আরও এক বার ব্যাট হাতে ব্যর্থ ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ছবি: পিটিআই
দিনের শুরুটাই বলে দিয়েছিল কী হতে চলেছে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে প্রথম দিনের পর দ্বিতীয় দিনও গেল অস্ট্রেলিয়ার দখলে। প্রথমে ব্যাট হাতে দাপট দেখালেন ট্রাভিস হেড, স্টিভ স্মিথরা। পরে বল হাতে ভারতীয় টপ অর্ডারকে সাজঘরে ফেরালেন অস্ট্রেলিয়ার পেসাররা। দ্বিতীয় দিনেই খেলার ফল অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। মিরাক্যল না ঘটলে এই ম্যাচে ভারতের ফেরা কঠিন।
প্রথম দিনের শেষে ৯৫ রানে ব্যাট করছিলেন স্মিথ। দ্বিতীয় দিন নিজের প্রথম দুই বলে দু’টি চার মেরে টেস্টে ৩১তম শতরান করেন তিনি। দ্বিতীয় দিনে ভারতীয় বোলারদের লাইন-লেংথ তুলনামূলক ভাবে ভাল হয়। তার ফলে মাঝেমাধ্যে সমস্যায় পড়ছিলেন শতরান করে খেলা দুই ব্যাটার। তার মাঝেই ১৫০ রান পূর্ণ করেন হেড। তবে মহম্মদ শামি, মহম্মদ সিরাজরা ক্রমাগত বাউন্সার দিচ্ছিলেন হেডকে। তার ফলে একটু সমস্যা হচ্ছিল তাঁর। ১৬৩ রানের মাথায় শার্দূল ঠাকুরের বল ফাইন লেগে মারতে গিয়ে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন হেড।
ক্যামেরন গ্রিন রান না পেলেও অ্যালেক্স ক্যারের সঙ্গে জুটি বাঁধেন স্মিথ। ১২১ রান করে শার্দূলের বল স্মিথের ব্যাটে লেগে উইকেটে লাগে। অস্ট্রেলিয়ার নীচের সারির ব্যাটারদের মধ্যে একমাত্র ক্যারে রান পান। তাঁকে ৪৮ রানের মাথায় আউট করেন রবীন্দ্র জাডেজা। ভাল বল করেন সিরাজ। তিনিই শেষ করেন অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস। ৪ উইকেট নেন ভারতের এই পেসার।
লড়াইয়ে থাকতে হলে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ের শুরুটা ভাল করতে হত রোহিত শর্মা ও শুভমন গিলকে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার পেসাররা দেখালেন, ওভালের এই উইকেটে ঠিক কোন লাইন-লেংথে বল করা উচিত। ঠিক অফ স্টাম্পের বাইরে গুড লেংথে বল করা শুরু করলেন মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিংসরা। তার ফলও মেলে। কামিংসের ভিতরের দিকে ঢুকে আসা বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন রোহিত।
তৃতীয় পেসার হিসাবে বল করতে এসে ভারতীয় ব্যাটারদের আরও সমস্যায় ফেলেন স্কট বোলান্ড। এই উইকেটে তাঁকে খেলতেই সব থেকে বেশি সমস্যা হচ্ছিল। একটি নির্দিষ্ট জায়গায় বল করছিলেন তিনি। আইপিএলে সফল শুভমন বল বুঝতে না পেরে বোল্ড হন। বোলান্ডের বলের লাইন বুঝতে পারেননি শুভমন। বলটি ছেড়ে দিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন বাইরে যাবে। কিন্তু ভিতরে ঢুকে আসে বল। তাতেই বোল্ড হন শুভমন।
ভারতীয় ব্যাটিং নির্ভর করছিল চেতেশ্বর পুজারা ও বিরাট কোহলির উপরে। পুজারা কাউন্টিতে অনেক রান করেছেন। শুরু থেকে বেশ সাবলীল দেখাচ্ছিল তাঁকে। বিরাটও শুরুটা খারাপ করেননি। কিন্তু সেই ভারতীয় ব্যাটারদের পুরনো রোগ। উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসা। শুভমনের আউটের রিপ্লে দেখালেন পুজারা। ক্যামেরন গ্রিনের অফ স্টাম্পের বাইরে পড়া বল ছেড়ে দেন তিনি। পুজারা ভেবেছিলেন বল বেরিয়ে যাবে। কিন্তু পিচে পড়ে বল ভিতরের দিকে ঢুকে উইকেটে গিয়ে লাগে। ১৪ রান করে আউট হন পুজারা।
কয়েক ওভার পরে সাজঘরে ফেরেন কোহলিও। স্টার্কের বাউন্সার কোহলির ব্যাটে লেগে স্লিপে যায়। ঝাঁপিয়ে ভাল ক্যাচ ধরেন স্টিভ স্মিথ। ১৪ রান করে আউট কোহলি। মাত্র ৭১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ভারত।
দীর্ঘ দিন পরে ভারতীয় দলে ফেরা অজিঙ্ক রাহানেকেও কামিংসের বলে এলবিডব্লিউ আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। রিভিউ নেন রাহানে। দেখা যায়, নো বল করেছেন কামিংস। ফলে বেঁচে যান তিনি। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার চার পেসারের সামনে রান করা কঠিন হচ্ছিল। নিয়ন্ত্রিত বোলিং করছিলেন তাঁরা। ভারতীয় ব্যাটারদের সহজে রান করতে দিচ্ছিলেন না। মাঝেমধ্যে কিছু বল সমস্যায় ফেলছিল রাহানে ও জাডেজাকে।
ওভালের উইকেটে কী ভাবে ব্যাট করা উচিত তা ভারতের টপ অর্ডারকে শেখালেন রাহানে ও জাডেজা। কোনও ঝুঁকি নিলেন না। বল দেখে খেললেন। সময় নিলেন। তাড়াহুড়ো না করলে এই উইকেটে যে রান করা যায় তা দেখালেন তাঁরা। শেষ দিকে পেসাররা কিছুটা ক্লান্ত হয়ে পড়ায় রান আসছিল। অর্ধশতরানের দিকে এগোচ্ছিলেন জাডেজা। কিন্তু ৪৮ রানের মাথায় নেথান লায়নের বলে খোঁচা মেরে আউট হলেন তিনি। সবুজ উইকেটে বাঁ হাতি ব্যাটারের সামনে অফ স্পিনার কতটা কার্যকরী হতে পারে সেটা দেখালেন লায়ন। রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে না খেলানোর সিদ্ধান্ত হয়তো এখন কাঁটার মতো বিঁধছে রোহিতদের।
দিনের খেলা শেষ হওয়ার সময় ভারতের রান ৫ উইকেটে ১৫১। রাহানে ২৯ ও শ্রীকর ভরত ৫ রানে ব্যাট করছেন। অস্ট্রেলিয়ার থেকে প্রথম ইনিংসে এখনও ৩১৮ রানে পিছিয়ে ভারত। তৃতীয় দিন ভারতের রানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব থাকবে রাহানে-ভরত জুটির উপরেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy