ভাল খেলে ভারতকে জিতিয়ে দিলেন রোহিত শর্মা। ছবি পিটিআই
অস্ট্রেলিয়াকে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে হারিয়ে সিরিজে সমতা ফেরাল ভারত। রোহিত শর্মার অপরাজিত ৪৬ রানের সৌজন্যে অস্ট্রেলিয়াকে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ছয় উইকেটে হারাল তারা। টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ওভারে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ৯০ তুলেছিল অস্ট্রেলিয়া। জবাবে ভারত চার উইকেট হারিয়ে চার বল বাকি থাকতেই ম্যাচ জেতে। শেষ ওভারে পর পর ছয় এবং চার মেরে ভারতকে জেতালেন দীনেশ কার্তিক।
জয়ের মাঝেও ভারতের চিন্তা থেকে গেল বিরাট কোহলিকে নিয়ে। এশিয়া কাপের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে শতরান করেছিলেন। তবে সেই শতরান এসেছিল বিধ্বস্ত, ক্লান্ত আফগান বোলারদের পিটিয়ে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে দু’রান করার পর দ্বিতীয় ম্যাচে তাঁর ব্যাট থেকে এল মাত্র ১১। হাতে আর পাবেন চারটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। সময় ক্রমশ কমছে ভারতের প্রাক্তন অধিনায়কের কাছে। এই ম্যাচ তাঁর কাছে রান পাওয়ার আদর্শ মঞ্চ হতে পারত। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারলেন না কোহলি।
নাগপুরের ম্যাচ নিয়ে যে প্রবল উত্তেজনা রয়েছে, এটা টিকিটের চাহিদা দেখেই বোঝা গিয়েছিল। অনলাইনে বিক্রি শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে সব টিকিট শেষ হয়ে গিয়েছিল। সাতটা থেকে ম্যাচ শুরু হওয়ার কথা ছিল। তার অনেক আগেই স্টেডিয়াম প্রায় ভর্তি হয়ে যায়। কিন্তু যে দুর্ভাবনা আগে থেকে ছিল, ম্যাচের আগে সেটাই স্পষ্ট গেল। শুক্রবার বৃষ্টি হয়নি। তা সত্ত্বেও আউটফিল্ড ছিল ভেজা। ফলে নির্ধারিত সময়ে টস করা যায়নি।
প্রথমে ৭টা, তার পর ৮টা, তার পর রাত ৮.৪৫-এর মাঠ পরিদর্শন করতে যান আম্পায়াররা। তৃতীয় বার পরিদর্শনের পর তাঁরা ঠিক করেন, এ বার ম্যাচ শুরু করা যেতে পারে। তবে অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পুরো ম্যাচ করা কখনওই সম্ভব ছিল না। ঠিক হয়, আট ওভারের ম্যাচ হবে। দু’ওভার পাওয়ার প্লে। এক জন বোলার সর্বোচ্চ দু’ওভার বল করতে পারবেন।
প্রায় তিন দিন পিচ ঢাকা থাকায় তা কেমন আচরণ করবে, কেউই বুঝতে পারেননি। হার্দিক পাণ্ড্যের প্রথম বলটাই উইকেট প্রায় ছুঁয়ে বেরিয়ে গেল। উল্টো দিকে থাকা অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চকে কিছুটা সতর্ক দেখাল। তবে আট ওভারের ম্যাচে শুরু থেকে না মারলে কোনও ভাবেই বড় রান তোলা সম্ভব নয়। দ্বিতীয় বলেই হাঁটু মুড়ে ‘দিলস্কুপ’ মারলেন তিনি। বল সীমানার বাইরে। প্রথম ওভারে অস্ট্রেলিয়া ১০ রান তোলার পর মনে হচ্ছিল ছন্দে রয়েছে তারা।
জুটি ভাঙলেন বিরাট কোহলি। ক্যামেরন গ্রিনের আকাশে তুলে দেওয়া একটি বল তালুবন্দি করতে পারেননি তিনি। তার পরেই মিড উইকেটে বল ঠেলে রান নিতে গিয়েছিলেন অজি ওপেনার। কোহলির সরাসরি থ্রো তাঁর স্টাম্প ভেঙে দেয়। অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডার ভাঙার কাজটা করলেন অক্ষর পটেল। গ্রিন ফেরার পরেই নামেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। অক্ষরের প্রথম বল বুঝতে না পেরে বোল্ড। নিজের দ্বিতীয় ওভারে আরও একটা উইকেট তুলে নেন অক্ষর। এ বার তাঁর শিকার টিম ডেভিড।
বুমরার প্রত্যাবর্তনটাও দুর্দান্ত হল। শুরুতে তাঁকে আনেননি রোহিত। বুমরা বল করতে এলেন পঞ্চম ওভারে। শেষ ওভারে তাঁর ইয়র্কার ভেঙে দিল ফিঞ্চের লেগস্টাম্প। বুমরার এই বলকে ক্রিকেটীয় ভাষায় অনায়াসেই বলা যায় ‘আনপ্লেয়েবল ডেলিভারি’। বলের গতি এতটাই ছিল যে আউট হওয়ার পর মুগ্ধ ফিঞ্চও হাততালি দিলেন বুমরার উদ্দেশে। নিজের দ্বিতীয় ওভারে আবার একটি বিষাক্ত ইয়র্কার দিয়েছিলেন বুমরা। হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলেন স্টিভ স্মিথ।
অস্ট্রেলিয়া যে স্কোরবোর্ডে প্রায় ১০০-র কাছাকাছি তুলে ফেলল, তার পিছনে দায়ী শেষ ওভারে হর্ষল পটেলের জঘন্য বোলিং। তাঁকে তিনটি ছয় মারলেন ম্যাথু ওয়েড। ১৯ বলে ৪৩ রানে অপরাজিত থাকলেন অজি উইকেটকিপার।
আট ওভারের খেলা হওয়ায় ভারতের সামনে লক্ষ্য মোটেই কম ছিল না। প্রতি ওভারে তুলতে হত ১১ রানেরও বেশি। এ অবস্থায় রোহিত শুরু থেকেই মারমুখী ভঙ্গিতে খেলতে শুরু করেন। প্রথম ওভারেই জশ হেজ়লউডকে তিনটি ছক্কা মারেন। উল্টো দিকে লোকেশ রাহুল চেষ্টা করছিলেন ধরে খেলার। তবে অ্যাডাম জাম্পার বলে সুইপ করতে গিয়ে বোকা বনে বোল্ড হলেন।
তিনে নামেন কোহলি। রোহিতের পর প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিয়েছিলেন। কিন্তু এগিয়ে মারতে গিয়ে তাঁকেও উইকেট খোয়াতে হল জাম্পার বলে। অজি স্পিনারের বল ভেঙে দিল লেগস্টাম্প। চারে নামা সূর্যকুমার যাদব প্রথম বলেই সুইপ করতে গিয়ে মিস্ করেন। আউট দেওয়া নিয়ে কোনও সংশয় ছিল না। রোহিতও ডিআরএস নেননি। হার্দিকও চালাতে গিয়ে আউট হলেন।
তবে মাতিয়ে দিলেন কার্তিক। ভারতীয় দলে ফিনিশার নামে পরিচিত তিনি। নামের প্রতি সুবিচার করে শেষ ওভারে পর পর ছয় এবং চার মেরে ভারতকে ম্যাচ জিতিয়ে দিলেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy