত্ব দিতে বলা হয়। সেই সিরিজ়ে পাঁচটি টেস্টে চার জন অধিনায়ক ছিল ভারতের। ১৯৭৪-এ টাইগার পটৌডির অনুপস্থিতিতে বেঙ্কটরাঘবনকে দ্বিতীয় টেস্টে নেতৃত্ব দিতে বলা হয়। এর পর তৃতীয় টেস্টে যখন পটৌডি ফিরল, বেঙ্কটরাঘবন হয়ে গেল দ্বাদশ ব্যক্তি! ফারুক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, সেই দ্বিতীয় টেস্টের আগে ওকে এক নির্বাচক বলেছিল, তুমি ক্যাপ্টেন্সি করবে। সকালে গিয়ে ফারুক দেখে, বেঙ্কটকে অধিনায়ক করা হয়েছে। ভারতীয় ক্রিকেটের অধিনায়কত্ব নিয়ে এই মিউজ়িক্যাল চেয়ার চলেছে বহু দিন ধরেই। কোহলির পদত্যাগে সেই ‘খেলা’ না আবার ফিরে আসে!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy