ইনিংসের মাঝে লোকেশ রাহুল (বাঁ দিকে) ও বিরাট কোহলি। ছবি: পিটিআই
ভারতের ইনিংসের প্রথম দু’ওভারের পরে মনে হয়েছিল, বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে হারতে হবে তাদের। দেশের মাটিতে বিশ্বকাপে এর থেকে খারাপ শুরু কিছু হতে পারত না। কিন্তু বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুল জানতেন, পিচ কঠিন হলেও পড়ে থাকতে পারলে রান আসবে। অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে যে কাজটা ডেভিড ওয়ার্নার ও স্টিভ স্মিথ করেছিলেন, ঠিক সেই কাজটাই করল ভারতীয় জুটি। ধরে খেললেন বিরাট ও রাহুল। তাড়াহুড়ো করলেন না। অহেতুক ঝুঁকি নিলেন না। ধীরে ধীরে লক্ষ্যের দিকে এগোলেন। বিরাট ও রাহুলের ব্যাটে চেন্নাইয়ে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে মাঠ ছাড়ল ভারত। কঠিন পিচে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ জিতে আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বাড়িয়ে নিল ভারত।
টসের আগে পিচ পরীক্ষক রবি শাস্ত্রী জানিয়েছিলেন, খেলা যত গড়াবে তত মন্থর হবে পিচ। ফলে পরের দিকে খেলতে আরও সমস্যা হবে। এই পিচে বড় ভূমিকা নেবেন স্পিনারেরা। সেই পিচে টস হারলেন রোহিত শর্মা। চোখ বন্ধ করে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিলেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা ভাল হয়নি। শূন্য রানে মিচেল মার্শকে আউট করেন যশপ্রীত বুমরা। স্লিপে ভাল ক্যাচ ধরেন বিরাট।
দ্বিতীয় উইকেট জুটি বাঁধেন ওয়ার্নার ও স্মিথ। রানের গতি কম হলেও উইকেট পড়ছিল না। ধীরে ধীরে খেলছিলেন তাঁরা। পেসারেরা আর উইকেট না পাওয়ায় স্পিনারদের হাতে বল তুলে দেন রোহিত। তার পরেই বদলে যায় ছবি। ৪১ রানের মাথায় ওয়ার্নারকে আউট করেন কুলদীপ। স্মিথ ও লাবুশেন দলের রান ১০০ পার করেন। স্মিথকে ভাল দেখাচ্ছিল। অর্ধশতরানের দিকে এগোচ্ছিলেন তিনি। ঠিক তখনই অস্ট্রেলিয়াকে বড় ধাক্কা দেন রবীন্দ্র জাডেজা। ৪৬ রানের মাথায় জাডেজার বল বুঝতে না পেরে বোল্ড হন স্মিথ। আউট হওয়ার পরে তাঁর অভিব্যক্তি বুঝিয়ে দিচ্ছিল, কতটা কঠিন এই পিচ।
এক ওভারে লাবুশেন ও অ্যালেক্স ক্যারেকে আউট করেন জাডেজা। ১১৯ রানে ৫ উইকেট পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার। দেখে মনে হচ্ছিল, ১৫০ রান করাও কঠিন হবে। কিন্তু গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, প্যাট কামিন্স ও মিচেল স্টার্ক দলের রানকে টানলেন। বিশেষ করে স্টার্ক শেষ দিকে কয়েকটি বড় শট খেলেন। শেষ পর্যন্ত ৪৯.৩ ওভারে ১৯৯ রানে অল আউট হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। ভারতের হয়ে জাডেজা ৩টি, বুমরা ও কুলদীপ ২টি করে এবং মহম্মদ সিরাজ, রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও হার্দিক পাণ্ড্য ১টি করে উইকেট নেন।
২০০ রানের লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে নেমে স্টার্কের প্রথম বলেই আউট হন ঈশান কিশন। শুভমন গিল না থাকায় সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। তা কাজে লাগাতে পারেননি ওপেনার। বাইরের বল খেলতে গিয়ে উইকেট দিয়ে আসেন তিনি। পরের ওভারে ভারতকে জোড়া ধাক্কা দেন জশ হ্যাজ়লউড। প্রথমে রোহিত ও তার পর শ্রেয়স আয়ারকে ফেরান তিনি। দু’জনেই শূন্য রানে ফেরেন। মাত্র ২ রানে ৩ উইকেট পড়ে যায় ভারতের।
ব্যাট করতে নেমে উল্টোদিকে একের পর এক উইকেট পড়লেও ঘাবড়াননি কোহলি। রাহুলের সঙ্গে জুটি গড়েন তিনি। দৌড়ে রান নিতে থাকেন। তার মাঝেই কামিন্সের বলে বিরাটের ক্যাচ ছাড়েন মার্শ। তার পরে আর সুযোগ দেননি বিরাট। রানের গতি কম হলেও উইকেট ধরে রাখেন তাঁরা। দায়িত্ব নিয়ে খেলেন রাহুল। এক বার ক্রিজে জমে যাওয়ার পরে কয়েকটি বড় শট খেলেন তাঁরা। কিন্তু হাওয়ায় শট খেলেননি।
দুই ব্যাটারই নিজেদের অর্ধশতরান পূর্ণ করেন। তাঁরা জানতেন, এই উইকেটে নতুন ব্যাটার নামলে সমস্যায় পড়বেন। ম্যাচ তাঁদেরই শেষ করে আসতে হবে। সেই ভাবেই খেলছিলেন দু’জনে। অস্ট্রেলিয়াকে সমস্যায় ফেললেন তাঁদের স্পিনারেরা। ভারতীয় স্পিনারদের ধারেকাছে যেতে পারলেন না তাঁরা। বিশেষ করে অ্যাডাম জ়াম্পা হতাশ করলেন। তাঁর উপর বড় ভরসা করেছিলেন কামিন্স। কিন্তু তিনি দলকে উইকেট এনে দিতে পারলেন না।
যত সময় গড়াচ্ছিল, তত জয়ের কাছে এগোচ্ছিল ভারত। সব রকম চেষ্টা করেন কামিন্স। কিন্তু কিছুতেই উইকেট আসছিল না। বিরাটকে কেন ‘চেজ়মাস্টার’ বলা হয় সেটা আরও এক বার দেখালেন তিনি। তা-ও এ রকম চাপের ম্যাচে। ধীরে ধীরে নিজের শতরানের দিকে এগোচ্ছিলেন বিরাট। কিন্তু ৮৫ রানের মাথায় আউট হলেন তিনি। তত ক্ষণে ভারতকে জয়ের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন বিরাট। পাশাপাশি রাহুলের ব্যাটিংও মন ভরাল। বিরাট-রাহুলের ১৬৫ রানের জুটি দলকে জেতাল। শেষ পর্যন্ত ৫২ বল বাকি থাকতে ৬ উইকেটে ম্যাচ জিতে গেল ভারত। রাহুল অপরাজিত থাকলেন ৯৭ রানে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy