মেহেদির হাত ধরেই উজ্জ্বল বাংলাদেশ। ফাইল ছবি
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে কোনও রকমে জিতে সিরিজ় হাসিল করেছে ভারত। কিন্তু তার আগে ভারতীয় ব্যাটারদের বুকে কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। বাংলাদেশের এই স্পিন বোলার শনিবার টেস্টের তৃতীয় দিনেই ভারতের তিন ব্যাটারকে ফিরিয়ে দেন। রবিবার আরও দুই ব্যাটারকে ফেরান। ভারত এক সময় টেস্টে হারের মুখে ছিল। সেখান থেকে শ্রেয়স আয়ার এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ব্যাটিংয়ের সৌজন্যে জয় এল বটে, কিন্তু দাগ কেটে গেলেন মেহেদি। বাংলাদেশ হারলেও আলাদা করে নজর পড়েছে তাঁর দিকে।
সম্প্রতি একাধিক বার বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন মেহেদি। বল হাতে তাঁর ঘূর্ণি যেমন ব্যাটারদের বেকায়দায় ফেলে দেয়, তেমনই ব্যাট হাতে প্রয়োজনে চালিয়ে খেলে দিতে পারেন। সম্প্রতি সীমিত ওভারে তাঁকে ওপেনার হিসাবে খেলানোর চেষ্টা হয়েছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেই জিনিস দেখা গিয়েছে। সেখানে খুব খারাপ খেলেননি মেহেদি। আসলে, ছোটবেলায় তিনি খেলতেন ওপেনার হিসাবেই। পরে দলের স্বার্থে মিডল অর্ডার বা লোয়ার অর্ডারে ব্যাট করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। কিন্তু ওপেনিংই তাঁর আসল জায়গা বলে এখনও মনে করেন মেহেদি।
আট বছর বয়স থেকে ক্রিকেট খেলা শুরু। মেহেদি ক্রিকেট খেলুন, এটা একেবারেই মানতে চায়নি তাঁর পরিবার। পড়াশুনো করে নামী সরকারি চাকরি করুক ছেলে, এমনটাই চেয়েছিলেন তাঁর বাবা। তবে যে ছেলের প্রতিভা রয়েছে, তাঁকে আটকে রাখে কার সাধ্যি! ক্রিকেট খেলার শুরু থেকেই নজর কেড়ে নিতে থাকেন মেহেদি। খুলনার এই ছেলের ক্রিকেট খেলার শুরু কাশীপুর ক্রিকেট অ্যাকাডেমি থেকে। অনূর্ধ্ব-১৪ প্রতিযোগিতায় খেলে মাতিয়ে দেন। মেহেদিকে প্রথম আবিষ্কার করেন শেখ সালাহুদ্দিন।
মাত্র ১৬ বছর বয়সে ২০১৪ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেন মেহেদি। সে বছর বাংলাদেশ ভাল কিছু করতে পারেনি। তবে মেহেদির প্রতিভা নজর এড়ায়নি কারওরই। পরের বছর রাজশাহি ডিভিশনের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক। প্রথম ম্যাচেই অর্ধশতরান করেন এবং চারটি উইকেট নেন। পরের বছর মেহেদি আবার নজর কেড়ে নেন। টানা দ্বিতীয় বার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের নেতা করা হয় তাঁকে। ২০১৬-র সেই বিশ্বকাপে প্রতিযোগিতার সেরা ক্রিকেটার হন মেহেদি। তাঁর অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের জেরে প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থানে শেষ করে বাংলাদেশ। তার পরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও দুরন্ত খেলেন। মরসুম শেষ করেন ৩০টি উইকেট নিয়ে।
মেহেদিকে আর বাইরে রাখার সাহস পায়নি বাংলাদেশ। সে বছরই জাতীয় দলে ডাক পান এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দু’টি ফরম্যাটে অভিষেক হয়। ২০১৬-য় ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্টে অভিষেক। প্রথম টেস্টেই নজর কেড়ে নেন মেহেদি। বাংলাদেশের কনিষ্ঠতম বোলার হিসাবে অভিষেক টেস্টে ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করেন। সেই টেস্টে বাংলাদেশ ২২ রানে হারলেও মেহেদিকে নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। পরের টেস্ট স্মরণীয় করে রাখেন মেহেদি। দু’টি ইনিংসেই পাঁচটির বেশি উইকেট নেন। তাঁর দুরন্ত বোলিংয়ের সৌজন্যে ঘরের মাঠে প্রথম বার ইংল্যান্ডকে হারায় বাংলাদেশ। ১৯টি উইকেট নিয়ে সিরিজ়ের সেরা বোলার হন মেহেদি।
সে বছর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে তাঁর পারফরম্যান্সের সৌজন্যে রাজশাহি কিংস রানার্স-আপ হয়। ভারতের বিরুদ্ধে হায়দরাবাদে প্রথম বার অর্ধশতরান করেন টেস্টে। ২০১৭ বাংলাদেশের ক্রিকেটে স্মরণীয়। শ্রীলঙ্কায় গিয়ে তাদের হারায় বাংলাদেশে। ঘরের মাঠে প্রথম বার জেতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। দু’টি ম্যাচেই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেন মেহেদি। স্পিনারদের সাহায্য করে এমন পিচে মেহেদির বোলিং খুবই কার্যকরী। নিখুঁত লাইনে বোলিং করতে পারেন তিনি। শুধু তাই ন, প্রথম ছয় বা লোয়ার অর্ডার, যে কোনও পজিশনে অবলীলায় ব্যাট করতে পারেন।
বাংলাদেশের হয়ে এখনও পর্যন্ত ৩৭টি টেস্ট খেলে একটি শতরান ও তিনটি অর্ধশতরান-সহ ১১৪২ রান করেছেন। উইকেট রয়েছে ১৪৬টি, যার মধ্যে ইনিংসে পাঁচ উইকেট রয়েছে ৯ বার। ম্যাচে ১০ উইকেট দু’বার। এক দিনের ক্রিকেটেও তাঁর একটি শতরান রয়েছে। ৬৭টি ম্যাচে ৭৫৬ রানের পাশাপাশি নিয়েছেন ৭৯টি উইকেট। ১৯টি টি-টোয়েন্টি খেলে ২১৬ রান করেছেন। ঝুলিতে রয়েছে আটটি উইকেটও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy